দেহ আসতেই কান্নার রোল

সোমবার কেঁদোদ্বীপের কাছে মইলিশ ধরতে গিয়েছিলেন। ঝড়ে বেসামাল হয়ে যায় বেশ কয়েকটি ট্রলার। অনেকে ছিটকে পড়েন জলে। কয়েকজনকে আশেপাশের ট্রলার উদ্ধার করে।

Advertisement

দিলীপ নস্কর

শেষ আপডেট: ১৯ জুলাই ২০১৮ ০০:০০
Share:

উদ্বিগ্ন: খারাপ খবর আসবে না তো? দুশ্চিন্তায় নিখোঁজ মৎস্যজীবীর আত্মীয়েরা। নিজস্ব চিত্র।

ফ্রেজারগঞ্জ মৎস্যবন্দর তখন উপচে পড়ছে ভিড়ে। একটানা বিলাপের সুর। অনেকের চোখে জল। চোখে মুখে উৎকণ্ঠা।

Advertisement

এরই মধ্যে খবর এল, একজনের দেহ মিলেছে। সঙ্গে সঙ্গে ১৯টি পরিবারের উঠল কান্নার রোল। কার সংসার ভেসে গেল, তখনও কেউ জানেন না।

মৎস্যজীবীদের ট্রলার পাড়ে ভিড়ল। নামানো হল একটি দেহ। হুমড়ি খেয়ে পড়ল ভিড়টা। সোমবার বিকেল থেকে সমুদ্রে তলিয়ে গিয়েছিল দেহ। তিন দিন পরে যে অবস্থায় উদ্ধার হল, দেখে চেনার উপায় নেই। শেষমেশ প্রদীপ করণ নামে এক যুবক জানালেন, দেহ তাঁর বাবা মুক্তিপদ করণের (৫৫)। পরনের জামা দেখে চিনতে পারা গিয়েছে দেহ। পুলিশ তা ময়নাতদন্তে পাঠিয়েছে।

Advertisement

মুক্তিপদর বাড়ি ফ্রেজারগঞ্জ কোস্টাল থানার হরিপুরে। সোমবার কেঁদোদ্বীপের কাছে মইলিশ ধরতে গিয়েছিলেন। ঝড়ে বেসামাল হয়ে যায় বেশ কয়েকটি ট্রলার। অনেকে ছিটকে পড়েন জলে। কয়েকজনকে আশেপাশের ট্রলার উদ্ধার করে। কিন্তু খোঁজ মেলেনি ১৯ জনের। তাঁদের মধ্যেই মিলল একজনের দেহ। বাকিরা কে কী ভাবে ফেরেন, তা নিয়ে এখনও উদ্বিগ্ন বাকি পরিবারগুলি। সমুদ্রের পাড়ে কান্নার রোল আর বিলাপের সুরটা তাই এখনই শেষ হওয়ার নয়।

উদ্ধারের কাজে প্রশাসন এবং উপকূল রক্ষী বাহিনীর ভূমিকা নিয়ে তুমুল অসন্তোষ আছে মৎস্যজীবী ও তাঁদের পরিবারের। তাঁদের বক্তব্য, উদ্ধারের যাবতীয় কাজ তাঁরা নিজেরাই চালাচ্ছেন। এফবি মল্লেশ্বর নামে নিখোঁজ একটি ট্রলারকেও চিহ্নিত করা গিয়েছে বলে জানালেন মৎস্যজীবী সংগঠনের নেতারা। তবে আরও দু’টির খোঁজ মেলেনি এখনও।

বুধবার এলাকায় গিয়ে দেখা গেল, একটি হোভারক্র্যাফ্‌ট ফ্রেজারগঞ্জ কোস্টাল থানা এলাকায় সমুদ্রের পাড়ে দাঁড়িয়ে। তা দেখিয়ে স্থানীয় মানুষজন জানালেন, এর তো এতক্ষণে জলে নেমে পড়ে তল্লাশি চালানোর কথা! উপকূল রক্ষী বাহিনী সূত্রে অবশ্য জানানো হয়েছে, তিনটি হোভারক্র্যাফ্‌টের মধ্যে একটি জলে নেমেছে। তা-ও উত্তাল সমুদ্রে কাজ করতে অসুবিধা হচ্ছে তাদের। বাকি দু’টি পাড়ে মজুত রাখা আছে। এমনটাই দস্তুর। আকাশপথেও খোঁজ চলছে। নিখোঁজ মৎস্যজীবীর দেহ এবং এফবি মল্লেশ্বরকে তারাই চিহ্নিত করে মৎস্যজীবীদের জানিয়েছেন বলে দাবি উপকূল রক্ষী বাহিনীর কর্তাদের।

মৎস্যজীবীদের অবশ্য প্রশ্ন, এমন বিপদের সময়েই যদি জলে নামানো না যায়, তা হলে আধুনিক হোভারক্র্যাফ্‌ট আর কবে কাজে আসবে!

মৎস্যজীবী সংগঠনের নেতা বিজন মাইতির কথায়, ‘‘১০টি ট্রলার উদ্ধারের কাজ করছে। আমাদের লোকজন মাঝ সমুদ্রে বিপদে পড়লে দেখার কেউ নেই। আমরা নিজেরাই নিজেদের ভরসা। এ ছাড়া গতি নেই।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন