পাঁচমিশালি ক্লাসে ভরসা একমাত্র ‘দশরথ স্যার’

তিনটি বেঞ্চের সারিতে বসে দ্বিতীয়, তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণির ছাত্রছাত্রীরা। মাঝখানে চেয়ার-টেবিলে বসে সব ক্লাস এক সঙ্গে নিচ্ছেন স্কুলের একমাত্র শিক্ষক। বাগদার সিন্দ্রাণী পঞ্চায়েতের সিন্দ্রাণী কলোনি প্রাথমিক বিদ্যালয় গত দশ মাস ধরে চলছে এ ভাবেই।স্কুলের একমাত্র শিক্ষক দশরথ হালদার ২০১৩ সালের নভেম্বর মাসে যোগদান করেন এই স্কুলে।

Advertisement

নির্মাল্য প্রামাণিক

বাগদা শেষ আপডেট: ১৪ ফেব্রুয়ারি ২০১৮ ০০:৫৭
Share:

একা-হাতে: ক্লাস নিচ্ছেন স্যার। নিজস্ব চিত্র

একটা বড় ঘর। টেবিল- চেয়ারকে ঘিরে একপাশে মেঝেতে পাতা দু’টি মাদুর। অন্য দিকে তিন সারি বেঞ্চ। মাদুর দু’টির একটিতে বসে প্রাক-প্রাথমিকের খুদেরা। অন্যটিতে প্রথম শ্রেণির পড়ুয়ারা। তিনটি বেঞ্চের সারিতে বসে দ্বিতীয়, তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণির ছাত্রছাত্রীরা। মাঝখানে চেয়ার-টেবিলে বসে সব ক্লাস এক সঙ্গে নিচ্ছেন স্কুলের একমাত্র শিক্ষক।

Advertisement

বাগদার সিন্দ্রাণী পঞ্চায়েতের সিন্দ্রাণী কলোনি প্রাথমিক বিদ্যালয় গত দশ মাস ধরে চলছে এ ভাবেই।

স্কুলের একমাত্র শিক্ষক দশরথ হালদার ২০১৩ সালের নভেম্বর মাসে যোগদান করেন এই স্কুলে। সে সময়ে আরও একজন শিক্ষক ছিলেন। তিনি গত বছর এপ্রিলের শেষে অবসর নেওয়ার পর থেকে একাই স্কুল চালাতে হচ্ছে বলে জানালেন দশরথবাবু।

Advertisement

একা পাঁচটি শ্রেণির ছাত্রছাত্রীদের কী ভাবে সামলান?

দশরথবাবু বলেন, ‘‘প্রার্থনা সঙ্গীতের পরে ক্লাসে এসেই উঁচু ক্লাসের ছাত্রছাত্রীদের বোর্ডে লিখে কিছু কাজ দিয়ে দেই। মিড ডে মিলের সময়ের আগে পর্যন্ত প্রাক-প্রাথমিক ও প্রথম শ্রেণির ছাত্রছাত্রীদের পড়াই। মিড ডে মিল খাওয়ার পরে প্রাক-প্রাথমিক ও প্রথম শ্রেণিকে ছুটি দিয়ে দ্বিতীয়, তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণির পড়ুয়াদের নিয়ে বসি।’’

তবে বিদ্যালয় সহ পরিদর্শকের অফিসে জরুরি বৈঠক থাকলে বা বেতন তুলতে গেলে বেলা ২টোর পরে স্কুল ছুটি দিয়ে যেতে হয় বলেও জানালেন তিনি।

স্কুল সূত্রে জানা গিয়েছে, গত দশ মাসে মাত্র একদিনই শারীরিক অসুস্থতার কারণে ছুটি নিয়েছিলেন দশরথবাবু। সে দিনও অবশ্য স্কুল বন্ধ থাকেনি। সহ পরিদর্শকের নির্দেশে অন্য স্কুল থেকে দু’জন শিক্ষক এসে ক্লাস নিয়ে যান।

একা হাতে এত চাপ কি সত্যি নিতে পারছেন দশরথবাবু?

ঘুনার মাঠ গ্রামের বাসিন্দা মন্টু মণ্ডলের মেয়ে প্রথম শ্রেণিতে পড়ে। মন্টুবাবু বলেন, কিছুটা সমস্যা তো হয়ই। তবে মাস্টারমশাই খুব ভাল। নিয়মিত আসেন। তবে আরও একজন মাস্টারমশাই থাকলে খুব ভাল হত।’’ ওই গ্রামেরই বাসিন্দা যতীন মোহন্তের নাতিও ওই স্কুলে পড়ে। তিনি ‌বলেন, ‘‘একা মানুষ কত দিক সামলাবেন? তবে উনি যথেষ্ট করছেন। খুবই আন্তরিকতার সঙ্গে পড়ান। সামনেই খড়েরমাঠ প্রাথমিক স্কুল। কিন্তু তাও এই স্কুলে কোনও স্কুলছুট নেই।’’

চতুর্থ শ্রেণির ছাত্রী শ্রেয়া মণ্ডল, দ্বিতীয় শ্রেণির সুপর্ণা রায়, সৌরভ বাছাড়, তৃতীয় শ্রেণির জয় মণ্ডলরাও স্যারের প্রশংসায় পঞ্চমুখ।

দশরথবাবু জানান, গত বছর মে মাসে বিদ্যালয় সহ পরিদর্শকের কাছে আরও একজন শিক্ষক দেওয়ার জন্য আবেদন জানিয়েছেন। বিদ্যালয় সহ পরিদর্শক মিলনকান্তি পাল জানান, শিক্ষা দফতরে প্রস্তাব পাঠিয়েছিলেন। আরও একজন শিক্ষক নিয়োগের সিদ্ধান্ত হয়েছে। খুব শীঘ্রই তিনি কাজে যোগ দেবেন।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন