মশগুল: চায়ের কাপে তুফান তুলে আলোচনা। ছবি: নির্মাল্য প্রামাণিক
চায়ের গ্লাসে চিনি গোলার টুং টাং শব্দ চাপা পড়ে যাচ্ছিল গলার শব্দে। তাতে ভরপুর উত্তেজনা। কারণ, বিষয় রাজনৈতিক, তা-ও ভোট যখন গোরগোড়ায়।
দিলীপ ঘোষ (অবসরপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক): অতীতে দেখতাম ভোটের আগে রাজনৈতিক দলগুলি গুরুত্ব দিয়ে তাদের ইস্তাহার প্রকাশ করত। সকলের মুখে মুখে ফিরত তা নিয়ে আলোচনা। জমে উঠত তর্কবিতর্ক। এ বার ভোটের একমাসও বাকি নেই, অথচ কোন দলের ইস্তাহারও কেউ জানলাম না। তা নিয়ে কারও মাথাব্যথাও নেই।’’
সহমত প্রকাশ করলেন দেবাশিস রায়চৌধুরী (গল্পকার): ‘‘দেশ জুড়ে কৃষক মারা যাচ্ছেন, আত্মহত্যা করছেন, কৃষিঋণ মুকুব হচ্ছে না। কর্মসংস্থান নেই। পেট্রল-ডিজেল সহ জিনিসপত্রের দাম বেড়ে গিয়েছে অনেকটাই। দুর্ভাগ্য, ভোটের আগে এই সব বিষয় নিয়ে আলোচনা নেই।’’
কিছুটা উত্তেজিত কৃষ্ণেন্দু পালিত (গল্পকার ও শিক্ষক): ‘‘জিএসটি’র ফলে ছোট ও মাঝারি ব্যবসায়ীরা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। নোট বাতিলের সময়ে বলা হয়েছিল দেশে নাকি দুর্নীতি কমবে। কালো টাকা উদ্ধার হবে। দেশে সন্ত্রাসের ঘটনা কমে যাবে। বাস্তবে আমরা তার প্রতিফলন কিছুই দেখলাম না।’’
দিল্লি দখলের লড়াই, লোকসভা নির্বাচন ২০১৯
অমিত সরকার (মানবাধিকার কর্মী): ‘‘উল্টে নোট বাতিলের ফলে গরিব মানুষকে চরম হয়রান হতে হল। পুলওয়ামায় এত বড় জঙ্গি হানার ঘটনা ঘটল।’’
আড্ডায় একটু পরে যোগ দিয়েছিলেন জলধি হালদার (কবি): কয়েক মিনিট চুপ করে আড্ডাটা শুনছিলেন। অমিতের কথার সূত্র ধরে বললেন, ‘‘পুলওয়ামায় জওয়ানদের নিয়ে এত বড় কনভয় যাচ্ছিল, অথচ তার কোনও সুরক্ষা থাকবে না?’’
নিহার দেবনাথ (শিক্ষক): ‘‘আর এ সব নিয়ে প্রশ্ন করলেই আপনাকে দেশদ্রোহী তকমা দিয়ে দেওয়া হবে। উগ্র জাতীয়তাবাদ খুবই খারাপ।’’
দেবাশিস প্রসঙ্গ তুললেন দলবদল নিয়ে। বললেন, ‘‘একটা রাজনৈতিক দলের প্রতীকে ভোটে দাঁড়িয়ে জয়লাভ করার কিছু দিন পরে কেউ অন্য দলে চলে যাচ্ছেন। এর ফলে নেতাদের নৈতিক দায়বদ্ধতা থাকছে না।’’
জলধি: যে কোনও উপায়ে ক্ষমতা কুক্ষিগত করার জন্যই ভোট হচ্ছে।’’
বনগাঁ লোকসভা এলাকায় রাজনৈতিক আড্ডা চলছে। সেখানে মতুয়া প্রসঙ্গ এল স্বাভাবিক ভাবেই। মতুয়াদের নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলির টানাটানি নিয়ে দিলীপ ঘোষ: ‘‘ধর্মের সঙ্গে রাজনীতিকে মিশিয়ে দেওয়াটা কি ঠিক হচ্ছে? আমি এর পক্ষে নেই।’’
দেবাশিস: ‘‘ধর্ম ও রাজনীতি আলাদা থাকাই উচিত। রাজনৈতিক দলগুলির দায়িত্ব, তারা আমাদের যাতে সে দিকে না নিয়ে যায়।’’
অমিত: ‘‘বড়মার মৃত্যুর পরে মতুয়ারা দু’ভাগে বিভক্ত হয়ে গিয়েছেন। বিজেপি মতুয়া ও তৃণমূল মতুয়া। ভোটের জন্য মতুয়াদের নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলি রাজনীতি করছে।’’
নিহার: ‘‘এর ফলে মতুয়া ধর্মের নিজস্বতা নষ্ট হয়ে যাচ্ছে।’’
কৃষ্ণেন্দু: হিন্দু-মুসলিম নিয়েও বিভাজনের রাজনীতি চলছে।’’
ফের একবার চা নিয়ে হাজির প্রসেন। বললেন, ‘‘এত ভাল আড্ডা হল, তাই এ দিনের চা আমিই সকলকে ফ্রি খাওয়ালাম।’’
তুমুল হর্ষধ্বনির তরঙ্গ ছড়িয়ে পড়ল ছোট্ট চায়ের দোকানে!