প্রাতর্ভ্রমণে বেরিয়েই দিনের কাজ শুরু ওসি, বিডিওদের

এলাকায় পানীয় জলের সমস্যা, নির্মল বাংলা প্রকল্পে শৌচাগারের টাকা না পাওয়া, ঘরের জন্য সরকারি প্রকল্পের অন্তর্ভুক্ত না হওয়া, যত্রতত্র জমে থাকা জঞ্জাল— এ সব সমস্যা নিয়ে এলাকায় অভিযোগ দীর্ঘদিনের।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ১৮ ডিসেম্বর ২০১৭ ০২:০৪
Share:

এলাকার বাসিন্দাদের সঙ্গে কথা বলছেন ওসি এবং বিডিও। রবিবার, ভাঙড়ে। ছবি: সামসুল হুদা

তখন সকাল ছ’টা। রোজকার মতো প্রাতর্ভ্রমণে বেরিয়েছিলেন ওসি এবং বিডিও। আচমকাই পথ আটকে দিলেন এলাকার মহিলারা। বিক্ষোভ নয়, আবেদন জানাতে। মন দিয়ে সব কথা শুনে তখন সমাধানেও সচেষ্ট দুই প্রশাসনিক অফিসার। রবিবারের সকালটা এ ভাবেই দেখলেন ভাঙড়-১ ব্লকের নারায়ণপুরের বাসিন্দারা।

Advertisement

এলাকায় পানীয় জলের সমস্যা, নির্মল বাংলা প্রকল্পে শৌচাগারের টাকা না পাওয়া, ঘরের জন্য সরকারি প্রকল্পের অন্তর্ভুক্ত না হওয়া, যত্রতত্র জমে থাকা জঞ্জাল— এ সব সমস্যা নিয়ে এলাকায় অভিযোগ দীর্ঘদিনের। অথচ হেলদোল ছিল না প্রশাসনের। তাই এ দিন এলাকায় দুই অফিসারকে হাতের কাছে পেয়ে সুযোগ ছাড়তে চাননি নারায়ণপুর গ্রামের মহিলারা। তাঁরা বলে ওঠেন, ‘‘স্যার, এখানে একটা জলের কল ছিল। কিন্তু ব্যক্তিগত নিকাশির কাজ করতে গিয়ে তা ভাঙা হয়েছে। অনেক দূর থেকে জল বয়ে আনতে হচ্ছে।’’ এ কথা শুনে বিরক্ত দুই অফিসার তলব করেন অভিযুক্তকে। প্রশ্ন করেন,— কাকে বলে এ কাজ করেছেন? দ্রুত কল সারানোর ব্যবস্থা করুন। তখন হাতজোড় করেন ওই ব্যক্তি— স্যার, ভুল হয়ে গিয়েছে।

স্থানীয় প্রশাসনের বক্তব্য, শুধু রবিবারই নয়, ভাঙড়-১ নম্বর ব্লকের বিডিও সৌগত পাত্র এবং ভাঙড় থানার ওসি অশোকতরু মুখোপাধ্যায় প্রতিদিন বিভিন্ন এলাকায় প্রাতর্ভ্রমণে বেরোন। পাশাপাশি সমস্যা দেখলে তা সমাধানের চেষ্টা করেন তাঁরা।

Advertisement

এ দিন কল নিয়ে নালিশ করে হাতেনাতে ফল মেলায় উৎসাহিত হয়ে পড়েন অন্যরাও। কেউ জানান, দরমার বেড়া আর প্লাস্টিকের ছাউনির এক চিলতে ঘরে ছ’জনের বাস। তবু পঞ্চায়েতে আবেদন করেও ঘর তৈরির সরকারি প্রকল্পের টাকা পাননি তাঁরা। কারও অভিযোগ, নিকাশি নালা সাফাই হয় না। তাই বাড়ছে মশা-মাছির উপদ্রব। কেউ আবার ক্ষোভ প্রকাশ করেন, এলাকার বেহাল রাস্তা নিয়ে। অন্য জনের অভিযোগ, সরকারি টাকা না পাওয়ায় শৌচাগার হয়নি।

সব দেখে-শুনে সৌগতবাবু এলাকার জন প্রতিনিধিকে বলেন,— ‘‘এই পরিবার যাতে সরকারি শৌচাগার পায়, সে জন্য নাম পাঠান দ্রুত। এর পরে প্রধানমন্ত্রী আবাস যোজনা, গীতাঞ্জলি প্রকল্প, ১০০ দিনের কাজ-সহ বিভিন্ন প্রকল্পের খোঁজ নেন তাঁরা।

বাসন্তী হাইওয়ে ধরে হাঁটতে গিয়ে তাঁরা দেখেন, বালিগাদার কাছে রাস্তায় বস্তা ভর্তি আবর্জনা। ক্ষুব্ধ ওসি বাসিন্দাদের ডেকে বলেন, এ ভাবে নোংরা ফেলা যাবে না।

দুই অফিসারের বক্তব্য, যাঁরা সরাসরি তাঁদের কাছে আসতে পারেন না অথচ সরকারি সুযোগ থেকে বঞ্চিত, তাঁদের কাছে পৌঁছতেই এই পন্থা বাছা হয়েছে। আর বাসিন্দারা বলছেন, বিভিন্ন সরকারি সুবিধা পেতে তাঁদের প্রশাসনের দোরে ঘুরতে হয়। সেখানে প্রশাসন যদি এ ভাবে পাশে থাকে, লড়াইটা সহজ হয়ে যায়।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন