বসিরহাটে সোচ্চার বিরোধীরা। ছবি: নির্মল বসু।
নারদ-কাণ্ডে নিয়ে অস্বস্তি কাটছে না তৃণমূলের। এই সুযোগকে কাজে লাগিয়ে ভোটের আগে হাওয়া গরম করতে উঠেপড়ে লেগেছে বিরোধীরাও।
সারা রাজ্যেই প্রতিবাদে সরব রয়েছে বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলি। বিধানসভা নির্বাচনের মুখে উত্তর এবং দক্ষিণ ২৪ পরগনাতেও সেই প্রতিবাদ চলছে। বুধবারও দুই জেলা জুড়ে নারদ-কাণ্ডের জেরে শাসক দলকে বিঁধে মিছিল, সভা করেছে সিপিএম, কংগ্রেস, বিজেপি।
বুধবার বিকেলে বসিরহাট আদালতের পাশে কংগ্রেসের পার্টি অফিস থেকে মিছিল বেরিয়ে টাউন হল পর্যন্ত যায়। সেখান কংগ্রেসের মিছিলে এসে যোগ দেন সিপিএম নেতা-কর্মীরা। সেই মিছিল শহর ঘুরে বসিরহাট স্টেশন-সংলগ্ন এলাকায় যায়। মিছিলে ছিলেন কংগ্রেস নেতা অসিত মজুমদার, অমিত মজুমদার, সিপিএম নেতা নিরঞ্জন সাহা। স্লোগান ওঠে ‘গলি গলি মে শোর হ্যায়, তৃণমূল চোর হ্যায়।’ ‘লুঠপাট কোটি কোটি / খাচ্ছে কেবল হাওয়াই চটি’। বসিরহাট স্টেশন-সংলগ্ন টাকি রোডের পাশে তৃণমূলের পথসভা চলছিল। যৌথ মিছিলটি সেখানে পৌঁছলে সাময়িক উত্তেজনা তৈরি হয়। তবে কয়েক মিনিট পরেই মিছিলটি সেখান থেকে চলে যায়। এ দিন বসিরহাটের বৌবাজার এলাকা থেকে আরও একটি মিছিল বের করে সিপিএম। বিকেলে বিজেপি সমর্থকেরা পতাকা, ব্যানার হাতে চৌমাথায় টাকি রোড অবরোধ করে বিক্ষোভ দেখায়। তাঁরাও নারদ-কাণ্ডে জড়িতে তৃণমূল সাংসদদের পদত্যাগ দাবি করেন।
মঙ্গলবার হাবরা শহরে ডিওয়াইএফ যশোর রোড অবরোধ করেছিল। বুধবার ট্রেন, বাস, অটো, ট্রেকার-সহ গণ পরিবহণগুলিতে যাত্রীদের মধ্যে নারদ নিউজের ভিডিও নিয়ে আলোচনা চলেছে। বেশিরভাগ তৃণমূল কর্মী আবার এই প্রসঙ্গে কথা বলতেই চাইছেন না। তবে কেউ কেউ আবার দাবি করছেন, জাল ভিডিও তৈরি করে বাজারে ছাড়া হয়েছে। তবে উত্তর ২৪ পরগনা জেলা তৃণমূল সভাপতি জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক এই নিয়ে কোনও মন্তব্যই করতে চাননি।
দক্ষিণেও বুধবার মিছিল করেছে বিরোধীরা। বিধানসভা ভোটের প্রচারেও উঠে আসছে এই ভিডিও প্রসঙ্গ। প্রাক্তন সেচমন্ত্রী তথা বাসন্তী বিধানসভার আরএসপি প্রার্থী সুভাষ নস্কর বলেন, ‘‘তৃণমূল নেত্রীর দাবি তিনি সততার প্রতীক। আমরা এ বার নির্বাচনী প্রচারে এই ঘটনাকে সামনে রাখব। বিভিন্ন সংবাদপত্রের কাটিং নিয়েও মানুষের কাছে প্রচার করব।’’ কংগ্রেসের দক্ষিণ ২৪ পরগনা জেলা সভাপতি তথা ক্যানিং পশ্চিম বিধানসভার প্রার্থী অর্ণব রায় বলেন, ‘‘আমরা মানুষের কাছে গিয়ে তৃণমূলের দুর্নীতির কথা বলব। আমাদের দেওয়াল লিখনেও নারদ প্রসঙ্গ তুলে ধরা হবে।’’
দুই জেলার তৃণমূল প্রার্থীদের অবশ্য দাবি, নারদ নিউজের ভিডিও জাল। এর কোনও প্রভাব ভোটে পড়বে না। ক্যানিং পূর্ব বিধানসভার প্রার্থী সওকত মোল্লার দাবি, ‘‘সরকারকে চাপে ফেলতে এটা বিরোধীদের চক্রান্ত। নারদের স্টিং অপারেশন তো ২০১৪ সালের আগে থেকে শুরু করা হয়েছিল। তা হলে ২০১৪ সালের লোকসভা নির্বাচনের সময় কেন সেটা প্রকাশ করা হল না? মুখ্যমন্ত্রীর সততা নিয়ে মানুষের মনে কোনও সন্দেহ নেই।’’ ক্যানিং পশ্চিমের তৃণমূল প্রার্থী শ্যামল মণ্ডলও নারদ নিউজের ভিডিওকে সাজানো বলে দাবি করেছেন।