দেগঙ্গায় সিটিসি-র এক বাসচালক মাথায় হেলমেট পড়ে বাস চালাচ্ছেন। ছবি: সজলকুমার চট্টোপাধ্যায়।
স্কুলে মোতায়েন পুলিশ
বনগাঁ হাইস্কুলে (প্রাথমিক) সকাল সাড়ে ৬টা থেকে পুলিশ মোতায়েন ছিল। কোনও গোলমাল পাকায়নি শেষ পর্যন্ত। সপ্তাহের অন্য দিনের স্বাভাবিক পঠনপাঠন হয়েছে। মিড ডে মিলের রান্না খেয়েছে পড়ুয়ারা। তবে উপস্থিতির হার ছিল কম, জানাচ্ছেন স্কুল কর্তৃপক্ষ। শিক্ষক-শিক্ষিকারা অবশ্য সকলেই হাজির ছিলেন।
স্কুল সূত্রে জানা গিয়েছে, আশঙ্কা ছিল ধর্মঘটের সমর্থকেরা স্কুলে এসে ঝামেলা পাকাতে পারেন। সে কথা জানানো হয়েছিল পুলিশকে। সেই মতো এ দিন সকাল ৬টা থেকে স্কুলের গেটে একজন অফিসার-সহ ছ’জন পুলিশ কর্মী মোতায়েন ছিলেন। এসডিপিও অনিল রায় বলেন, ‘‘আমরা চেয়েছিলাম, কোনও ভাবেই যেন ধর্মঘট সমর্থকেরা জোর করে স্কুল বন্ধ করতে না পারেন। সে জন্যই নিরাপত্তা দেওয়া হয়েছিল।’’
বস্তুত, বনগাঁ মহকুমায় শিল্প ধর্মঘটের কার্যত কোনও প্রভাবই পড়েনি। দোকানপাট খোলা ছিল। যানবাহন চলেছে স্বাভাবিক ভাবেই। পেট্রোপোল বন্দরেও কাজকর্ম হয়েছে। তবে দু’দেশের মধ্যে যাতায়াত ছিল কম। হাবরা ও অশোকনগরেও দোকানপাট খোলা ছিল। বাস-অটো চলাচল করেছে।
গা এলিয়ে পুলিশ
যে কোনও বন্ধ, ধর্মঘটে ভ্যাবলা স্টেশনে অবরোধ, বিক্ষোভ, ধ্বস্তাধস্তি ছিল পরিচিত ঘটনা। সেই অভিজ্ঞতাকে কাজে লাগিয়ে স্টেশনে প্রচুর পুলিশ মোতায়েন ছিল। কিন্তু ধর্মঘট সমর্থকদের স্টেশনের আশপাশে দেখাই মেলেনি। ফলে দিনভর গা এলিয়ে কাটাতে পেরেছেন পুলিশ কর্মীরা। স্বস্তিতে শহরবাসীও। শহরের বিভিন্ন অফিসের দরজায় বাম এবং কংগ্রেসের পক্ষে দলীয় পতাকা লাগানো হলেও অফিস কর্মীরা কাজে যোগ দিয়েছেন। কাউকে বাধার মুখে পড়তে হয়নি। বামপন্থীদের দু’টো-একটা ম্যাড়ম্যাড়ে মিছিল চোখে পড়েছে।
গ্রেফতার ১৩
সকালের দিকে বেসরকারি বাস তেমন রাস্তায় নামেনি। তবে বেলার দিকে সংখ্যাটা বেড়েছে। অফিসে কর্মীদের হাজিরা থাকলেও সাধারণ মানুষ তেমন বেরোননি। এসইউসি-র মিছিল সামান্য কিছুক্ষণের জন্য ডায়মন্ড হারবার স্টেশন মোড়ে বাস আটকায়। পুলিশ এসে ৯ জনকে গ্রেফতার করে। রায়দিঘি থেকেও চার জন ধর্মঘট সমর্থককে গ্রেফতার করা হয়েছে। লক্ষ্মীকান্তপুর-শিয়ালদহ এবং ডায়মন্ড হারবার-শিয়ালদহ ট্রেন চলাচল স্বাভাবিক ছিল। কিন্তু যাত্রী সংখ্যা ছিল কম।
হাজিরা ৯৫ শতাংশ
ক্যানিঙে ধর্মঘটের কোনও সাড়া মেলেনি। সরকারি অফিসগুলিতে হাজিরা ছিল প্রায় ৯৫ শতাংশ। তবে বাসন্তীর কুলতলি, নারায়ণতলা রামকৃষ্ণ বিদ্যামন্দিরে পড়ুয়ারা আসেনি। বাস-ট্রেন চলেছে। দোকানপাটও খোলা ছিল।
পোস্ট অফিসে তালা
সরকারি অফিস, স্কুল-কলেজ খোলা রইল। রাস্তায় গাড়িঘোড়ারও দেখা মিলল রোজকার মতোই। তবে কাকদ্বীপ মহকুমায় কেন্দ্রীয় সরকারি অফিস, দু’একটি রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কের শাখা এবং এবং কাকদ্বীপ আদালতে হাজিরা ছিল কম। তার জেরে নাকাল হলেন বহু মানুষ। কাকদ্বীপ সাব পোস্ট অফিস তালা বন্ধ ছিল। ডায়মন্ড হারবার থেকে ডাকের গাড়ি এসে ঘুরে যায়। শাখা অফিসগুলি থেকে আসা চিঠিপত্র, নথিও ফিরে গিয়েছে। কিছু কর্মী যাঁরা কাজে এসেছিলেন, তাঁরাও কাজ করতে পারেননি। ওই কর্মীদের অভিযোগ, পোস্ট অফিসে তালা দিয়ে চাবি নিয়ে চলে গিয়েছেন পোস্টমাস্টার। ডাক বিভাগের কর্তারা জানিয়েছেন, এ দিন যাঁরা অফিসে আসেননি, তাঁদের একদিনের মাইনে কাটা হবে।
কাকদ্বীপ আদালতেও এ দিন আইনজীবীদের অনেকে গরহাজির ছিলেন। বার অ্যাসোসিয়েশনের সম্পাদক দেবপ্রকাশ জানা বলেন, ‘‘আমরা এর আগেই বারের তরফে সর্বসম্মত সিদ্ধান্ত নিয়েছি, যে রাজনৈতিক দলই বন্ধ ডাকুক না কেন, আমরা কাজে বিরত থাকব।’’ তাঁর যুক্তি, বন্ধ-ধর্মঘটে ঝামেলা, গণ্ডগোল হয়। যাতায়াতের পথে বিচারপ্রার্থীরা হেনস্থা হন।’’ আইনজীবীরা না এলেও বিচারক, আদালত কর্মী, সরকারি আইনজীবী এবং কিছু ল’ক্লার্ক কাজে যোগ দিয়েছিলেন।