Class at tea garden

ওদের পড়া চা বাগানের মাঝে, এক চিলতে মাঠে

মোহিতনগরের ওই বালিকা বিদ্যালয়ের পড়ুয়ার সংখ্যা ক্রমশ কমছে। স্কুল কর্তৃপক্ষ স্বীকার করে নিয়েছেন, প্রতি বছরই স্কুলছুটের প্রবণতা দেখা যায়।

Advertisement

অনির্বাণ রায়

জলপাইগুড়ি শেষ আপডেট: ৩০ এপ্রিল ২০২৪ ০৭:১৯
Share:

চা বাগানের মাঠে চলছে ক্লাস। নিজস্ব চিত্র।

স্কুলের বাইরে স্কুল, খোলা আকাশের নীচে, চা বাগানের মাঝে এক চিলতে মাঠে, মন্দিরের বারান্দায়। প্রথমে ভোট। তার পরে স্কুলে গরমের ছুটি, তা বলে পড়াশোনা বন্ধ নেই, ক্লাস বসেছে বসেছে স্কুলবাড়ি থেকে দূরে মাঠের মাঝে। জলপাইগুড়ি শহর লাগোয়া করলা ভ্যালি চা বাগানে।

Advertisement

এই ক্লাস শুরু হয়েছে দিনকয়েক আগে। ঘুরতে ঘুরতেই প্রধানশিক্ষিকা চলে গিয়েছিলেন স্কুলের অদূরে একটি চা বাগানে। স্কুলে গরমের ছুটি। ছাত্রীরা চা বাগানের মাঝে মাঠের কোণা পাথরে বসে, কেটে রাখা গাছের গুঁড়িতে কিংবা নুইয়ে পড়া ডালে বসে রয়েছে ছাত্রীরা, নজরে পড়ে প্রধান শিক্ষিকার। কিন্তু ছাত্রীদের সকলের হাতেই মোবাইল। তিনি ডেকে পাঠান ওদের অভিভাবকদের। প্রধানশিক্ষিকাকে অভিভাবকেরা জানান, স্কুল বন্ধ থাকায় মেয়েদের পড়াশোনাও বন্ধ। কারণ, চা বাগানের অধিকাংশ পড়ুয়ার গৃহশিক্ষক নেই। চা বাগানের মাঠেই সে দিনের মতো ক্লাস খুলে দেন জলপাইগুড়ির মোহিতনগর কলোনি তারাপ্রসাদ বালিকা বিদ্যালয়ের প্রধানশিক্ষিকা। তার পর থেকে দু’দিন ক্লাস হয়েছে খোলা মাঠে। প্রধানশিক্ষিকা সিদ্ধান্ত নিয়েছেন, এ বার থেকে নিয়মিত ক্লাস হবে চা বাগানের মাঠে। তিনি জানান, আজ, মঙ্গলবার চা বাগানের অন্যান্য পড়ুয়াদের ডেকে খানিকটা বড় আকারে শুরু হবে ক্লাস। যত দিন স্কুলে গরমের ছুটি চলবে তত দিন এই ‘উন্মুক্ত’ ক্লাসে পড়াশোনা হবে চা শ্রমিকদের সন্তানদের। তবে প্রধানশিক্ষিকার আশঙ্কা, ভোট এবং গরমের ছুটির কারণে দীর্ঘদিন পড়াশোনা বন্ধ থাকার পরে, যদি ছাত্রীদের অনেকেই আর স্কুলে না ফেরে!

মোহিতনগরের ওই বালিকা বিদ্যালয়ের পড়ুয়ার সংখ্যা ক্রমশ কমছে। স্কুল কর্তৃপক্ষ স্বীকার করে নিয়েছেন, প্রতি বছরই স্কুলছুটের প্রবণতা দেখা যায়। চলতি বছরে ভোটের জন্য প্রথমে স্কুল ছুটি হয়। ভোট মিটতে না মিটতেই গরমের ছুটি হযে যায়। স্কুলের পাশেই রয়েছে করলা ভ্যালি চা বাগান। এই বাগানের মেয়েরা এই স্কুলের ছাত্রী। প্রধানশিক্ষিকা কোয়েলি রায়বর্মণ বলেন, “ভোটের জন্য প্রথমে পড়াশোনা বন্ধ হয় স্কুলে। টানা বন্ধে ছাত্রীদের নিয়ে চিন্তা ছিলই। সে দিন চা বাগানে এমনিই চলে গিয়েছিলাম। দেখলাম, ছাত্রীরা সব মোবাইল নিয়ে বসে আছে। ওদের বাড়িতে কথা বলে জানলাম, বাড়িতে পড়ানোর কেউ নেই, মোবাইল নিয়েই দিন কাটে। তার পরেই সকলকে নিয়ে মাঠেই ক্লাস শুরু করেছি।”

Advertisement

এলাকার বাসিন্দা রিমলি ওরাওঁ, বীণা রাউতিয়ারা জানান, স্কুলেই বাচ্চাদের যা পড়াশোনা হয়। ছুটি থাকায় এখন মোবাইলেই ওদের সময় নষ্ট হয়। ওদের পড়াশোনা দেখার কেউ নেই। আজ, মঙ্গলবার থেকে করলাভ্যালির ডাঙ্গাপাড়ার শিবমন্দিরের সামনে বড় আয়োজনে খোলা আকাশে নীচে ক্লাস শুরু হচ্ছে। এলাকার গ্রাম পঞ্চায়েত প্রধান রাজেশ মণ্ডল বলেন, “চা বাগানের ছেলে-মেয়েদের বিশেষত মেয়েদের পড়াশোনা শেখানোটা খুবই জরুরি। ওদের গৃহশিক্ষক বা বাড়িতে পড়া দেখানোরও কেউ নেই। মোহিতনগরের প্রধান শিক্ষিকা আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ করেছিলেন, আমরা এই উদ্যোগে পাশে আছি।” প্রধানশিক্ষিকা বলেন, “যে পড়ুয়ারা আসতে চায়, আসবে। আমাদের স্কুলের পরিচালন সমিতির সভাপতিকেও জানিয়েছি, তিনিও স্বাগত জানিয়েছেন।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন