প্ল্যাটফর্ম খালি হবে কবে, প্রশ্ন নৈহাটির মানুষের

ডায়মন্ড হারবার পারল, তবে নৈহাটি নয় কেন? কেন বেলঘরিয়া, আগরপাড়া বা কাঁচরাপাড়া পারল না এখনও স্টেশনকে হকারমুক্ত করতে?

Advertisement

বিতান ভট্টাচার্য

শেষ আপডেট: ৩০ মে ২০১৬ ০১:৪৬
Share:

স্টেশন জুড়ে হকারদের পসরা। ছবি: সজল চট্টোপাধ্যায়।

ডায়মন্ড হারবার পারল, তবে নৈহাটি নয় কেন? কেন বেলঘরিয়া, আগরপাড়া বা কাঁচরাপাড়া পারল না এখনও স্টেশনকে হকারমুক্ত করতে?

Advertisement

শিয়ালদহ মেন শাখায় নৈহাটি স্টেশনে হকারের সংখ্যা গত দেড় বছরের মধ্যে বেড়েছে অনেকটাই। হকারমুক্ত তো দূরের কথা, নৈহাটির পাঁচটি প্ল্যাটফর্মে দু’শোর বেশি হকার এখন সকাল থেকে রাত পর্যন্ত রেলের জায়গা দখল করে রেখেছেন। যার জেরে যাত্রী পরিষেবা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন এই স্টেশনের নিত্যযাত্রীরা।

নৈহাটি স্টেশনের ৫টি প্লাটফর্মে রেলের লিজ দেওয়া স্টলগুলির যে ক’টি অবশিষ্ট ছিল, সেগুলি রেলের সঙ্গে লিজের টাকা নিয়ে বিবাদের জেরে ভেঙে দেওয়া হয়। সেই জায়গাগুলিও হকারদের দখলে চলে গিয়েছে।

Advertisement

মাস চারেক আগেই নৈহাটি স্টেশন হকারদের দখলে চলে যাওয়া নিয়ে নিত্যযাত্রীরা ক্ষোভ প্রকাশ করেছিলেন। পূর্ব রেলের দফতরে স্মারকলিপি দিয়েছিলেন। রোজ সকালে ট্রেনে ওঠার সময়ে অফিসযাত্রীরা যে ভাবে নাজেহাল হন, তাতে হকারদের সঙ্গে যাত্রীদের বচসা নিত্যকার ঘটনা। কখনও কখনও যাত্রীদের গায়ে জল ঢেলে দেওয়ার অভিযোগও উঠেছে হকারদের বিরুদ্ধে। রেলপুলিশে অভিযোগ জানালেও প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ করা হয় না বলে অভিযোগ যাত্রীদের।

হেন জিনিস নেই, যা এই স্টেশনের প্ল্যাটফর্মে পাওয়া যায় না। চা থেকে চপ্পল— সব কিছুই মিলবে স্টেশনের ১ থেকে ৫ নম্বর প্ল্যাটফর্মের যে কোনওটিতে। সকাল-বিকেল চা, ঘুগনির দোকানে যাত্রী ছাড়াও বহিরাগতদের ভিড় এত বেশি থাকে যে যাত্রীরা স্টেশনে ঠিকমতো দাঁড়ানোর জায়গাটুকু পান না ব্যস্ত সময়ে। ভিড় ট্রেন ঢুকলে ওঠানামা করতে গিয়েও অনেকে মুখ থুবড়ে পড়েন।

শ্যামাপদ রায় বহুদিন ধরে এই স্টেশনে ফল বিক্রি করেন। তিনি বলেন, ‘‘বাজার দরের তুলনায় রোজগার তেমন কিছু হয় না। কিন্তু সরকার থেকে যতদিন অন্যত্র ব্যবস্থা করে না দেওয়া হয়। ততদিন এখানে বসেই ব্যবসা করতে হবে।’’ তিনি জানান, এর মধ্যেই যতটা পারি যাত্রীদের সাহায্য করি। যেমন, দিন কয়েক আগে ট্রেন থেকে পড়ে গিয়েছিলেন এক যাত্রী। তাঁর চিকিৎসার ব্যবস্থা স্টেশনের হকাররাই করে দিয়েছিলেন।

চা বিক্রেতা রাজু সাঁতরা বলেন, ‘‘প্রায় পনেরো বছর ধরে ব্যবসা করছি আমরা। মাঝে মধ্যেই পুলিশ জোর করে তুলে দেয়। এখান থেকে যা আয় হয় তা দিয়ে কোনও রকমে সংসার চালাতে হয়। যাত্রীদের অসুবিধা হয় বুঝি। সরকার থেকে আমাদের জন্য অন্য কোথাও ব্যবস্থা করে দিলে আমরা আর এখানে বসব না।’’ বাকি হকারদেরও একই বক্তব্য।

রেলের আধিকারিকেরা জানিয়েছেন, হকারদের সরাতে গিয়ে দম বেরিয়ে যাচ্ছে তাঁদের। এর পিছনে রাজনৈতিক মদতের ইঙ্গিতই দিয়েছেন আধিকারিকদের একাংশ। হকারদের বসানোর জন্য রেলের অনুমতির তোয়াক্কা না করেই শাসকদলের নেতাদের তুষ্ট করাটাই একমাত্র জরুরি বলে দাবি করেছেন স্থানীয় হকারদের অনেকেই। প্ল্যাটফর্মের মেঝেতে প্লাস্টিক পেতে দোকান বসানোর জন্য কড়ায় গন্ডায় টাকা দেওয়ার কথা জানিয়েছেন হকারদের কেউ কেউ।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন