ঘরের ভিতর থেকে গোঙানির আওয়াজ শুনে দরজা খুলে ঢোকেন পড়শিরা। নাকে আসে কটূ গন্ধ। চোখে পড়ল, কীটনাশকের শিশি খোলা। পড়ে আছে আম, আঁটি। মা-ছেলে পড়ে আছে ঘরে। মুখ থেকে গ্যাঁজলা বেরোচ্ছে। পরে অবশ্য হাসপাতালে মারা গিয়েছেন দু’জনেই।
প্রাথমিক তদন্তে পুলিশের অনুমান, আমের সঙ্গেই বিষ মিশিয়ে ছেলেকে খাইয়ে দেন মহিলা। নিজেও কীটনাশকের শিশি ঢেলে দেন গলায়।
ঘটনাটি ডায়মন্ড হারবারের রামনগরের চন্না গ্রামের।
পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, মৃত মহিলার নাম রিঙ্কু মণ্ডল (২৬)। তাঁর বড় ছেলে দীপায়ন (১২) পড়ত ষষ্ঠ শ্রেণিতে। বিষয়টি জানাজানি হয় বুধবার সকাল সাড়ে ৯টা নাগাদ। ডায়মন্ড হারবার হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হলে রাতেই মারা যান রিঙ্কু। বৃহস্পতিবার সকালে মারা যায় দীপায়নও।
রাত পর্যন্ত কোনও অভিযোগ দায়ের হয়নি থানায়। পুলিশ অস্বাভাবিক মৃত্যুর মামলা রুজু করে দেহ দু’টি ময়না-তদন্তে পাঠিয়েছে।
কিন্তু কেন এই মৃত্যু?
তদন্ত একেবারেই প্রাথমিক পর্যায়ে বলে জানিয়েছে পুলিশ। কথা বলা হচ্ছে রিঙ্কুদেবীর স্বামী রাজকুমারের সঙ্গে। পড়শিদের থেকে কিছু সূত্র মিলেছে বলে জানান এক তদন্তকারী অফিসার। জানা গিয়েছে, প্রতিবেশী এক যুবকের সঙ্গে সম্পর্ক ছিল রিঙ্কু। ওই যুবকেরও দু’টি বিয়ে। কোনও স্ত্রী অবশ্য সঙ্গে থাকতেন না। রাজকুমার রাজমিস্ত্রির জোগাড়ের কাজ করেন। জমিজমা আছে। স্বচ্ছল পরিবার। দুই ছেলেকে নিয়ে সংসার ছিল মণ্ডল দম্পতির।
কিন্তু ওই পড়শিকে নিয়েই অশান্তি দানা বেঁধেছিল সংসারে বলে স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে। ওই যুবক মারধর করত রাজকুমারকে, এমনও জানাচ্ছেন প্রতিবেশীরা।
মঙ্গলবার রাতে রাজকুমারের অনুপস্থিতিতে রিঙ্কুর সঙ্গেও কথা কাটাকাটি হয় তাঁর। রিঙ্কুকে মারধর করেন ওই যুবক। পর দিন সকালে ঘর থেকে অসুস্থ অবস্থায় উদ্ধার করা হয় রিঙ্কু ও তাঁর ছেলেকে।
রাজকুমারের বোন মানসী প্রামাণিক বলেন, ‘‘প্রতিবেশী ওই ছেলেটাই যত নষ্টের গোড়া। ওর জন্যই দাদার পরিবারটা তছনছ হয়ে গেল। আমরা এর বিহিত চাই।’’
লিখিত অভিযোগ পেলে সব দিক খতিয়ে দেখা হবে বলে জানিয়েছে পুলিশ।