আবার তাণ্ডব থানায়, অভিযুক্ত তৃণমূল

বোলপুর, আলিপুরের পরে এ বার ব্যারাকপুরের নোয়াপাড়া। খাস কলকাতার কাছে এই এলাকায় থানায় ঢুকে তাণ্ডব চালানোর ঘটনায় আবার কাঠগড়ায় তৃণমূল নেতা-কর্মীরা। আর সেই ধাক্কায় এক অভিযুক্তকে ছেড়ে দেওয়ার অভিযোগ উঠল খোদ পুলিশের বিরুদ্ধে! মাস কয়েক আগে অভিযুক্তদের ছাড়াতে আলিপুর থানায় হামলা চালিয়েছিল শাসক দলের একাংশ। বোলপুর থানায় ঢুকে পুলিশ অফিসারদের নিগ্রহের অভিযোগ উঠেছিল বীরভূমের তৎকালীন যুব তৃণমূল সভাপতির বিরুদ্ধে।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

ব্যারাকপুর শেষ আপডেট: ১২ ফেব্রুয়ারি ২০১৫ ০৩:০০
Share:

চন্দ্রভান সিংহ ও সুনীল সিংহ

বোলপুর, আলিপুরের পরে এ বার ব্যারাকপুরের নোয়াপাড়া। খাস কলকাতার কাছে এই এলাকায় থানায় ঢুকে তাণ্ডব চালানোর ঘটনায় আবার কাঠগড়ায় তৃণমূল নেতা-কর্মীরা। আর সেই ধাক্কায় এক অভিযুক্তকে ছেড়ে দেওয়ার অভিযোগ উঠল খোদ পুলিশের বিরুদ্ধে!

Advertisement

মাস কয়েক আগে অভিযুক্তদের ছাড়াতে আলিপুর থানায় হামলা চালিয়েছিল শাসক দলের একাংশ। বোলপুর থানায় ঢুকে পুলিশ অফিসারদের নিগ্রহের অভিযোগ উঠেছিল বীরভূমের তৎকালীন যুব তৃণমূল সভাপতির বিরুদ্ধে। আর এ বার নোয়াপাড়া থানায় ঢুকে এক বন্দিকে ছাড়িয়ে নেওয়ার জন্য ভাঙচুর ও হামলা চালানোর অভিযোগ উঠল গাড়ুলিয়া পুরসভার পুরপ্রধান সুনীল সিংহ ও তাঁর দাদা চন্দ্রভানের বিরুদ্ধে! আলিপুরে হামলা থেকে বাঁচতে টেবিলের তলায় ঠাঁই নিয়েছিল পুলিশ। এখানে অবশ্য তা হয়নি। তবে হামলার ঘটনায় অভিযুক্ত চন্দ্রভানকে ছেড়ে দেয় পুলিশ। ধরা হয়নি সুনীলকেও।

এ কথা শুনে নবান্নে রাজ্য স্বরাষ্ট্র দফতরের এক কর্তা পর্যন্ত বিস্ময় প্রকাশ করেছেন। তাঁর মন্তব্য, “খতিয়ে দেখছি। না জেনে মন্তব্য করব না।” ব্যারাকপুরের গোয়েন্দা প্রধান অজয় ঠাকুর জানাচ্ছেন, রাতে এলাকায় উত্তেজনা ছড়াতে পারে, এই আশঙ্কায় চন্দ্রভানকে ছাড়া হয়েছে। পুলিশের একটি সূত্রের অবশ্য দাবি, থানায় হামলা ও ভাঙচুরের ঘটনায় বুধবার ৩ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে।

Advertisement

কী ঘটেছিল? পুলিশ সূত্রের খবর, বিদ্যুৎ চুরি করে পাম্প চালানো এবং জলা বোজানোর চেষ্টার অভিযোগে মঙ্গলবার গোপাল সাউ নামে এক ব্যক্তিকে গ্রেফতার করা হয়। কিছু ক্ষণ পরেই চন্দ্রভান দল নিয়ে থানায় হাজির হন। গোলমাল শুরু হলে নোয়াপাড়া থানার আইসি স্বপন সাহাকে চন্দ্রভান আক্রমণ করেন বলে অভিযোগ।পুলিশ জানায়, এর পরেই চন্দ্রভানকে আটক করে পুলিশ। দাদাকে আটক করার খবর পেয়েই দলবল নিয়ে থানায় হাজির হন সুনীল। থানা ঘেরাও করে বিক্ষোভ দেখানোর সময় হঠাৎই তারা ভাঙচুর শুরু করে। পুলিশকেও মারধর করা হয় বলে অভিযোগ। সুনীল নিজে থানায় যাওয়ার কথা স্বীকার করেছেন। তিনি বলেন, “আমি থানায় গিয়েছিলাম। তবে গোলমালের সঙ্গে আমাদের দলের কেউ জড়িত নয়।”

এই ঘটনায় স্তম্ভিত কলকাতা পুলিশের প্রাক্তন কমিশনার তুষার তালুকদার বলেন, “পুলিশ যদি স্বাধীন ভাবে কাজ করতে না পারে, তা হলে দুষ্কৃতীরা মাত্রাছাড়া দৌরাত্ম্য শুরু করবেই।” তাঁর অভিযোগ, “পুলিশের উপরতলার কর্তাদের নির্দেশেই এমনটা হচ্ছে। তাঁরা কার নির্দেশে চলছেন, সেটা বুঝতে অসুবিধা হয় না।”

হাইকোর্টের প্রাক্তন বিচারপতি ভগবতীপ্রসাদ বন্দ্যোপাধ্যায় বলছেন, “রাজ্যে আইনের শাসন নেই। ঝামেলা বাড়বে বলে পুলিশ অভিযুক্তকে ছেড়ে দিল, এটা নজিরবিহীন!”

কমিশনারেটের কর্তাদের যুক্তি মানতে নারাজ পুলিশের নিচুতলাও। কমিশনারেটের একটি থানার এক সাব ইন্সপেক্টর বলেন, “কর্মরত ট্র্যাফিক পুলিশকে চড় মারলে শাসক দলের সাংসদকে জিজ্ঞাসাবাদ পর্যন্ত করতে পারে না পুলিশ। উপরতলা এই ভাবে আপস করে চললে যা হওয়ার, সেটাই নোয়াপাড়ায় ঘটেছে। এমন আরও ঘটবে।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন