ধরপাকড়ই সার, কারবার চলছেই

সম্প্রতি মুখ্যমন্ত্রী কড়া হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেছেন, নদীতে খাদান করে বালি ও পলি মাটি চুরি বরদাস্ত করা হবে না। সেই নিষেধাজ্ঞার পরেও উত্তর ২৪ পরগনার দেগঙ্গা, বাদুড়িয়া, বসিরহাটে প্রকাশ্যে চলছে মাটি ও বালির কারবার।

Advertisement

অরুণাক্ষ ভট্টাচার্য

কলকাতা শেষ আপডেট: ১৪ সেপ্টেম্বর ২০১৮ ০৫:৫১
Share:

মাটি-কাটা: নৌকোয় যন্ত্র বসিয়ে চলছে কাজ। দেগঙ্গায় ছবিটি তুলেছেন সজলকুমার চট্টোপাধ্যায়

ইছামতী, বিদ্যাধরীর পাড়ে সার দিয়ে ইটভাটা। নদীর পাড়ে পর পর নৌকোয় রাখা পাম্পচালিত বড় বড় যন্ত্র। দু’মুখে মোটা পাইপ লাগানো। পাইপের এক মুখ নদীর গভীর থেকে পলিমাটি পাম্প করে তুলে নিচ্ছে। অন্য মুখ দিয়ে মাটি-সহ জল একপাশে জমা হচ্ছে। জল সরে যেতেই নদীর পলিমাটি তুলে পাঠিয়ে দেওয়া হচ্ছে ইটভাটায়।

Advertisement

সম্প্রতি মুখ্যমন্ত্রী কড়া হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেছেন, নদীতে খাদান করে বালি ও পলি মাটি চুরি বরদাস্ত করা হবে না। সেই নিষেধাজ্ঞার পরেও উত্তর ২৪ পরগনার দেগঙ্গা, বাদুড়িয়া, বসিরহাটে প্রকাশ্যে চলছে মাটি ও বালির কারবার। এ ভাবে বালি, পলি তোলায় নদীর ভাঙন বাড়ছে বলে অভিযোগ। যার খেসারত গুনতে হচ্ছে পাড়ের বাসিন্দাদের। জলস্ফীতি হলেই ভাঙছে পাড়, তলিয়ে যাচ্ছে ঘর-বাড়ি।

নদী থেকে পলি-বালি কাটা অপরাধ, মাঝেমধ্যেই এ নিয়ে ধরপাকড় করা হয় বলে জানালেন উত্তর ২৪ পরগনার অতিরিক্ত জেলাশাসক (ভূমি ও ভূমি সংস্কার) দিব্যেন্দু ভট্টাচার্য। তিনি বলেন, ‘‘ক’দিন আগেও বাদুড়িয়া থেকে যন্ত্র আটক করা হয়েছে। কয়েকজনকে ধরা হয়েছে। এখন কোথায়-কোথায় পলি-বালি তোলা হচ্ছে খোঁজ নেওয়া হচ্ছে।’’

Advertisement

ইট তৈরির জন্য কাঁচা মাটি বেআইনি ভাবে কৃষিজমি থেকে কাটার রেওয়াজ রয়েছে। বিষয়টি নিয়ে বহু অভিযোগের পরে প্রশাসন বেশ কিছু যন্ত্র, ডাম্পার (মাটি বহনের জন্য বড় ট্রাক) আটক করে। ধরা হয় মাটি কারবারিদের। এর পরে কৃষিজমির মাটি কাটা বন্ধ হয়েছে অনেকটাই। কিন্তু বন্ধ হয়নি মাটিকাটা। চলছে নদী থেকে।

দেগঙ্গার বেলিয়াঘাটা সেতু থেকে রেল সেতু পর্যন্ত গিয়ে দেখা গেল, বিদ্যাধরী নদীতে ভোর থেকেই কয়েকশো নৌকা পলি তুলছে। এক জনের সঙ্গে কথা বলে জানা গেল, একটি নৌকায় প্রায় ৫০ ঘনফুট (সিএফটি) মাটি ভরে ভাটায় দিলে মেলে ৮০০ টাকা। ঘণ্টা তিনেক সময় পলি কাটলে আয় হয় ২০০০ টাকা। এক নৌকোয় চার জন শ্রমিক থাকে। একজনের দৈনিক আয় হয় ৪০০-৫০০ টাকা।

বর্ষা শেষ হতেই ভাটায় শুরু হবে ইট তৈরির কাজ। নদীপাড় ঘুরে দেখা গেল, পুরোদমে চলছে মাটি মজুতের কাজ। দু’ভাবে চলে মাটি কাটা। নদীপাড়ের ভাটা মালিকেরা নিজেরাই যন্ত্র বসিয়ে মাটি কেটে নিচ্ছে। একটি ভাটার মালিক জানালেন, ৮০ টাকা দিয়ে ১ লিটার ডিজেল দিয়েই যন্ত্র থেকে সরাসরি মিলছে পলি। তাঁর কথায়, ‘‘এতে খরচ কম, ঝুঁকি নেই। লাভও অনেক।’’ ব্যক্তিগত নৌকোতেও চলছে মাটি তোলা। ট্রাক-বোঝাই হয়ে সেই পলি যাচ্ছে দূরের ভাটায়।

এ নিয়ে ক্ষোভ দেখালেও মাটি মাফিয়াদের ভয়ে নাম জানাতে চাননি অনেকে। দেগঙ্গার এক বৃদ্ধার কথায়, ‘‘‘রাতে ভয়ে ঘুমাতে পারি না। ঘরদোর, জমি কখন নদীতে চলে যায় কে জানে!’’

দেগঙ্গার গাঙনিয়া, গাংধুলাটে ইতিমধ্যে প্রায় ২০-৩০ ফুট পাড় ভেঙে জমি, ঘর নদীগর্ভে তলিয়ে গিয়েছে। ভিটেমাটি চলে যাওয়ায় এখন অন্যত্র ঘর বেঁধেছেন আশুতোষ চক্রবর্তী। তাঁর কথায়, ‘‘এই বর্ষায় ভরা কোটালে নদীর জল ফুলে ফুঁসছে। কারও বেআইনি কারবারের ফল ভুগতে হচ্ছে
আমাদের সকলকে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন