হাতা-খুন্তি ধরা হাতের মুঠোয় বৈঠা

সাংসারিক নানা প্রতিকূলতার সঙ্গে লড়াই করতে করতে অনেক কিছুই শিখে গিয়েছেন গীতা, শোভিতা, অনিতারা। তাই আজ বাইচ প্রতিযোগিতাটাও বড় কিছু নয় তাঁদের কাছে। বলেন, ‘‘এই একদিন হাতা খুন্তি ছেড়ে বৈঠা ধরতে ভালই লাগে।’’

Advertisement

সীমান্ত মৈত্র

বনগাঁ শেষ আপডেট: ২৩ অক্টোবর ২০১৭ ০৬:৩০
Share:

হাড্ডাহাড্ডি: পাড়ে তখন তুমুল উত্তেজনা। ছবি: নির্মাল্য প্রামাণিক

কারও বয়স চল্লিশ, কারও তিরিশ বা পঁচিশ। ওরা কেউই নৌকা চালাতে পারেন না। প্রশিক্ষিত বাইচ খেলোয়াড়ও নন। তবু বাইচ প্রতিযোগিতায় যোগ দেয় বনগাঁর মহিলা ও পুরুষেরা। তা শুধু ভাইফোঁটার আনন্দ উৎসব বলে।

Advertisement

সাংসারিক নানা প্রতিকূলতার সঙ্গে লড়াই করতে করতে অনেক কিছুই শিখে গিয়েছেন গীতা, শোভিতা, অনিতারা। তাই আজ বাইচ প্রতিযোগিতাটাও বড় কিছু নয় তাঁদের কাছে। বলেন, ‘‘এই একদিন হাতা খুন্তি ছেড়ে বৈঠা ধরতে ভালই লাগে।’’

ভাইফোঁটা উপলক্ষে রবিবার বনগাঁর পানচিতা বাওরে আয়োজন করা হয়েছিল মহিলা ও পুরুষদের নৌকা বাইচ প্রতিযোগিতার। বৃষ্টির জন্য এ বার রবিবারে প্রতিযোগিতা হচ্ছে। না হলে ভাইফোঁটার দিনই হওয়ার কথা ছিল। সেখানে মহিলা বিভাগে ৬টি দল যোগ দেয়। পুরুষদের বিভাগে ছিল ১০টি দল। ওই বাইচ দেখতে এ দিন দুপুর থেকে বাওরের দু’পাড়ে হাজার হাজার মানুষ জড়ো হয়েছিলেন। মহিলারা যখন বৈঠা হাতে নৌকা নিয়ে ছুটে যাচ্ছেন তখন দু’পাশে দাঁড়িয়ে বহু মহিলা তাঁদের চিৎকার করে উৎসাহ দিচ্ছেন। সঙ্গে মাইকে প্রতিযোগিতার লাইভ কমেন্ট্রিও চলেছে। দর্শকদের মধ্যেও মহিলাদের উপস্থিতি ছিল বেশি। এক তরুণীর কথায়, ‘‘মহিলারা যখন নৌকা নিয়ে ছুটে আসছিলেন, ওঁদের জন্য গর্ব হচ্ছিল। মনে হচ্ছিল আমরা মেয়েরা কোনও দিকে পিছিয়ে নেই।’’

Advertisement

বিশ্বজিৎ বিশ্বাস ও নিকুঞ্জ বিশ্বাসের হাত ধরে বছর ন’য়েক আগে এখানে বাইচের সূচনা হয়। এখন অগ্রদূত স্পোর্টিং ক্লাবের পরিচালনায় ও পানচিতা বাওর নৌকা বাইচ কমিটির পক্ষ থেকে প্রতিবছর ভাইফোঁটায় এই প্রতিযোগিতা হয়। এখনও অবশ্য আয়োজনের সামনের সারিতেই থাকেন বিশ্বজিৎ ও নিকুঞ্জবাবু। গ্রামে মাইক নিয়ে প্রচার করা হয়। ধর্মপুকপুরিয়া, চাঁদা, পানচিতা, গাঁড়াপোতা, গোবরাপুর, রায়পুর, নকফুল, মণিগ্রামের মতো বহু এলাকার মহিলা-পুরুষ এখানে জড়ো হন। নৌকা বাইচ এখানে বার্ষিক উৎসবে পরিণত হয়েছে।

বিশ্বজিৎবাবু বলেন, ‘‘ভাইফোঁটা উপলক্ষে বিবাহিত দিদি-বোনেরাও শ্বশুরবাড়ির থেকে এখানে আসেন। সব মিলিয়ে পড়সড় উৎসবে পরিণত হয়েছে এই দিনটা।’’

গ্রামের মেয়ে মীরা বিশ্বাসের কথায়, ‘‘প্রতি বছর ভাইফোঁটা দিতে বাপের বাড়ি আসি। পরের দিন বা ওই দিন চলে যাই। কিন্তু বাইচ না দেখে এ বার আর ফিরলাম না।’’ শুক্লা সরকার নামে এক মহিলাও জানান, ‘‘প্রতি বছর ভাইফোঁটায় গ্রামে এসে বাইচ না দেখে ফিরি না। দিনটির জন্য বছর ধরে অপেক্ষা করে থাকি।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন