ভাঙা সেতুতেই পারাপার। ছবি: দিলীপ নস্কর।
মাস ছ’য়েক আগে মোটরবাইক নিয়ে খালে পড়ে গিয়েছিলেন শম্ভুনাথ হালদার। তাঁর ডান পায়ের ক্ষত এখনও রয়েছে। কুলপির হাঁড়া দক্ষিণ পাড়া ও দলুই পাড়া সংযোগে ডায়মন্ড হারবার খালের উপর ভাঙাচোরা কাঠের সেতু পারাপার করতে গিয়ে প্রায়ই ঘটছে দুর্ঘটনা।
ডায়মন্ড হারবার সাব ডিভিশনের সেচ দফতরের বাস্তুকার পার্থ গঙ্গোপাধ্যায় বলেন, ‘‘বেশ কিছু সেতু নির্মাণের সংস্কারের জন্য পরিকল্পনা করে পাঠানো হয়েছে। তবে তার মধ্যে ওই সেতুটি আছে কিনা বলতে পারছি না। বিষয়টি খতিয়ে দেখে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’’
এরপরেও প্রশাসন থেকে সেতুটি সংস্কার করা হয়নি বলে অভিযোগ স্থানীয় বাসিন্দাদের। কয়েক দশক আগে সেচ দফতর থেকে ওই খালের উপরে প্রায় ১১০ ফুট চওড়া সেতুটি নির্মাণ করা হয়েছিল। তারপর অনেক বছর কেটে গেলেও নতুন করে কোনও সংস্কার হয়নি। বছর দেড়েক আগে সেতুটির কিছু জায়গার পাটাতন ভেঙে গিয়েছে। ফলে সেতুর কিছু জায়গা ফাঁকা হয়ে রয়েছে। এর মধ্যে আবার সেতুর মাঝের অংশ কিছুটা ঝুলে পড়ায় আরও বিপজ্জনক হয়ে দাঁড়িয়েছে। ওই সেতুতে কোনও আলোও নেই।
রামকিশোর পঞ্চায়েত এলাকার ওই সেতু পারাপার করেন বড়বেড়িয়া, মণিকা, দেরিয়া, নস্করপুর, হরিনারায়ণপুর গ্রামের বাসিন্দারা। তা ছাড়া, চারটি প্রাথমিক ও হাইস্কুলের ছাত্রছাত্রীরাও যাতায়াত করে। ডায়মন্ড হারবার শহরে যেতে হলেও ওই সেতু পার হতে হয়। রাজ্যের মধ্যে অন্যতম বড় মাছের পাইকারি বাজার নগেন্দ্র বাজার। ওই বাজারে কর্মরত শ্রমিকেরাও এই সেতু পেরিয়ে যান। জীবনের ঝুঁকি নিয়েই পারাপার করতে হয় সকলকে।
স্থানীয় পঞ্চায়েতের সিপিএমের উপপ্রধান জগন্নাথ প্রামাণিক বেহাল সেতুর কথা স্বীকার করে বলেন, ‘‘একাধিকবার সেচ দফতরকে জানিয়েছি। কিন্তু কোনও ব্যবস্থা নিচ্ছে না। পঞ্চায়েতের পক্ষ থেকে ফের জানাব।’’ ওই সেতু ছাড়া ডায়মন্ড হারবার যেতে হলে অনেকটা ঘুরপথে যেতে হবে। যা যথেষ্ট ব্যয়সাপেক্ষেও। রোগী নিয়ে এই সেতু পার হতে নাজেহাল হন রোগীর বাড়ির লোকজন।
দিনের বেলায় যদিও বা সেতু পার হওয়া যায়, সন্ধ্যার পর থেকে আলো না থাকায় সমস্যা আরও বাড়ে। হামাগুড়ি দিয়েও অনেককে পার হতে দেখা যায়। বর্ষাকালে পিচ্ছিল হয়ে যাওয়ায় আরও বিপজ্জনক হয় সেতু।স্থানীয় বাসিন্দা, অঙ্গনওয়াড়ি সহায়িকা মালতি মিদ্যা জানালেন, দক্ষিণ পাড়ায় ১৫ নম্বর কেন্দ্রে তিনি কাজ করেন। সকালে কুয়াশার জন্য সেতু পিচ্ছিল হয়ে থাকে। তাঁর কথায়, ‘‘সম সময়ে হামাগুড়ি দিয়ে পার হতে হয়।’’ ওই গ্রামেরই বাসিন্দা বিবেক মিদ্যা, নীলিমা হালদার, বিশ্বনাথ হালদারদের দাবি, সেতুটি কাঠের থেকে কংক্রিটের সেতু করার জন্য পঞ্চায়েত থেকে প্রশাসনকে একাধিকবার জানানো হয়েছে। কিন্তু আজও পর্যন্ত কোনও ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে না।