বেআইনি: হেলমেট ছাড়াই দেওয়া হচ্ছে তেল। ছবি: সুজিত দুয়ারি
রাজ্য জুড়ে ঢাকঢোল পিটিয়ে ‘সেফ ড্রাইভ সেভ লাইফ’ প্রচার এখনও চলছে। পথ দুর্ঘটনা রুখতে চেষ্টার ত্রুটি নেই। কিন্তু সে সব কথা মানুষের কানে ঢুকলে তো! তাই হেলমেট ছাড়া মোটর বাইক, স্কুটার এখনও যত্রতত্র দেখা যাচ্ছে রাস্তায়। নির্দেশ ছিল, হেলমেট ছাড়া তেল মিলবে না পেট্রল পাম্প থেকে। কিন্তু বেশির ভাগ জায়গায় সেই নিয়মও শিথিল হয়ে এসেছে।
বনগাঁ-বাগদা সড়কের পাশে কুন্দিপুর এলাকায় একটি পেট্রল পাম্পে দেখা গেল, হেলমেট ছাড়া তেল পেতে কোনও প্রশ্নের মুখে পড়তে হচ্ছে না বাইক চালকদের। হাবড়ার ফুলতলাতেও একই দৃশ্য। তবে হাবড়া শহরে যশোর রোডের পাশের একটি পাম্পে হেলমেট ছাড়া পেট্রল দেওয়া হচ্ছে না বলে সাফ জানালেন কর্মচারীরা।
বছর দেড়েক আগে রীতিমতো নোটিস দিয়ে পেট্রল পাম্পগুলোকে পুলিশের তরফে জানিয়ে দেওয়া হয়েছিল, হেলমেট ছাড়া কাউকে পেট্রল দেওয়া যাবে না। কিছু দিন সে নিয়ম বেশ কড়া ভাবেই পালন করা হয়। কিন্তু এখন রাশ আলগা হচ্ছে ক্রমশ।
কয়েক মাস আগে হাবড়া থানার পুলিশ স্থানীয় একটি পেট্রল পাম্প ও নকপুল এলাকায় অভিযান চালিয়ে দু’জন পেট্রল পাম্প কর্মী ধরেছিল। তাঁরা হেলমেট ছাড়াই চালকদের পেট্রল দিচ্ছিলেন। হেলমেট ছাড়া তারা আর পেট্রল বিক্রি করবেন না, এই মর্মে পুলিশের কাছে মুচলেকা দেওয়ার পরে ছাড়া পান দু’জন। পাম্প মালিকদেরও কড়া নির্দেশ দেওয়া হয়।
বনগাঁ মহকুমা পুলিশের তরফেও পাম্পগুলোর উপরে নজরদারি নিয়মিত চলত। বনগাঁর এসডিপিও অনিল রায় নিজে এলাকায় ঘুরে ঘুরে পাম্পের উপরে নজরদারি করছেন— এমন দৃশ্যও দেখা গিয়েছিল।
কিন্তু সম্প্রতি বসিরহাট, হাবড়া, অশোকনগর— এই সব এলাকার বেশির ভাগ পেট্রল পাম্পে হেলমেট ছাড়াই পেট্রল পাওয়া যাচ্ছে বলে অভিযোগ উঠছে।
কেন পরিস্থিতি পাল্টে গেল?
পেট্রল পাম্পের এক মালিক জানালেন, হেলমেটহীন বাইক চালককে ফিরিয়ে দেওয়ার ফলে আর্থিক লোকসান হচ্ছিল। কর্মচারীদের সঙ্গে বচসা বাধছিল ক্রেতাদের। পুলিশের নজরদারিও কমেছে। সে জন্য ফের পাম্প কর্তৃপক্ষ হেলমেট ছাড়াই পেট্রল দেওয়া শুরু করেছেন। বনগাঁর এক পেট্রল পাম্পের কর্মচারী বলেন, ‘‘পুলিশের তরফে নতুন করে কোনও আর নির্দেশ দেওয়া হয়নি। আমরা হেলমেট ছাড়া তেল দিচ্ছি।’’
বনগাঁর এসডিপিও অনিল রায় ও হাবড়া থানার আইসি মৈনাক বন্দ্যোপাধ্যায় অবশ্য জানিয়েছেন, ফের পাম্পগুলির উপরে নজরদারি জোরদার করা হচ্ছে। অনিল বলেন, ‘‘বাইক চালকেরা সচেতন না হলে একশো শতাংশ সাফল্য আসবে না। চালকদের বোঝা উচিত, হেলমেটহীন অবস্থায় দুর্ঘটনা ঘটলে মৃত্যুর আশঙ্কা বেশি থাকে।’’
ক্যানিং, বাসন্তী, জীবনতলা, ভাঙড়-সহ বিভিন্ন এলাকায় পেট্রল পাম্পগুলিতে হেলমেট ছাড়াই বাইক আরোহীদের তেল দিতে দেখা যাচ্ছে। পুলিশের নজরদারি ইদাননীং আর চোখে পড়ে না। তবে মাঝে মধ্যে বিভিন্ন এলাকায় এখনও ঘটা করে পুলিশ ‘সেফ ড্রাইভ সেভ লাইফ’ নিয়ে প্রচার চালাচ্ছে। কিন্তু বিনা হেলমেটের বাইক আরোহীদের ধরপাকড় কার্যত বন্ধ। আগে পেট্রল পাম্পগুলিতে নোটিস ঝোলানো হয়েছিল, বিনা হেলমেটে তেল দেওয়া হবে না। অনেকেই সেই বোর্ড খুলে ফেলেছেন।
মহকুমা পুলিশের এক কর্তা বলেন, ‘‘বিনা হেলমেটের যাত্রীদের প্রতি কড়া নজরদারি আছে। এ নিয়ে আমাদের অভিযান চালানো হয়। পাম্পগুলিকে বারবার সাবধান করা হয়, বিনা হেলমেটে তেল না দেওয়ার জন্য। কেউ হয় তো লুকিয়ে এ সব করছে। প্রমাণ পেলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’’ এক পুলিশ কর্তার কথায়, ‘‘আমরা এটা বুঝিয়ে উঠতে পারছি না, হেলমেট পরা আরোহীর নিজের নিরাপত্তার জন্য জরুরি। শুধু আইন বাঁচানোর প্রশ্ন নয় এটা।’’