ভেজাল: মেশানো হচ্ছে রং। ছবি: নির্মাল্য প্রামাণিক
বড় মাপের একটি ড্রাম। তাতে জল। জলে মেশানো হচ্ছে রঙ। ঝুড়িভর্তি পটল তার মধ্যে ঢালা হল। পটল ওই জলে কিছুক্ষণ ডুবিয়ে রেখে তুলে নেওয়া হল। পরে বস্তাবন্দি হল সেই পটল। এরপরে ট্রাকে করে তা নিয়ে যাওয়া হবে রাজ্যের বিভিন্ন বাজারে। ভিন রাজ্যেও যাবে। বিভিন্ন বাজার থেকে সাধারণ মানুষ ওই পটল টাটকা-তাজা ভেবে কিনবেন।
মঙ্গলবার দুপুরে এমনই এক ঘটনার খবর আসে গাইঘাটা থানার কাছে। আংরাইল বাজার এলাকায় যায় পুলিশ। হাতেনাতে ধরা হয় এক যুবককে। ঘটনাস্থল থেকে রঙ মেশানো প্রচুর পটলও উদ্ধার হয়। উদ্ধার হয় ড্রাম ও রঙের কৌটো। পুলিশ জানিয়েছে, ধৃতের নাম মিঠু দাস। বাড়ি কইপুকুরে। তবে উদ্ধার হওয়া পটলের মালিক বিশ্বজিৎ হাজরা। তিনিই পটলে রঙ মেশানোর কাজ করাচ্ছিলেন বলে অভিযোগ। বিশ্বজিৎ পলাতক। তাঁর খোঁজ শুরু হয়েছে। পুলিশের এক কর্তা বলেন, ‘‘উদ্ধার হওয়া রং ফরেন্সিক ল্যাবরেটরিতে পাঠানো হচ্ছে।’’ বছরখানেক আগেও বনগাঁ, বাগদা, গাইঘাটা, গোপালনগর, হাবড়া, অশোকনগর, গুমা, বিড়া, দত্তপুকুর, মছলন্দপুর, স্বরূপনগর, বাদুড়িয়া, দেগঙ্গা এলাকার হাটে-বাজারে প্রকাশ্যেই ড্রামের মধ্যে পটল, কাঁকরোল প্রভৃতি আনাজ ঢেলে তার মধ্যে কপার সালফেট বা তুঁতে মেশাতে দেখা যেত। ওই রঙ মেশালে আনাজ তাজা দেখায়। স্থানীয় হাটের দিনগুলিতেই আনাজ রঙ করার দৃশ্য বেশি করে দেখা যেত।
২০১৭ সাল থেকে পুলিশ আনাজ রঙ করতে দেখলেই ধরপাকড় শুরু করে। সে সময়ে কয়েকজনকে গ্রেফতারও করা হয়। সাধারণ মানুষকে এ বিষয়ে সচেতন করতে পুলিশের তরফে প্রচার কর্মসূচি নেওয়া হয়েছিল। সাধারণ মানুষ ও ব্যবসায়ীদের সচেতন করতে বাজারে এ সংক্রান্ত ফ্লেক্স লাগানো হয়েছিল। এ সবের জেরে আনাজে রঙ মেশানো বেশ কিছু দিন বন্ধ ছিল।
কিন্তু সম্প্রতি ফের কিছু আনাজ ব্যবসায়ীর মধ্যে আনাজে রং করার প্রবণতা দেখা যাচ্ছে বলে অভিযোগ। এ বার অবশ্য তুঁতে মেশানো হচ্ছে না। পরিবর্তে কী রঙ মেশানো হচ্ছে, তা স্পষ্ট নয় পুলিশের কাছে।
কৃষি বিশেষজ্ঞেরা জানিয়েছেন, পটল, উচ্ছে, কাঁকরোলের মতো আনাজ অন্য জেলায়, ভিন রাজ্যে পাড়ি দেয়। আনাজ রঙ মেশানো হলে তা দ্রুত পচে না। আনাজ অনেক দিন পর্যন্ত টাটকা দেখায়।
এই রং শরীরের পক্ষে খুবই ক্ষতিকর। বনগাঁ মহকুমা হাসপাতালের সুপার শঙ্করপ্রসাদ মাহাতো বলেন, ‘‘রং মেশানো আনাজ দীর্ঘদিন ধরে খেলে লিভার ও কিডনির রোগ দেখা দিতে পারে। ক্যানসার হওয়ারও আশঙ্কা বাড়ে।’’
সাধারণ মানুষের বক্তব্য, এ নিয়ে কড়া শাস্তির ব্যবস্থা করা হয় না বলেই আনাজে রং করার প্রবণতা কমছে না। পুলিশ অবশ্য জানাচ্ছে, ধৃতদের বিরুদ্ধে ভারতীয় দণ্ডবিধির ২৭২ ও ২৭৩ ধারায় মামলা রুজু করা হয়। যা জামিন অযোগ্য। দোষ প্রমাণিত হলে ন্যূনতম সাজা ১০ বছর জেল, সর্বোচ্চ শাস্তি যাবজ্জীবন কারাদণ্ড।