মিটারে যাওয়ার কথা বললে নড়বে না কেউ

যশোহর রোড সংলগ্ন লেকটাউন, বাঙুর অ্যাভিনিউ থেকে শুরু করে বাগুইআটি, কৈখালি মোড়, রাজারহাট চিনারপার্ক থেকে বিমানবন্দর, বিরাটি, মধ্যমগ্রাম, বারাসতে। রাস্তা দখল করে ট্যাক্সি স্ট্যান্ডে নির্লিপ্ত ভাবে দাঁড়িয়ে থাকে হলুদ ট্যাক্সি। বিমানবন্দর চত্বরের বাসিন্দা তরুণ বাইনের অভিযোগ, ‘‘বচসা করেও লাভ হয় না। ট্র্যাফিক পুলিশকে জানালে ওঁরা অন্য ট্যাক্সি ধরার কথা বলে চলে যান।’’

Advertisement

অরুণাক্ষ ভট্টাচার্য

বারাসত শেষ আপডেট: ২৯ জুন ২০১৭ ০৪:১১
Share:

সারিবদ্ধ: এই ট্যাক্সিগুলি নিয়ে উঠেছে অভিযোগ। ছবি: সুদীপ ঘোষ।

মিটার যেন ট্যাক্সিতে সাজানোর জিনিস! গোটা উত্তর ২৪ পরগনা জুড়ে তেমনটাই অভিযোগ।

Advertisement

এক একটি স্ট্যান্ডে দাঁড়িয়ে ১০টিরও বেশি হলুদ ট্যাক্সি। কোনওটি রাজ্য সড়ক, কোনওটি জাতীয় সড়কে. কিন্তু নিময় মেনে মিটারে যাওয়ার কথা বললে নড়বে না একটিও। মিটার বন্ধ রেখে চালকের দাবি মতো বেশি টাকা দিতে রাজি হলে তবেই যাওয়া যাবে গন্তব্যে। একই চিত্র দমদম, ভিআইপি রোড থেকে শুরু করে যশোর রোড, সর্বত্র। স্থানীয়দের অভিযোগ, এ বিষয়ে স্থানীয় জনপ্রিতিনিধি থেকে শুরু করে ট্র্যাফিক পুলিশ, বারবার জানানো হয়েছে সকলকে। কিন্তু সুরাহা হয়নি।

অন্য দিকে অনেক সময়েই চড়া ভাড়া থাকে ‘ওলা’, ‘উবের’-এর মতো অ্যাপ ক্যাবে। ফলে সাধারণ মানুষের পক্ষে তা অসুবিধাজনক হয়ে পড়ে।

Advertisement

মেট্রো বা ট্রেন থেকে নেমে দমদম রোডে সব সময়েই ট্যাক্সির প্রতীক্ষায় ভিড় লেগে থাকে। সেখানে উড়ালপুলের নীচে নাগেরবাজার ও চিড়িয়ামোড়ের দিকে ঠায় দাঁড়িয়ে থাকে ট্যাক্সি। তবে বিমানবন্দর, বাগুইআটির মতো কাছাকাছি গন্তব্যে যেতেও আগে থেকে ঠিক করে নিতে হয় ভাড়া। কারণ মিটার তো বন্ধই থাকবে। মিটারের চেয়ে ৫০-১০০ টাকা বেশি দিলেও নড়বেন না কেউ।

একই হাল যশোহর রোড সংলগ্ন লেকটাউন, বাঙুর অ্যাভিনিউ থেকে শুরু করে বাগুইআটি, কৈখালি মোড়, রাজারহাট চিনারপার্ক থেকে বিমানবন্দর, বিরাটি, মধ্যমগ্রাম, বারাসতে। রাস্তা দখল করে ট্যাক্সি স্ট্যান্ডে নির্লিপ্ত ভাবে দাঁড়িয়ে থাকে হলুদ ট্যাক্সি। বিমানবন্দর চত্বরের বাসিন্দা তরুণ বাইনের অভিযোগ, ‘‘বচসা করেও লাভ হয় না। ট্র্যাফিক পুলিশকে জানালে ওঁরা অন্য ট্যাক্সি ধরার কথা বলে চলে যান।’’

মধ্যমগ্রাম চৌমাথায় জাতীয় সড়কের উপরেই রয়েছে ট্যাক্সি স্ট্যান্ড। রাস্তা তো বটেই, যাত্রী প্রতীক্ষালয় ঘিরেও দাঁড়িয়ে থাকে অনেক ট্যাক্সি। পথচারীদের অভিযোগ, ফুটপাথ জুড়ে ট্যাক্সি থাকায় যাতায়াতে অসুবিধে হয়। হাঁটতে হয় জাতীয় সড়ক দিয়েই। বাস থেকে নেমেও রাস্তার পাশে যাওয়া যায় না। ফলে প্রায়ই ঘটে দুর্ঘটনা।

বারাসত শহরে ৩৪ ও ৩৫ নম্বর জাতীয় সড়কের পাশে চারটি গুরুত্বপূর্ণ মোড়, ডাকবাংলো, চাঁপাডালি, কলোনি মোড় ও হেলাবটতলায় রয়েছে ট্যাক্সি স্ট্যান্ড। সঙ্গে ৩৪ নম্বর জাতীয় সড়কের পাশে হৃদয়পুরের কাছে পূর্বাচলের মতো অনেক জায়গায় রাস্তা জুড়ে নতুন স্ট্যান্ড হয়েছে। এ সব জায়গা থেকে কলকাতার দিকে যেতে গেলে আরও ভয়ানক অভিজ্ঞতা হয়। যা ইচ্ছে ভাড়া হাঁকা হয়।

অভিযোগ, এই সব স্ট্যান্ডে ট্যাক্সিচালকদের ঠিক করে দেওয়া আগাম ভাড়া কখনও মিটারের দ্বিগুণও হয়। কেন? চালকদের যুক্তি, ফিরতি পথে যাত্রী পাওয়া যায় না। তাই সেই ভাড়া নিয়ে নেওয়া হয়। আবার ফিরতি পথের ট্যাক্সি দাঁড়াতে পারে না এই সব স্ট্যান্ডের সামনে। সেখানে দাঁড়িয়ে যাত্রী নিলে স্ট্যান্ডে পয়সা দিতে হয়।

সৌরভ সরকার নামে এক বাসিন্দা বলেন, ‘‘এরা যাত্রী পরিষেবার কথা ভাবেই না। যেতেই চায় না। অনেকে সারাদিন বসে থাকে এক জনকে ধরে বোকা বানানোর জন্য।’’ পুলিশ অবশ্য বলছে মিটারের চেয়ে বেশি টাকা নেওয়ার নির্দিষ্ট অভিযোগ এলে চালককে ধরা হয়। উত্তর ২৪ পরগনার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার অভিজিৎ বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ‘‘অন্য সব অভিযোগও খতিয়ে দেখা হচ্ছে।’’

এ প্রসঙ্গে উত্তর ২৪ পরগনায় তৃণমূল শ্রমিক সংগঠনের সভাপতি তাপস দাশগুপ্ত বলেন, ‘‘অনেক সময়ে ফিরতি পথে ভাড়া পাওয়া যায় না বলে চালকেরা বাড়তি টাকা চান। তবে তাঁদের সাবধান করা হয়েছে, মিটার ছাড়া যেন না যান। তবে অভিযোগের ব্যবস্থা নিতে ট্যাক্সিচালকদের নিয়ে একটি বৈঠক ডাকা হয়েছে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন