পাখিশিকারিদের দৌরাত্ম্য, কমে যাচ্ছে নর্দান ল্যাপউইং, কটন পিগমি গুজ, স্পট বিল্‌ড ডাক

ফি বছর শীতের শুরুতেই উড়ে আসে অসংখ্য পরিযায়ী পাখি। বহু বছর ধরেই তাদের ঠিকানা হয়ে উঠেছিল গোপালনগরের পুরনো এই জলাশয়। কিন্তু এ বার সে ঠিকানা কার্যত ফাঁকা। 

Advertisement

সীমান্ত মৈত্র

গোপালনগর শেষ আপডেট: ১৮ জানুয়ারি ২০১৯ ০১:৩৮
Share:

বিপদ: বাওড়ের পাড়ে ঘুরছে শিকারি।

ফি বছর শীতের শুরুতেই উড়ে আসে অসংখ্য পরিযায়ী পাখি। বহু বছর ধরেই তাদের ঠিকানা হয়ে উঠেছিল গোপালনগরের পুরনো এই জলাশয়। কিন্তু এ বার সে ঠিকানা কার্যত ফাঁকা।

Advertisement

খাস ও ব্যক্তি মালিকানা মিলিয়ে প্রায় ৪০ বিঘে জলাশয় রয়েছে পোলতা এলাকায়। তার মধ্যে পোলতা বাওড়কে ঘিরেই চলত দূর দূরান্তের পাখিদের আনাগোনা। পাখিপ্রেমীরাও দূর দূরান্ত থেকে আসতেন। অনেকেই ক্যামেরাবন্দি করতেন পরিযায়ীদের। আসতেন ‘বার্ড ওয়াচার’রাও। বিভিন্ন সংগঠনের তরফে বড়দের হাত ধরে পাখি চিনতে আসত ছোটরাও।

স্থানীয় বাসিন্দা ও পশুপাখি সংগঠনের সদস্যদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেল, নর্দান ল্যাপউইং, কটন পিগমি গুজ, স্পট বিল্‌ড ডাকের মতো পাখি ছাড়াও গোটা দশেক প্রজাতির বক, মাছরাঙা, পানকৌড়ি, খঞ্জনা-সহ বহু পাখি এখানে ভিড় করত। লাওস, চিন, তাইল্যান্ড, সাইবেরিয়া এবং ইউরোপের নানা দেশ থেকে তারা আসত। শীতশেষে তারা ফিরে যেত স্বদেশে। বছর বছর শীতের মরসুমে পরিযায়ী পাখিদের আগমনে খুশি ছিলেন এলাকাবাসীও।

Advertisement

কিন্তু বছর তিনেক ধরেই এখানে কমে আসছিল পরিযায়ী পাখিদের আনাগোনা। ওই এলাকার বাসিন্দারা জানান, এ বারের শীতে পরিযায়ী পাখিদের কার্যত দেখাই পাওয়া যাচ্ছে না। হাতেগোনা দু’একটি পাখির কদাচিৎ দেখা মিলছে। এই জন্য হতাশ পাখিপ্রেমী ও স্থানীয় বাসিন্দারা।

অন্য বার শীতে পাখির ডানার শব্দে মুখরিত থাকে এই এলাকা।ছবি: নির্মাল্য প্রামাণিক

কেন পাখিদের আনাগোনা এ বার কমে গেল? পাখিপ্রেমীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেল, এর পিছনে বেশ কয়েকটি কারণ রয়েছে। সব চেয়ে বড় কারণ, পাখিশিকারির দৌরাত্ম্য। এয়ারগান নিয়ে তারা গুলি করে পাখি মারে। কিছু লোক মাছের সঙ্গে বিষ মিশিয়ে বক ধরছে। পাখি তাড়ানোর জন্য তীব্র শব্দও করা হয়। বাসিন্দাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেল, কয়েক বছর আগে জলাশয় থেকে কচুরিপানা পরিষ্কার করার জন্য জলে কীটনাশক মেশানো হয়েছিল। তার জেরেও কিছু পাখি মারা যায়। এর প্রভাব পড়েছে পরিযায়ী পাখিদের আসায়।

খালি জলাশয়টির দিকে তাকিয়ে এলাকার এক বৃদ্ধ বলেন, ‘‘কয়েক বছর আগেও এই সময়ে জলাশয় ভরে থাকত পাখিতে। এ বার তো দেখাই মিলল না পাখির।’’ স্থানীয় কয়েকজন জানান, দিনকয়েক আগে এক ব্যক্তি কুড়িটি বক মেরেছিলেন। স্থানীয়েরা সেই ব্যক্তিকে এ জন্য যথেষ্ট তিরস্কারও করেন। পশু-পাখি নিয়ে কাজ করে বনগাঁর ‘গ্রিন ওয়েভ’ নামে একটি সংগঠন। তার প্রতিনিধিরা সম্প্রতি ওই জলাশয় ঘুরে এসেছেন। সংস্থার কর্ণধার ধৃতিমান বিশ্বাস বলেন, ‘‘পাখিশিকারিদের বাড়বাড়ন্তের কথা শুনে আমরা ওই এলাকায় গিয়েছিলাম। দেখলাম, ঠিকই শুনেছি। কোনও পাখিই দেখলাম না। খুবই হতাশাজনক।’’ তিনি আরও জানান, পাখি শিকারিদের বিরুদ্ধে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া উচিত প্রশাসনের।’’ ঘটনার কথা শুনে বনগাঁর এসডিপিও অনিল রায় বলেন, ‘‘এ ভাবে পাখিহত্যা বেআইনি ও আইনত দণ্ডনীয় অপরাধ। এ ব্যাপারে কড়া পদক্ষেপ করা হবে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন