আবার ডিউটি! আতঙ্কে শিক্ষক 

গত বছরের ১৪ মে তারিখটা জীবনে ভোলার নয়। আজও দুঃস্বপ্নের মতো তাড়া করছে দিনটা। রাতে মাঝে মাঝে ঘুম ভেঙে যায়।

Advertisement

মনিরুল ইসলাম (ভোটের কাজে গিয়ে আক্রান্ত শিক্ষক)

শেষ আপডেট: ২৭ মার্চ ২০১৯ ০২:০৩
Share:

পঞ্চায়েত ভোটের দিন মনিরুলের দশা। ফাইল চিত্র

গত বছরের ১৪ মে তারিখটা জীবনে ভোলার নয়। আজও দুঃস্বপ্নের মতো তাড়া করছে দিনটা। রাতে মাঝে মাঝে ঘুম ভেঙে যায়। পথেঘাটে ভিড়-জটলা দেখলে বা কোথাও চিৎকার চেঁচামেচির আওয়াজ শুনলে বুক দুরদুর করে। দেগঙ্গার চাঁপাতলা এলাকায় আমার বাড়ি। রামনগর এফপি স্কুলে পার্শ্বশিক্ষকের কাজ করি। ঘটনার দিন দ্বিতীয় পোলিং অফিসার হিসেবে গিয়েছিলাম রাজারহাটের নবীনচন্দ্র এফপি স্কুলে। সকাল থেকে ভোটগ্রহণ চলছিল শান্তিপূর্ণ ভাবেই। বিপত্তি ঘটল বেলা ১২টা নাগাদ। হঠাৎ একদল দুষ্কৃতী ঢুকে পড়ল। শুরু হল বোমাবাজি। পুলিশের সঙ্গে তাদের খণ্ডযুদ্ধ বেধে যায়।

Advertisement

পুলিশ আমাদের ফেলে এলাকা ছেড়ে চলে যায়। এরপরেই দুষ্কৃতীরা আমার উপরে ঝাঁপিয়ে পড়ে। কিল-ঘুষি-লাথি মারা মারতে থাকে। বেঞ্চের ভাঙা পায়া দিয়েও পেটানো হয়। আমার চোয়ালের হাড় ভেঙে গিয়েছিল। মুখে তিনটি, মাথায় দশটি সেলাই পড়ে। দিন পনেরো হাসপাতালে ছিলাম। একমাস আমাকে তরল খাবার খেয়ে থাকতে হয়েছিল। মানসিক ও শারীরিক ভাবে এখনও অসুস্থ বোধ করি। বুকের পাঁজরে ব্যথা হয়। ঠিক মতো উঠতে বসতে পারি না। মাথা ঘোরে।

অসুস্থ হওয়ার পর থেকে প্রায় ২ লক্ষ টাকা খরচ হয়েছে। ক্ষতিপূরণ বাবদ পেয়েছি মাত্র ৬০ হাজার টাকা। এরই মধ্যে লোকসভা ভোটের ডিডটি করার জন্য চিঠি এসেছে। প্রথম পর্যায়ের প্রশিক্ষণও নিয়েছি। কিন্তু ভোটের চিঠি আসার পর থেকে পরিবারে কান্নার রোল পড়ে গিয়েছে। বাড়িতে বাবা-মা-দিদি, স্ত্রী ও দুই সন্তান রয়েছে। ছেলেমেয়েরা আমাকে জড়িয়ে ধরে কাঁদছে। বলছে, আমি যেন এ বার আর ভোটের কাজে না যাই। বাড়ির অন্যদেরও আপত্তি রয়েছে। আমার নিজেরও যাওয়ার ইচ্ছে নেই। শারীরিক সেই ক্ষমতাও নেই।

Advertisement

কাজে যেতে হবে কিনা জানি না, কিন্তু আমার এমন অবস্থা, অন্য যে সহকর্মীরা ডিউটিতে যাবেন, তাঁদের কথা ভেবেও আতঙ্কিত বোধ করছি। কমিশনের কাছে অনুরোধ, ভোট কর্মীদের জন্য উপযুক্ত নিরাপত্তার ব্যবস্থা করুন। অন্তত নিরাপত্তা কর্মীরা যেন বিপদের সময় ভোটকর্মীদের ফেলে পালিয়ে না যান।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন