Muslim Students

অঞ্জলি দিল রিয়াজ-আজহাররাও

অঞ্জলি কে কে দেবে? প্রশ্ন শুনে হাত তোলে তুহিনা মণ্ডল, রিয়াজ আলি মণ্ডল, রিয়া বিশ্বাস, সায়ন্তিকা, আজহার মণ্ডল, রিয়াজ মণ্ডলেরাও। 

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

বনগাঁ শেষ আপডেট: ৩০ জানুয়ারি ২০২০ ০২:২৭
Share:

পঞ্চপ্রদীপের সামনে কচিকাঁচারা। ছবি: নির্মাল্য প্রামাণিক

কেউ পরেছে পাঞ্জাবি, কেউ হলুদ শাড়ি। বুধবার সকাল থেকেই ফল কাটতে, থালায় ফুল সাজাতে ব্যস্ত ওরা। পুজোর কাজ গুছিয়ে ঠাকুরমশাইয়ের সামনে বসল পড়ুয়ারা। অঞ্জলি কে কে দেবে? প্রশ্ন শুনে হাত তোলে তুহিনা মণ্ডল, রিয়াজ আলি মণ্ডল, রিয়া বিশ্বাস, সায়ন্তিকা, আজহার মণ্ডল, রিয়াজ মণ্ডলেরাও।

Advertisement

শুধু অঞ্জলি দেওয়া নয়, বনগাঁর ভাসানপোতা আহম্মদ জামাল নব এফপি বিদ্যালয়ে প্রতি বছরই সরস্বতী পুজোর আয়োজন করে তারা। ধর্মের ভেদাভেদ ভুলে পড়ুয়া-শিক্ষক-অভিভাবকেরা— সকলে এখানে এককাট্টা।

স্কুল স্থাপিত হয়েছিল ২০০১ সালে। প্রাক প্রাথমিক থেকে পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত এখানে পঠনপাঠন চলে। পড়ুয়ার সংখ্যা ১৪১ জন। প্রায় ৮০ শতাংশ পড়ুয়া এখানে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের। শিক্ষক-শিক্ষিকার সংখ্যা ৬ জন। স্কুল কর্তৃপক্ষ জানান, সরস্বতী পুজো নিয়ে সংখ্যালঘু পড়ুয়াদের উৎসাহ বেশি। তাদের অভিভাবকেরা পুজোতে যোগ দিতে উৎসাহ দেন। স্কুল তৈরি হওয়ার পর থেকেই একই ভাবে এখানে সরস্বতী পুজো হয়ে আসছে। ভাসানপোতা এলাকাতেও সংখ্যালঘু পরিবারের বসবাস বেশি। বহু বছর ধরে এখানে দুই সম্প্রদায়ের মানুষ সৌহার্দ্যপূর্ণ পরিবেশে থাকেন। সেই পরিবেশের এক টুকরো ছবি ধরা থাকে স্কুলের সরস্বতী পুজোর আঙিনাতেও।

Advertisement

পুজোর আয়োজনের মূল দায়িত্ব নিজের কাঁধে তুলে নেয় দ্বাদশ শ্রেণির পড়ুয়া মহম্মদ সোহেল আলি মণ্ডল। সে স্কুলে প্রাক্তন ছাত্র। সোহেলের কথায়, ‘‘আমাদের এখানে কোনও ভেদাভেদ নেই। আমরা মানুষ, এটাই পরিচয়।’’ কেবল পুজোর দিন নয়, পুজোর আগের কয়েকটা দিন রিয়াজ, আজহার, হিমেলরা উদ্দীপনায় টগবগ করে ফুটতে থাকে। প্রতিমার বায়না দেওয়া, ফুল-ফলের বাজার করা, প্রতিমা বিদ্যালয়ে নিয়ে আসা, পুজো শেষে প্রতিমা বিসর্জন দেওয়া— সব কাজেই এগিয়ে আসে মুসলিম পরিবারের পড়ুয়ারা।

প্রধান শিক্ষক দিলীপকুমার সিংহ বলেন, ‘‘এখানে ৮০ শতাংশ পড়ুয়া মুসলিম। প্রতি বছর ওরা সকলে মিলে সরস্বতী পুজোর আয়োজন করে। আমরা শিক্ষক-শিক্ষিকারা সহযোগিতা করি।’’ তিনি আরও বলেন, ‘‘এখানে পুজোর আয়োজন দেখলে মনে হবে না কোনও ভেদাভেদ আছে। আমরাও ওদের সেই শিক্ষা দিই। সম্প্রীতির ভিত শৈশব থেকে ওদের মধ্যে শক্ত করার চেষ্টা করা হয়।’’ অভিভাবক রহিমা মণ্ডল বলেন, ‘‘আমরা একে অন্যের বিপদে পাশে থাকি। বিয়ে, ইদ বা সামাজিক অনুষ্ঠানে সকলে সামিল হই।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন