গাছের রহস্য ‘মৃত্যু’ নিয়ে ধন্দ

কয়েক মাস আগেও শ্রীনগর-মাটিয়া পঞ্চায়েত এলাকার টাকি রাস্তার দু’পাশে থাকা সব গাছ এমন দেখতে ছিল না!

Advertisement

নির্মল বসু

বসিরহাট শেষ আপডেট: ১৭ এপ্রিল ২০১৮ ০১:২৩
Share:

অকাল-মৃত্যু: বসিরহাটের রাস্তার ধারে। নিজস্ব চিত্র

লাল-হলুদ ফুল আর ফুটবে না। গরমের দিনে মিলবে না গাছের নীচের স্নিগ্ধ ছায়াও।

Advertisement

কেন? গাছগুলি আসলে মৃতপ্রায়। শুকিয়ে এসেছে। দূর থেকে হঠাৎ করে দেখলে মনে হবে, গাছের গায়ে কারা যেন সাদা রঙ লাগিয়ে রেখেছে! গাছের ছাল উঠে গিয়েই এই দশা।

কয়েক মাস আগেও শ্রীনগর-মাটিয়া পঞ্চায়েত এলাকার টাকি রাস্তার দু’পাশে থাকা সব গাছ এমন দেখতে ছিল না! বিশেষ করে মাটিয়া গামছাহাটার কাছে টাকি রাস্তার দু’পাশ বরাবর সার সার দাঁড়িয়ে থাকা কৃষ্ণচূড়া, রাধাচূড়া, শিরিষ, বাবলা, মেহগনি প্রভৃতি গাছের গা থেকে ছাল উঠে গিয়েছে। ডালও ভেঙে গিয়েছে। স্থানীয় মানুষজন জানালেন, এই সে দিনও কত ফুল ফুটত গাছে। গরম কালে গাছের তলায় দাঁড়ালে মিঠে হাওয়ায় শরীর জুড়িয়ে যেত।

Advertisement

ছাল উঠে পাতা ঝরে গাছগুলির এমন চেহারা হওয়ার কারণ নিয়ে নানাজনের নানা মত। কারও দাবি, রাস্তার সামনে জমি ফাঁকা করতেই কেউ কেউ গাছ সরিয়ে ফেলতে চাইছে। তাই ইচ্ছাকৃত ভাবে গাছ নষ্ট করছে তারা। গাছ মারতে গোড়ায় গরম জল, হিং, কার্বাইড-সহ দেওয়া হচ্ছে নানা কিছু। কারও আবার বক্তব্য, পোকার তাণ্ডবেই গাছের এই হাল।

কিন্তু কারণ যা-ই হোক, গাছগুলি যে ক্রমশ শুকিয়ে যাচ্ছে, তা নিয়ে কারও কোনও সংশয় নেই। আর এমন অবস্থায় ডাল ভেঙে পড়ে দুর্ঘটনা ঘটারও আশঙ্কা দেখা দিয়েছে।

শ্রীনগর-মাটিয়া পঞ্চায়েতের উপপ্রধান প্রেমেন্দ্র মল্লিক বলেন, ‘‘এক রকম পোকার জন্য রাস্তার পাশের গাছগুলির পাতা-ছাল সব নষ্ট হয়ে তাদের অকালমৃত্যু হচ্ছে। লক্ষ লক্ষ টাকার গাছ বিপজ্জনক অবস্থায় রাস্তার পাশে থাকায় বিষয়টি বন দফতরকে জানানোও হয়েছে।’’ প্রেমেন্দ্রবাবুর দাবি, দক্ষিণ ২৪ পরগনা থেকে আসা কয়েকজন মরা গাছের ডাল ভেঙে নিয়ে যাচ্ছে। সেগুলির ভিতর থাকা পোকা নাকি বিক্রি হয়! তিনি আরও জানান, গাছ মারতে তার গোড়ায় গরম জল-সহ অন্য কিছু দেওয়ার কথা সম্পূর্ণ মিথ্যা প্রচার। যখন পোকা লাগে, তখন বন দফতরকে জানানো হয়েছিল। ওই সময়ে ব্যবস্থা নিলে হয় তো গাছগুলি বাঁচানো সম্ভবও হত। তাঁর মতে, সময় মতো মরা গাছ কাটলে যে পরিমাণ টাকা মিলত, কাণ্ড পচে গেলে সেটাও আর সম্ভব নয়। বিপদ এড়াতে ইতিমধ্যেই একটি মরা গাছ কেটে ফেলা হয়েছে বলেও জানিয়েছেন তিনি।

বন দফতরের বসিরহাট মহকুমার রেঞ্জ অফিসার পরিমলকান্তি সরকার বলেন, ‘‘পোকা লেগেই গাছের অকাল মৃত্যু হয়। কিন্তু পরিকাঠামোর অভাবে ওই পোকা মারা সম্ভব নয়।’’ তিনি জানান, রঘুনাথপুরে কিসান মান্ডি থেকে মাটিয়া পর্যন্ত রাস্তা চওড়া করার জন্য পূর্ত দফতরের আবেদনে ৩০টি গাছ কাটার অনুমতি দিয়েছে বন দফতর। এর মধ্যে অধিকাংশ গাছই মরে গিয়েছে।

গাছের অকালমৃত্যু প্রসঙ্গে ‘বোটানিক্যাল সার্ভে অফ ইন্ডিয়া’র প্রাক্তন ডিরেক্টর দুলালচন্দ্র পাল বলেন, ‘‘এ কথা ঠিক, গাছের গোড়ায় নানা রকম বিষ প্রয়োগ করে অনেক সময়ই গাছকে ধীরে ধীরে মেরে ফেলা হয়। তখন গাছ শুকিয়ে যায়, তার ছাল উঠে যায়, পাতাও ঝরে পড়ে। আর গাছের ক্ষতি হলে ক্ষতিগ্রস্ত হয় ওই অঞ্চলের জীববৈচিত্র্যও।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন