আগুন নিভবে কী করে, ব্যবস্থার অভাব হাসপাতালে

কোনও হাসপাতালে আগুন নেভানোর জন্য ন্যূনতম অগ্নিনির্বাপণ যন্ত্র নেই। কোথাও আবার যন্ত্র থাকলেও, আগুন লাগলে তা নিয়ন্ত্রণের জন্য প্রশিক্ষিত কর্মীর অভাব। কোথাও ওয়ার্ড থেকে বেরনোর একটি মাত্র পথ আগুন বা অন্য ধরনের কোনও দুর্ঘটনায় পরিস্থিতি আরও ঘোরাল করে তোলার পক্ষ যথেষ্ট।

Advertisement

সীমান্ত মৈত্র

বনগাঁ শেষ আপডেট: ১২ সেপ্টেম্বর ২০১৬ ০১:৩৫
Share:

(বাঁ দিকে)অগ্নি নির্বাপক যন্ত্র থাকলেও বেরোনোর পথ সরু হয়ে গিয়েছে বনগাঁ হাসপাতালে। (ডান দিকে) অগ্নি নির্বাপক যন্ত্রই নেই বাগদা হাসপাতালে। ছবি তুলেছেন নির্মাল্য প্রামাণিক।

কোনও হাসপাতালে আগুন নেভানোর জন্য ন্যূনতম অগ্নিনির্বাপণ যন্ত্র নেই। কোথাও আবার যন্ত্র থাকলেও, আগুন লাগলে তা নিয়ন্ত্রণের জন্য প্রশিক্ষিত কর্মীর অভাব। কোথাও ওয়ার্ড থেকে বেরনোর একটি মাত্র পথ আগুন বা অন্য ধরনের কোনও দুর্ঘটনায় পরিস্থিতি আরও ঘোরাল করে তোলার পক্ষ যথেষ্ট।

Advertisement

বহরমপুর মেডিক্যাল কলেজে অগ্নিকাণ্ডের পরে জেলায় জেলায় হাসপাতালে আগুন নেভানোর পরিকাঠামোর দিকে সকলের দৃষ্টি ঘুরেছে। কিন্তু ২৪ পরগনার বিভিন্ন সরকারি হাসপাতালের পরিস্থিতি খতিয়ে দেখতে গিয়ে উঠে এল নানা অব্যবস্থার চিত্র। যদিও জেলা স্বাস্থ্য দফতর সূত্রে জানানো হয়েছে, জেলার হাসপাতালগুলির অগ্নিনির্বাপণ ব্যবস্থা আরও জোরদার করতে ইতিমধ্যেই পদক্ষেপ করা হয়েছে। মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক প্রলয় আচার্য বলেন, ‘‘জেলার হাসপাতালগুলির অগ্নিনির্বাপণ ব্যবস্থা আরও জোরদার করতে একটি পরিকল্পনা করা হয়েছে। কয়েক দিনের মধ্যেই সেই পরিকল্পনা স্বাস্থ্য দফতরের কাছে জমা দেওয়া হবে।’’ তিনি আরও জানান, হাসপাতালগুলিতে আগুন নেভানোর জন্য বেশি করে কর্মীদের প্রশিক্ষণেরও ব্যবস্থা করা হচ্ছে।

জেলার সীমান্তবর্তী ব্লক বাগদার কয়েক লক্ষ মানুষের চিকিৎসার অন্যতম ভরসা বাগদা ব্লক গ্রামীণ হাসপাতাল। রোজ বহু মানুষ এখানে চিকিৎসার প্রয়োজনে আসেন। ৩০টি শয্যা আছে। কিন্তু গড়ে রোজ রোগী ভর্তি থাকেন জনা পঞ্চাশ। হাসপাতালটির চিকিৎসা পরিকাঠামো নিয়ে নানা সমস্যা দীর্ঘ দিনের। অগ্নিনির্বাপণের কোনও ব্যবস্থাই নেই এখানে। আগুন লাগলে কী ভাবে তা নিয়ন্ত্রণে আনা যাবে, তা ভাবলে এখন আঁতকে উঠছেন মানুষজন। নিকটতম দমকল কেন্দ্র বলতে প্রায় ২৪ কিলোমিটার দূরের বনগাঁ। সেখান থেকে গাড়ি এসে আগুন নেভাতে নেভাতে ক্ষতি যা হওয়ার হয়ে যাবে বলেই সকলের ধারণা।

Advertisement

হাসপাতাল সূত্রের খবর, এখানে কোনও অগ্নিনির্বাপণ যন্ত্র নেই। যদিও হাসপাতালে আছে দু’টি এসি মেশিন। বাগদার বিএমওএইচ তথা ওই হাসপাতালের চিকিৎসক প্রণব মল্লিক বলেন, ‘‘হাসপাতালে অগ্নিনির্বাপণ ব্যবস্থা গড়ে তুলতে বনগাঁর দমকল বাহিনীর ওসিকে চিঠি দেওয়া হয়েছে। তারা এখনও এসে পরিকল্পনা তৈরি করে দিয়ে যাননি।’’

বনগাঁ মহকুমা হাসপাতালের উপরেও আশপাশের এলাকার কয়েক লক্ষ মানুষ নির্ভরশীল। হাসপাতাল চত্বর বা কোনও কোনও ওয়ার্ড কার্যত জতুগৃহে পরিণত হয়েছে। গোটা হাসপাতাল চত্বর জুড়ে দাঁড়িয়ে থাকে গাড়ি, অ্যাম্বুল্যান্স। শয্যার অভাবে রোগীদের মেঝেতে রাখতে হয়, বিশেষ করে মেল মেডিসিন ওয়ার্ডে। ওই ওয়ার্ডে আসা-যাওয়ার এখন একটি মাত্র রাস্তা। ফলে সেখানে যদি আগুন লাগে, কী ভাবে পরিস্থিতির মোকাবিলা সম্ভব, তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন রোগীর আত্মীয়েরা।

অতীতে এখানে এসি মেশিন থেকে আগুন লাগার ঘটনা ঘটেওছে। প্রসূতি, মেডিসিন, শল্যচিকিৎসা, ইমারজেন্সি, অপারেশন থিয়েটার— বিভিন্ন জায়গায় গিয়ে দেখা গেল, আগুন নেভানোর জন্য যন্ত্র আছে বটে, কিন্তু আগুন লাগলে কারা তা ব্যবহার করবেন, তা নিয়ে প্রশ্ন আছে। প্রসূতি ওয়ার্ডের এক নার্স জানালেন, অগ্নিনির্বাপণ যন্ত্র তাঁরা চালাতে পারেন না। কেউ কখনও সেখায়নি। হাসপাতালে বিভিন্ন ওয়ার্ডে এসি মেশিন আছে। অভিযোগ, তা ঠিকমতো দেখভাল হয় না। যদিও হাসপাতাল সূত্রে দাবি করা হয়েছে, এসি মেশিনগুলি নিয়মিত পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা হয়।

হাবরা স্টেট জেনারেল হাসপাতালের অগ্নিনির্বাপণ ব্যবস্থাও প্রশ্নের মুখে।

হাসপাতাল সূত্রের খবর, এখানে মোট ৬টি অগ্নিনির্বাপণ যন্ত্র আছে। একটি যন্ত্র পুরনো হয়ে যাওয়ায় তা সরিয়ে দেওয়া হয়েছে সম্প্রতি। তবে সমস্যা অন্যত্র। হাসপাতাল সুপার শঙ্কর লালা ঘোষ বলেন, ‘‘অগ্নিনির্বাপণ যন্ত্র থাকলেও তা চালানোর মতো প্রশিক্ষিত কর্মীর অভাব আছে। যাঁরা প্রশিক্ষণ পেয়েছিলেন, তাঁদের অনেকে অন্যত্র চলে গিয়েছেন বা অবসর নিয়েছেন। নতুন করে কর্মীদের প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করতে হবে।’’

প্রয়োজনে দমকল বাহিনী এলেও পর্যাপ্ত জলের অভাব আছে হাসপাতাল চত্বরে।

মেডিসিন ওয়ার্ডে আবার রোগীদের ভিড় সব সময়ে। মেঝেতে শোয়ানো হয় অনেককে। কোনও কারণে আগুন লাগলে ওয়ার্ডগুলি থেকে দ্রুত রোগীদের বের করার মতো পরিকাঠামোর অভাব আছে। এখানে এসি মেশিন আছে ১৫টি। সুপার বলেন, ‘‘এসি মেশিন নিয়ে ভয়ের কিছু নেই। তা এমন ভাবে লাগানো হয়েছে, শর্টসার্কিট হওয়ার আগেই তা নিজে থেকে বিদ্যুৎ সংযোগ ছিন্ন করে দেবে।’’

অশোকনগর স্টেট জেনারেল হাসপাতালে অতীতে ওয়ার্ডের মধ্যে বড়সড় আগুন লাগার ঘটনা ঘটেছিল। তারপরও এখানে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনার উপযুক্ত পরিকঠামো তৈরি হয়নি বলে বাসিন্দাদের। প্রশিক্ষিত কর্মীর অভাব এবং প্রয়োজনের তুলনায় অগ্নিনির্বাপণ যন্ত্রের সংখ্যাও কম বলে রোগীর আত্মীয়েরা জানালেন।

হাসপাতালগুলিতে অগ্নিনির্বাপণ ব্যবস্থা জোরদার করতে জেলা স্বাস্থ্য দফতর থেকে বেশ কিছু পদক্ষেপ করা হচ্ছে। স্বাস্থ্য দফতর সূত্রে জানানো হয়েছে, এখন থেকে হাসপাতালগুলিতে যে সব ভবন তৈরি হচ্ছে, তা অগ্নিনির্বাপণ ব্যবস্থার সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ ভাবে তৈরি হচ্ছে। সব হাসপাতালগুলির জন্য আলাদা আলাদা অগ্নিনির্বাপণ পরিকাঠামো গড়ে তোলার পরিকল্পনা করা হয়েছে।

সে সব কবে কার্যকর হবে, সে দিকেই আপাতত তাকিয়ে রোগী ও তাঁর পরিবার।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন