Dacoity

নৈশপ্রহরীকে পিটিয়ে মারল ডাকাত দল

ight রবিবার রাত ২টো নাগাদ ঘটনাটি ঘটেছে ভাঙড় থানা থেকে ঢিল ছোড়া দূরত্বে, সোনাপট্টিতে।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা 

ভাঙড় শেষ আপডেট: ২৫ ফেব্রুয়ারি ২০২০ ০৫:৫৮
Share:

এখানেই মিলেছে দেহ। ছবি: সামসুল হুদা

ডাকাতিতে বাধা দেওয়ায় এক নৈশ প্রহরীকে মাথায় ঘা মেরে খুন করল দুষ্কৃতীরা। রবিবার রাত ২টো নাগাদ ঘটনাটি ঘটেছে ভাঙড় থানা থেকে ঢিল ছোড়া দূরত্বে, সোনাপট্টিতে। পুলিশ জানিয়েছে, নিহতের নাম সহিদ মোল্লা (৬০)। বাড়ি ভাঙড়ের বাগানআইট গ্রামে।

Advertisement

বারুইপুর পুলিশ জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার ইন্দ্রজিৎ বসু বলেন, ‘‘একটি দোকানে ডাকাতির চেষ্টা হয়েছিল। ডাকাতদলকে বাধা দিতে গিয়ে তাদের হাতে এক নৈশপ্রহরী খুন হন। এই ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগে একজনকে হাড়োয়া থেকে গ্রেফতার করা হয়েছে। তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করে বাকি দুষ্কৃতীদের খোঁজ করা হচ্ছে।’’

পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রের খবর, সোনাপট্টিতে পঞ্চাশটিরও বেশি সোনার দোকান রয়েছে। ১০-১২ জনের একটি ডাকাত দল সেখানে হানা দেয়। তবে ভুল করে প্রদ্যুৎ পালের ইমিটেশনের দোকানের পিছন দিকের দরজা ভাঙতে শুরু করে।

Advertisement

আওয়াজ পেয়ে ভাঙড় বাজারের নৈশপ্রহরী সহিদ ছুটে যান। বাজারের নিরাপত্তার জন্য ভাঙড় ব্যবসায়ী সমিতি সহিদ ছাড়াও মোট ৬ জন নৈশপ্রহরীকে নিযুক্ত করেছে। প্রতিদিনের মতো এ দিনও তাঁরা পাহারা দিচ্ছিলেন। ঘটনার সময়ে ওই বাজারে ছিলেন ভাঙড় থানার পুলিশ মনসারাম মুর্মু, ভিলেজ পুলিশ অমিত মণ্ডলও। তবে দরজা ভাঙার আওয়াজ পেয়ে প্রথমে ছুটে যান সহিদই। তাঁর পিছনেই ছুটে যান দুই পুলিশকর্মী।

পুলিশ জানায়, দুষ্কৃতীরা সহিদের মাথায় ভারী কিছু দিয়ে ঘা মারে। মাটিতে পড়ে যান তিনি। ঘটনাস্থলেই মৃত্যু হয়। দুই পুলিশ কর্মীকেও মারধর করে দুষ্কৃতীরা। মাথায় আগ্নেয়াস্ত্র ঠেকিয়ে খুনের হুমকি দেওয়া হয়। কোনও রকমে সেখান থেকে পালিয়ে ভাঙড় থানায় চলে আসেন অমিত। ওসি, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার, ডিএসপি, সিআই ঘটনাস্থলে যান।

প্রত্যক্ষদর্শী ভোলা শেখ, রশিদা বিবি বলেন, ‘‘অত রাতে চিৎকার-চেঁচামিচি শুনে বেরিয়ে আসি। দেখলাম, কয়েকজন লোক একজনকে মারতে মারতে টেনে হিঁচড়ে নিয়ে যাচ্ছে। প্রথমে ভেবেছিলাম, পুলিশ চোর ধরে নিয়ে যাচ্ছে। কী হয়েছে জানতে চেয়েছিলাম। ওরা হিন্দিতে বলে, ঘরে ঢুকে পড়তে। মুখে কালো কাপড় বাঁধা ছিল। তখন মনে হয়, এরা পুলিশ নয়, ডাকাত। ভয়ে ঘরে ঢুকে গিয়ে দরজা বন্ধ করে দিই।’’অতীতে ভাঙড় বাজারে বড় ডাকাতি হয়েছিল। সে সময়ে ডাকাতদের গুলিতে এক দোকান মালিক-সহ তিনজন খুন হন। তারপর থেকে ভাঙড় বাজার ব্যবসায়ী সমিতি বাজারের নিরাপত্তার জন্য ৬ জন নৈশপ্রহরী রাখার ব্যবস্থা করা হয়। ভাঙড় বাজারে সোনা, কাপড় ও মুদিখানা-সহ বড় বড় দোকান রয়েছে। যেখানে প্রতিদিন লক্ষ লক্ষ টাকার ব্যবসা হয়।

স্থানীয় ব্যবসায়ী ও সাধারণ মানুষের অভিযোগ, এত বড় বাজারে শুধুমাত্র কয়েকজন লাঠিধারী নৈশপ্রহরী ছাড়া আর কোনও ব্যবস্থা নেই। বাজারে না আছে আলো, না আছে সিসি ক্যামেরা। থানা থেকে ঢিল ছোড়া দূরত্ব হলেও আগ্নেয়াস্ত্র-সহ পুলিশের টহলদারি থাকে না।

ঘটনার প্রতিবাদে ভাঙড় বাজার ব্যবসায়ী সমিতি সোমবার ১২ ঘণ্টা বন‌্ধ পালন করে। দুষ্কৃতীদের গ্রেফতারের দাবিতে এবং বাজারের নিরাপত্তা জোরদার করতে ভাঙড় থানার সামনে বিক্ষোভও দেখান ব্যবসায়ীরা। ওসির অপসারণের দাবিও তোলেন। থানায় স্মারকলিপি দেন।

সমিতির সভাপতি পঙ্কজকুমার দে বলেন, ‘‘সহিদ গত ২৫ বছর ধরে বাজারে নৈশপ্রহরীর কাজ করছেন। অত্যন্ত বিশ্বস্ত এবং নিষ্ঠাবান ব্যক্তি। তাঁর সাহসিকতার জন্যই ডাকাতি করতে পারল না দুষ্কৃতীরা। কিন্তু ওঁর প্রাণটা চলে গেল।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন