চিকিৎসক-নার্সকে ফুল দিলেন রোগী

কর্মী নিয়োগ না করে যন্ত্র বসানোয় মাসুল দিচ্ছেন সাধারণ মানুষ। তাই আপাতত অন্য হাসপাতাল থেকে প্যাথলজিস্ট এনে পরিস্থিতি সামাল দেওয়ার কথা বলছেন উত্তর ২৪ পরগনার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক রাঘবেশ মজুমদার।

Advertisement

সামসুল হুদা 

ক্যানিং শেষ আপডেট: ২৯ অগস্ট ২০১৮ ০৭:১০
Share:

শুভেচ্ছা: হাসপাতাল দেখল অন্য দৃশ্য। নিজস্ব চিত্র

চিকিৎসায় গাফিলতির অভিযোগ ওঠে মাঝে মধ্যেই। চিকিৎসক-নার্সরা নিগৃহীত হন নানা সময়ে। সব মিলিয়ে রোগী-চিকিৎসকের সম্পর্ক যে ক্রমশই তলানিতে ঠেকেছে, তা মনে করেন অনেকেই।
তারই মধ্যে উল্টো চিত্র দেখা গেল ক্যানিং মহকুমা হাসপাতালে। সুস্থ হয়ে বাড়ি যাওয়ার আগে চিকিৎসক-নার্সদের ফুল-মিষ্টি দিয়ে গেলেন রোগী।
গোসাবার অ্যানপুরের বাসিন্দা মধুসূদন সর্দার কর্ণাটকের বেল্লারি জেলার কপ্পুর গ্রামে চাষের কাজে গিয়েছিলেন। মাঠে কাজ করার সময়ে চন্দ্রবোড়া সাপে ছোবল মারে। তিনি ভিনরাজ্য থেকে এসে সোজা ভর্তি হয়েছিলেন ক্যানিং হাসপাতালে।
চিকিৎসকদের অক্লান্ত প্রচেষ্টায় মৃত্যুর মুখ থেকে ফিরে এসেছেন বলে মনে করছেন মধুসূদন। সোমবার বিকেলে হাসপাতাল থেকে বাড়ি যাওয়ার আগে চিকিৎসক, নার্স ও যুক্তিবাদী সংস্থার কর্মীদের ফুল-মিষ্টি দিলেন। তাঁরাও এমন ঘটনায় আপ্লুত।
১৫ অগস্ট জমিতে ধান রোয়ার সময়ে ডান হাতে সাপ ছোবল মেরেছিল মধুসূদনের। তাঁর সঙ্গীরা মোবাইলে সাপটির ছবি তুলে রাখেন। মাঠ থেকে হাসপাতাল অনেক দূরে। তাঁদের কাছে বেশি টাকাও ছিল না। সঙ্গীরা তাঁকে স্থানীয় এক কবিরাজের কাছে নিয়ে যান। কবিরাজ মধুসূদনকে কিছু জড়িবুটি দেন। সঙ্গীরা জানিয়েছিলেন, কবিরাজের কথা মতোই তাঁরা মধুসূদনকে বাড়ি নিয়ে আসার জন্য ট্রেনে ওঠেন। ট্রেনের মধ্যে রক্তবমি শুরু হয়। ভয় পেয়ে সঙ্গীরা বাড়িতে খবর দেন।
মধুসূদনের পরিবারের লোকজন যোগাযোগ করেন ক্যানিংয়ের যুক্তিবাদী সংস্থার সঙ্গে। ওই সংস্থার পরামর্শ মতো ২০ অগস্ট ট্রেন থেকে নামতেই মৃতপ্রায় মধুসূদনকে ক্যানিং হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। রাখা হয় সিসিইউে ভেন্টিলেশনে। ৩০টি এভিএস দেওয়া হয়। আট দিন ধরে চিকিৎসা চলে। অবশেষে সুস্থ মধুসূদন। তিনি বলেন, ‘‘ভাবতে পারিনি, প্রাণে বাঁচব। যে ডাক্তারবাবুরা দিনরাত আমার পাশে থেকে সুস্থ করেছেন, তাঁদের প্রতি আমার কৃতজ্ঞতার শেষ নেই। বাড়ি ফেরার আগে তাই একটু মিষ্টিমুখ করাতে চাইলাম।’’
সর্পরোগ বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক সমর রায় জানান, চন্দ্রবোড়া কামড়ালে আক্রান্তের রক্তনালি ক্ষতিগ্রস্ত হয়। রক্তকণিকা ও কিডনি ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে রোগী মৃত্যুমুখে ঢলে পড়ে। অনেক সময়ে ডায়ালিসিসেরও প্রয়োজন হয়। মধুসূদনকে যখন হাসপাতালে আনা হয়েছিল, ততক্ষণে তাঁর রক্তকণিকা ভেঙে বমি ও মূত্রের সঙ্গে রক্ত আসতে শুরু করেছিল। ওই অবস্থাতেও সুস্থ করে তুলতে সব রকম চেষ্টা করা হয়েছে।
রোগীর কাছ থেকে ফুল-মিষ্টি পেয়ে আপ্লুত অনুপম হালদার, বিমান সরকারের মতো চিকিৎসকেরা। হাসপাতালের সুপার অর্ঘ্য চৌধুরী বলেন, ‘‘যে ভাবে চিকিৎসা ব্যবস্থার উপরে প্রায়ই আক্রমণ হচ্ছে, তাতে এই ঘটনা সত্যিই নজির সৃষ্টি করল।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন