খুনের নালিশ, গ্রেফতার স্ত্রী ও তিন বন্ধু

বাগদার হেলেঞ্চা এলাকার এই ঘটনায় ধৃতদের নাম, লাকি বিশ্বাস (মানবেন্দ্রর স্ত্রী), অরিজিৎ দাস, ইশান মজুমদার এবং সুবীর দে।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

বাগদা শেষ আপডেট: ২৪ মার্চ ২০১৯ ০৩:৪৮
Share:

মানবেন্দ্র বিশ্বাস

রাতে বাড়িতে ছিলেন চার বন্ধু। সকালে যুবককে বাড়ি থেকে বেরিয়ে পাড়ার চায়ের দোকানে দেখা গিয়েছিল। তার খানিকক্ষণ পরে দুই বন্ধুকে দেখা যায়, বার বার বাড়ির বাইরে আসছেন-যাচ্ছেন।

Advertisement

তা দেখে সন্দেহ দানা বাধে এক আত্মীয়ের। তিনি ঘরে ঢুকে খোঁজ-খবর করতে গেলে বন্ধুরা বলে, সব ঠিক আছে। চিন্তা করবেন না। কিন্তু দুশ্চিন্তা তাতে কমেনি আত্মীয়দের। খানিকক্ষণ পরে তাঁরা লোক জড়ো করে বাড়িতে ঢুকে দেখেন, ঘরের সিলিং ফ্যানের সঙ্গে গলায় শাড়ির ফাঁস জড়িয়ে ঝুলছে বাড়ির ছেলের দেহ। এক সঙ্গী পালিয়ে গেলেও বাকি তিনজনকে ধরে পুলিশের হাতে তুলে দিয়েছেন পাড়া-পড়শিরা। গ্রেফতার করা হয়েছে তিনজনকেই। গ্রেফতার করা হয়েছে মানবেন্দ্র বিশ্বাস ওরফে বুল্টাই (৩৩) নামে ওই যুবকের স্ত্রীকেও।

বাগদার হেলেঞ্চা এলাকার এই ঘটনায় ধৃতদের নাম, লাকি বিশ্বাস (মানবেন্দ্রর স্ত্রী), অরিজিৎ দাস, ইশান মজুমদার এবং সুবীর দে। পুলিশ জানিয়েছে, অরিজিৎ কোচবিহারের একটি প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রের চিকিৎসক। ইশান নন্দীগ্রামের প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রের চিকিৎসক। সুবীর ইঞ্জিনিয়ারিং পাশ করে একটি বেসরকারি সংস্থায় কর্মরত। ধৃতদের শনিবার বনগাঁ মহকুমা আদালতে তোলা হলে বিচারক সকলকে তিন দিনের পুলিশি হেফাজতে রাখার নির্দেশ দিয়েছেন। দেহ ময়নাতদন্তের জন্য পাঠানো হয়েছে বনগাঁ মহকুমা হাসপাতালে।

Advertisement

বনগাঁর এসডিপিও অশেষবিক্রম দস্তিদার বলেন, ‘‘মৃতের বাবা মাখনলালের অভিযোগের ভিত্তিতে অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে খুনের মামলা রুজু করা হয়েছে। ধৃতদের পুলিশি হেফাজতে নিয়ে তদন্ত শুরু হয়েছে।’’ তবে প্রাথমিক তদন্তের পরে মৃত্যুর কারণ নিয়ে নিশ্চিত নন তদন্তকারীরা। পুলিশের বক্তব্য, ময়নাতদন্তের রিপোর্ট পাওয়ার পরেই মৃত্যুর কারণ জানা যাবে।

বুল্টাইয়ের পোশাকের ব্যবসা ছিল। হেলেঞ্চা বাজারে কাপড়ের দোকান রয়েছে। বছর দশেক আগে লাকিকে ভালবেসেই বিয়ে করেন বুল্টাই। তাঁদের আট বছরের ছেলে আছে। কিছু দিন ধরে স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে অশান্তি চলছিল। বুল্টাইয়ের পরিবারের দাবি, বনগাঁর এক যুবকের সঙ্গে ঘনিষ্ঠতা গড়ে উঠেছিল লাকির। তা জেনে ফেলেন বুল্টাই। শুরু হয় অশান্তি। কিছু দিন ধরে ছেলেকে নিয়ে হেলেঞ্চায় বাপের বাড়িতে চলে যান লাকি। তবে শুক্রবার সন্ধ্যায় এসেছিলেন স্বামীর কাছে। রাতে অবশ্য থাকেননি। সকালে মেলে বুল্টাইয়ের দেহ।

বুল্টাইয়ের বাবা-মা পাশের বাড়িতেই থাকেন। বাবা মাখনলাল বলেন, ‘‘বৌমা চলে যাওয়ার পরে থেকে মনমরা হয়ে থাকত ছেলে। ওর এক বন্ধু রাতে বলল, আপনারা শুয়ে পড়ুন কাকু। আমরা ওকে বোঝাচ্ছি। চিন্তা করবেন না।’’

বুল্টাইয়ের খুড়তুতো দাদা শঙ্কর জানান, শুক্রবার সকাল পৌনে ৭টার সময়ে চায়ের দোকানে ছিলেন তিনি। সে সময়ে উল্টো দিকের দোকানে এসে বুল্টাই চা-সিগারেট নিয়ে বাড়ি ফিরে যান। শঙ্করের কথায়, ‘‘কিছুক্ষণ পরে দেখি দুই অপরিচিত যুবক বারবার ঢুকছে ভাইয়ের বাড়িতে ঢুকছে-বেরোচ্ছে। আমরা বাড়িতে যেতে গেলে তারা ঢুকতে বারণ করে। লোকজন ডেকে এনে উপরে গিয়ে দেখি, ভাই পাখার সঙ্গে শাড়ির ফাঁস দেওয়া অবস্থায় ঝুলছে। পুলিশকে খবর দিই।’’

পুলিশ গিয়ে দোতলা থেকে দেহটি উদ্ধার করে। লোকজন তিন যুবককে আটকে রাখে। একজন পালিয়ে যায়। পুলিশ তিনজনকে থানায় নিয়ে আসে। পুলিশ জানিয়েছে, ধৃতেরা জেরায় সন্তোষজনক উত্তর দিতে পারেনি। তারপরেই তাদের গ্রেফতার করা হয়। পরে ধরা পড়েন লাকি।

মাখনলাল বলেন, ‘‘বৌমাই পরিকল্পনা করে ছেলেকে মেরে ফেলেছে। ছেলে আত্মহত্যা করতে পারে না।’’

ধৃতেরা অভিযোগ অস্বীকার করেছেন। সুবীরের মা অর্চনা বলেন, ‘‘ক’দিন আগেই আমার স্বামী মারা গিয়েছেন। ছেলে বৃহস্পতিবারই মালদায় কাজের জায়গা থেকে ফিরেছিল। বন্ধুর পাশে দাঁড়ানোর মূল্য চোকানো হচ্ছে। আমার ছেলে কখনও এমন কাজ করতে পারে না।’’

লাকির বাবা অধীর মজুমদারও বলেন, ‘‘মেয়ে কেন স্বামীকে মারতে যাবে? কিছু দিন আগে ওদের মনোমালিন্য হয়েছিল ঠিকই, তবে মিটেও গিয়েছিল।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন