নড়বড়ে হাতে বাইক, বাড়ছে দুর্ঘটনা

মোটর বাইক দুর্ঘটনায় এটাই মৃত্যুর পরিসংখ্যান বসিরহাটে। এঁদের মধ্যে এক পথচারীর মৃত্যু হয়েছে নাবালক চালকের হাতে মোটর বাইক পড়ার জেরে। এর আগেও বসিরহাটে মোটর বাইক দুর্ঘটনায় প্রাণ হারিয়েছে নাবালক বাইক চালক ও তার বন্ধুরা।

Advertisement

নির্মল বসু

বসিরহাট শেষ আপডেট: ২৫ ফেব্রুয়ারি ২০১৬ ০১:৪৯
Share:

মোটর বাইক হাতে বেপরোয়া এই হাসি বসিরহাটের রাস্তায় পরিচিত দৃশ্য। নিজস্ব চিত্র।

গত তিন দিনে ৪ জন।

Advertisement

মোটর বাইক দুর্ঘটনায় এটাই মৃত্যুর পরিসংখ্যান বসিরহাটে। এঁদের মধ্যে এক পথচারীর মৃত্যু হয়েছে নাবালক চালকের হাতে মোটর বাইক পড়ার জেরে। এর আগেও বসিরহাটে মোটর বাইক দুর্ঘটনায় প্রাণ হারিয়েছে নাবালক বাইক চালক ও তার বন্ধুরা। একে তো বাইক দুর্ঘটনা সামাল দিতে নাজেহাল পুলিশ-প্রশাসন। তার উপরে নাবালক চালকদের হাতে বাইক পড়ে বাড়ছে বিপদের আশঙ্কা। এই সব ছেলেদের না আছে লাইসেন্স, না আছে পথ নিরাপত্তার সাধারণ জ্ঞান। আর হেলমেট পড়ার তো বালাই নেই। একটি বাইকে তিন-চার-পাঁচ জনকেও বসে থাকতে দেখা যায়। আর কী তাদের বাইক চালানোর তেজ! কানের পাশ দিয়ে বেরিয়ে যায় হুস করে। বাড়ির লোকের শাসন নেই। পুলিশ-প্রশাসন দেখেও দেখে না।

মহকুমা প্রশাসন ও স্থানীয় সুত্রে জানা গিয়েছে, বসিরহাটের ৯টি থানা এলাকায় মোটর বাইক বিক্রি করেন ৫ জন ডিলার। সাব ডিলারের সংখ্যা ২০ জন। শহরে ৯টি কাউন্টার থেকে বিভিন্ন কোম্পানির গাড়িও বিক্রি হয়। এ ছাড়াও আছে বেশ কয়েকটি ৪ চাকার গাড়ির শোরুম। এই সব কাউন্টার থেকে প্রতি মাসে এক হাজারের উপরে মোটর বাইক এবং শতাধিক চার চাকার গাড়ি বিক্রি হয়।

Advertisement

নাবালকদের নামে মোটর বাইক বিক্রিতে নানা আইনি জটিলতা আছে। কিন্তু বাবা-কাকা-দাদাদের কেনা বাইক হাতে পেলে ছোটদের ফূর্তি দেখে কে! তা ছাড়া, বড়দের পরিচয়পত্র দেখিয়ে মোটর বাইক কেনে নাবালকেরা, এমনও জানাচ্ছেন স্থানীয় মানুষজন। বিক্রির সময়ে ব্যবসায়ীদের গুরুত্ব দিয়ে নথিপত্র পরীক্ষা করে নেওয়া উচিত।

বসিরহাট হাইস্কুলের প্রধান শিক্ষক স্বপন রায় বলেন, ‘‘রাস্তায় যে গতিতে ছোট ছোট ছেলেরা মোটর বাইক চালায়, তাতে যে কোন মুহূর্তে বড় ধরনের দুর্ঘটনা ঘটার আশঙ্কা থেকে যায়। সব পড়ুয়া এবং তাদের অভিভাবকদের কাছে আমার আবেদন, সন্তান সাবালক না হওয়া পর্যন্ত তাকে মোটর বাইক কিনে দেবেন না। লাইসেন্স না পেলে কেউ যেন কোনও রকম গাড়ি না চালায়। এ ব্যাপারে অভিভাবকেরা কড়া হোন।’’ কিন্তু এ ব্যাপারে স্কুলেরও কি কোনও ভূমিকা নেই? স্বপনবাবুর বক্তব্য, ‘‘নাবালকদের মোটর বাইক চালানোর প্রবণতা কমাতে আমরা বিশেষ ব্যবস্থা নিয়েছি। স্কুলের মধ্যে বাইক রাখতে দেওয়া হয় না।’’

বৃহস্পতিবার বসিরহাটের পরিবহণ দফতরে গিয়েছিলেন বসিরহাট দক্ষিণ কেন্দ্রের বিধায়ক শমীক ভট্টাচার্য। লাইসেন্স দেওয়ার বিষয়ে আরও সতর্ক হওয়ার হওয়ার জন্য দফতরের আধিকারিককে বলেন। পুলিশ নিয়ে রাস্তায় নামার পরামর্শ দিয়ে শমীকবাবু বলেন, ‘‘পুলিশ বলছে, শতাধিক মোটর বাইক ধরে কেস দেওয়া হয়েছে। এ ভাবে কেবল কেস দিলে সরকারি কোষাগারে কিছু অর্থ জমা পড়তে পারে, কিন্তু তাতে তরুণদের জীবন বাঁচানো যাবে না। অল্পবয়সীদের মোটর বাইক চালানো থেকে দূরে রাখার জন্য অভিভাবকেরা যাতে সচেতন হন, সে বিষয়ে প্রচার করতে হবে। প্রয়োজনে স্কুল-কলেজের পড়ুয়াদের অভিভাবকদের সঙ্গে সরাসরি আলোচনাও করা যেতে পারে।’’

মহকুমার অতিরিক্ত আঞ্চলিক পরিবহণ আধিকারিক অভিজিৎ চক্রবর্তী বলেন, ‘‘কোনও ভাবেই অল্পবয়সী কেউ যাতে লাইসেন্স না পায়, সে বিষয়টি দেখা হচ্ছে। পরিকাঠামোগত কিছু অসুবিধা থাকলেও পুলিশের সাহায্যে গাড়ি চেকিং এমনকী, খুব শীঘ্রই প্রতি গাড়িতে স্পিড কন্ট্রোল ডিভাইস বসানোর কাজ শুরু হবে।’’ দুর্ঘটনার আরও কিছু কারণ আছে। যার মধ্যে অন্যতম, রাস্তার পাশে ইমারতি দ্রব্য ফেলে রাখা। বেআইনি পার্কিং। এ সবের বিরুদ্ধেও আইনি পদক্ষেপ করা হবে বলে জানান তিনি।

বসিরহাটের এসডিপিও শ্যামল সামন্ত বলেন, ‘‘গত তিন দিনে শতাধিক মোটর বাইক আটক করা হয়েছে। তাদের বিরুদ্ধে মোটর ভেহিকলস আইনে কেস দেওয়া হয়েছে। ধারাবাহিক ভাবে ত্রিমোহণী, চৌমাথা, ৭২ নম্বর বাসস্ট্যান্ড টাউনহল, স্টেশন, কলেজ, রেজিস্ট্রি অফিস মোড়, বোটঘাট, হরিশপুর, আমতলা, দণ্ডিরহাট-সহ শহরের বিভিন্ন জনবহুল এলাকায় পুলিশি টহলের ব্যবস্থা করা হয়েছে।’’ এসডিপিও জানান, স্কুল-কলেজের সামনে সাদা পোশাকে মহিলা পুলিশ রাখা হচ্ছে। রাস্তার পাশ থেকে ইমারতি দ্রব্য সরানোর জন্য পুরসভা এবং পূর্ত দফতরকে বলা হচ্ছে। পাশাপাশি, পুলিশের পক্ষেও অবৈধ পার্কিংয়ের জন্য কেস দেওয়া হচ্ছে। মানুষের চলাচলের রাস্তা আটকে গাড়ি পার্কিং বা ব্যবসা না করার জন্য প্রচার জারি রাখা হয়েছে বলেও জানিয়েছেন তিনি। বসিরহাটের পুরপ্রধান তপন সরকার বলেন, ‘‘রাস্তার পাশে অবৈধ পার্কিং এবং রাস্তা আটকে ইমারতি ব্যবসা বন্ধের জন্য আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।’’

কিন্তু এত সবের পরেও দুর্ঘটনা কমছে কোথায়?

শহরের বাসিন্দা কমলকান্ত সেন, রমেন আচার্য, স্বপন ঢালি, রতন বৈদ্য, সামসেরজামান মোল্লারা বলেন, ‘‘পুলিশ-প্রশাসনের প্রতিশ্রুতি আর তা কাজে পরিণত করা এক জিনিস নয়। পুলিশি কড়াকড়িতে দু’চার দিন একটু সমঝে চললেও সে পরিস্থিতি বেশি দিন চলে না। রাস্তার পাশে ইমারতি দ্রব্য ফেলে ফের ব্যবসা শুরু হয়। গাড়িও দাঁড়িয়ে থাকে রাস্তার ধারে যত্রতত্র। বন্ধ হয় না অল্পবয়সী ছেলেদের মোটর বাইক কিনে দেওয়ার প্রবণতাও।’’

বসিরহাটের মহকুমাশাসক নীতেশ ঢালি বলেন, ‘‘অবৈধ ভাবে রাস্তা দখলদারদের বিরুদ্ধে প্রশাসনিক যা ব্যবস্থা নেওয়ার, তা নেওয়া হবে। তবে নাবালকদের মোটর বাইক কিনে দেওয়া বা তা চালানোর বিষয়ে আরও সচেতন হতে হবে অভিভাবকদেরই। না হলে এমন ঘটনা ঘটতেই থাকবে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন