বিপদের সঙ্গে ঘর করা মউলদের ভোট নিয়ে মাথাব্যথা নেই

জলে কুমির, ডাঙায় বাঘের আশঙ্কা সত্ত্বেও প্রতি বছর বাড়তি উপার্জনের আশায় বছরের এই সময়ে সরকারি অনুমতিপত্র নিয়ে মধু সংগ্রহে নামেন মউলেরা। বাঘ-কুমির ছাড়াও রয়েছে জলদস্যুর ভয়।

Advertisement

প্রসেনজিৎ সাহা

ক্যানিং শেষ আপডেট: ১৭ এপ্রিল ২০১৯ ০২:২৮
Share:

মধু-সংগ্রহ: সুন্দরবনের জঙ্গলে। নিজস্ব চিত্র

ভোটের কী খবর?

Advertisement

প্রশ্ন শুনে নিতান্ত নিস্পৃহ ভাবে সাতজেলিয়ার কানু মণ্ডল, গোপাল মণ্ডল, খগেন সর্দারেরা বললেন, “আমাদের তো বাঘ-কুমিরের সঙ্গে লড়াই করেই জীবন। ভোটে কী হল না হল, তা ভেবে লাভ কী?”

রাজ্য তথা সারা দেশের মানুষ আসন্ন লোকসভা ভোট নিয়ে ব্যস্ত। কিন্তু সে সব নিয়ে মাথাব্যথা নেই সুন্দরবনের মউলদের (মধু সংগ্রহকারী)। বন দফতর সূত্রে জানা গেল, প্রতি বছরের মতো এ বছরও এপ্রিল মাসের প্রথম সপ্তাহ থেকে শুরু হয়েছে মধু সংগ্রহের কাজ। ২ এপ্রিল থেকে ঝড়খালি ও রায়দিঘি বিট অফিস থেকে মউলদের সরকারি অনুমতিপত্র দেওয়ার কাজ শুরু হয়েছে। সেই অনুমতিপত্র নিয়ে অনেকেই ইতিমধ্যে জঙ্গলে পাড়ি দিয়েছেন। সোমবারে বসিরহাট রেঞ্জের বাগনা বিট অফিস ও সজনেখালি রেঞ্জ অফিস থেকেও অনুমতিপত্র দেওয়ার কাজ শুরু হয়েছে। বন দফতরের অনুমান, এ বার পাঁচশোর বেশি মউল মধু সংগ্রহে সামিল হবেন। প্রথম দফার অনুমতি পনেরো দিনের জন্য দেওয়া হয়েছে। মধু সংগ্রহ করে তা বন দফতরে জমা দিলে দ্বিতীয় দফার অনুমতিপত্র মেলে।

Advertisement

জলে কুমির, ডাঙায় বাঘের আশঙ্কা সত্ত্বেও প্রতি বছর বাড়তি উপার্জনের আশায় বছরের এই সময়ে সরকারি অনুমতিপত্র নিয়ে মধু সংগ্রহে নামেন মউলেরা। বাঘ-কুমির ছাড়াও রয়েছে জলদস্যুর ভয়। তবু প্রাণের ঝুঁকি নিয়েই কাজে নামেন কানু-গোপাল-খগেনরা। যে এলাকায় মউলেরা মধু সংগ্রহ করবেন, সেই এলাকায় ভাসমান ক্যাম্প তৈরি করে এ বার নজরদারির পাশাপাশি স্পিডবোট নিয়ে পাহারা চলবে বলে বন দফতর সূত্রে জানানো হয়েছে।

দিল্লি দখলের লড়াই, লোকসভা নির্বাচন ২০১৯

সুন্দরবন ব্যাঘ্র প্রকল্পের সহ ফিল্ড ডিরেক্টর অনিন্দ্য গুহঠাকুরতা বলেন, “সোমবার থেকে সুন্দরবন ব্যাঘ্র প্রকল্প এলাকায় মধু সংগ্রহের জন্য সরকারি অনুমতিপত্র দেওয়া শুরু হয়েছে। অনুমতিপত্র নিয়ে জঙ্গলে রওনা দিয়েছেন মউলেরা। এ বার মউলেদের নিরাপত্তা ও নজরদারির জন্য দু’টি ভাসমান ক্যাম্প তৈরি হয়েছে। স্পিডবোটেও নজরদারি চালানো হবে”।

এ তো মউলদের রুজিকে নিরাপত্তা দেওয়ার প্রশাসনিক তৎপরতা মাত্র। এ ছাড়া মধু-সংগ্রহের আবহমান রীতি-নীতিতে তেমন বদল কোথায়? এ বার যে বছরের এই সময়টায় গণতন্ত্রের বৃহত্তম উৎসবের রং লেগেছে সর্বত্র, তা নিয়ে কানু-খগেনরা কেন বিন্দুমাত্র আগ্রহী নন?

সাতজেলিয়ারই সুবল রপ্তান বলেন, “ভোট আসে ভোট যায়, আমাদের অবস্থার কোনও পরিবর্তন হয় না। জল-জঙ্গলের উপরে নির্ভর করেই দিন কাটে। এই সময়ে মধু ভাঙতে গেলে কিছু বাড়তি রোজগার হয়। তাই হাজার বিপদ থাকলেও জঙ্গলে ঢুকি। ভোট নিয়ে আমাদের কোনও মাথাব্যথাই নেই।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন