দাঁড়িয়ে থেকে বিয়ে দিলেন পাড়া-পড়শিরা

স্বামী-বিচ্ছিন্না মহিলা একমাত্র মেয়ের গোবরডাঙায় বিয়ে ঠিক করেন। বিয়ের দিন ছিল বুধবার। তার ক’দিন আগেই আগুন লাগার ঘটনাটি ঘটে। তবে গ্রামবাসীদের সহযোগিতায় নির্দিষ্ট দিনেই বিয়ে হয়েছে।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

গাইঘাটা শেষ আপডেট: ১৩ ডিসেম্বর ২০১৯ ০০:৪৯
Share:

ফাইল চিত্র

আগুনে ভস্মীভূত হয়েছে গোটা বাড়ি। মেয়ের বিয়ের জন্য কেনা সব জিনিসই নষ্ট হয়ে গিয়েছিল। বিয়ে কী করে হবে— সেই চিন্তায় ভেঙে পড়েছিলেন গৃহকর্ত্রী। এমন পরিস্থিতিতে এগিয়ে আসেন পড়শিরা। তাঁরাই সব আয়োজন করে মেয়ের বিয়ে দেওয়ার আশ্বাস দেন। বুধবার রাতে গ্রামবাসীর সাহায্যে ওই বিয়ে সম্পন্ন হয়েছে। রাতেই স্ত্রীকে নিয়ে স্বামী ফিরেছেন বাড়িতে।

Advertisement

গাইঘাটার গ্রামের ওই মহিলা রঙের কাজ করেন। ৫ ডিসেম্বর সন্ধ্যায় আগুন লাগে তাঁর বাড়িতে। মা-মেয়ে তখন গ্রামে নিমন্ত্রণ করতে বেরিয়েছিলেন। জল ঢেলে আগুন নেভানোর চেষ্টা করেছিলেন গ্রামের মহিলা পুরুষেরা। এসেছিল দমকলের একটি ইঞ্জিনও। তবে আগুন নিয়ন্ত্রণে আসার আগেই বাড়ি এবং ঘরে থাকা সমস্ত জিনিসপত্র পুড়ে যায়।

স্বামী-বিচ্ছিন্না মহিলা একমাত্র মেয়ের গোবরডাঙায় বিয়ে ঠিক করেন। বিয়ের দিন ছিল বুধবার। তার ক’দিন আগেই আগুন লাগার ঘটনাটি ঘটে। তবে গ্রামবাসীদের সহযোগিতায় নির্দিষ্ট দিনেই বিয়ে হয়েছে। স্থানীয় বাসিন্দা রবীন্দ্রনাথ হালদারের বাড়িতে তৈরি হয়েছিল মণ্ডপ। উঠোনে কলাগাছ পুঁতে তৈরি হয় ছাদনাতলা। একশো জন নিমন্ত্রিত এসেছিলেন। মেনুতে ছিল ভাত, কাতলা মাছ, মুরগির মাংস, চিংড়ি-পটল, দু’রকমের মিষ্টি। ‘বড়া তপন জ্যোতি সংসদ’ নামে একটি ক্লাবের সদস্যেরাও এগিয়ে এসেছিলেন বিয়েতে। তাঁরা টাকা দিয়ে সাহায্য করেছেন। পাশাপাশি গ্রামের মানুষের কাছ থেকেও টাকা তোলা হয়েছে। ক্লাবের ছেলেরা নিজেরা গায়ে-গতরেও পরিশ্রম করেছেন বিয়েতে।

Advertisement

ক্লাবের সদস্য মিঠুন বিশ্বাস বলেন, ‘‘এমন বিপর্যয়ের পরে মানবিক কারণে আমরা পরিবারটির পাশে দাঁড়িয়েছি। তরুণী আমাদের বোনের মতো। তার বিয়েতে আয়োজন করতে পেরে আমরা খুশি।’’

গাইঘাটা পঞ্চায়েত সমিতির সহ সভাপতি ইলা বাগচি ওই তরুণীকে একটি বেনারসী শাড়ি উপহার দেন। তা পরেই বিয়েতে বসে কনে। পরিবার সূত্রে জানা গিয়েছে, প্রথমে ঠিক ছিল পাত্রের সঙ্গে ৫০ জন বরযাত্রী আসবে। কিন্তু পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে পাত্রের সঙ্গে এসেছিলেন মাত্র চোদ্দো জন। পাত্রীর সাজার জিনিসপত্র, সোনার গয়না পাত্র পক্ষই এনেছিলেন বলে জানিয়েছেন গ্রামবাসীরা।

মেয়ের বিয়ে সুষ্ঠু ভাবে হওয়ায় পাত্রীর মা কৃতজ্ঞতা জানিয়েছেন গ্রামবাসী ও ক্লাবের কাছে। তবে ঘরের সমস্যা এখনও মেটেনি। রাতে প্রতিবেশীদের বাড়িতেই ঘুমোচ্ছেন মহিলা। তাঁর আবেদন, প্রশাসন তাঁর একটি ঘরের ব্যবস্থা করুক। প্রশাসন সূত্রে আশ্বাস দেওয়া হয়েছে, ঘর তৈরি করে দেওয়া হবে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন