ফল-আনাজের বাজার আগুন, মাথায় হাত ক্রেতা-ব্যবসায়ীর

বনগাঁ মহকুমার বিভিন্ন বাজারে গত বছর এ সময়ে আনাজের যা মূল্য ছিল, তা থেকে এখন প্রায় সব আনাজেরই দাম বেশি।

Advertisement

নিজস্ব প্রতিবেদন

কলকাতা শেষ আপডেট: ১৩ অক্টোবর ২০১৯ ০১:০০
Share:

সুনসান বাজার, জয়নগরে। ছবি: সুমন সাহা

বাজারে গিয়ে ব্যাজার মুখ অনেকেরই। ফল-আনাজের দাম আকাশছোঁয়া। লক্ষ্মীপুজোর আগে এই পরিস্থিতিতে পকেটে টান পড়েছে মানুষের।

Advertisement

বনগাঁ মহকুমার বিভিন্ন বাজারে গত বছর এ সময়ে আনাজের যা মূল্য ছিল, তা থেকে এখন প্রায় সব আনাজেরই দাম বেশি। বনগাঁর অন্যতম বড় বাজার ট বাজার। শনিবার সেখানে দাম করে জানা গেল, কেজি প্রতি টম্যাটো ৫০-৬০ টাকা, সিম ৮০-১০০ টাকা, মুলো ২৫-৩০ টাকা, কুমড়ো ২০-২৫ টাকা, আলু ২০ টাকা, লঙ্কা ৬০-৭০ টাকা, কাঁচা পেঁপে ১০ টাকা, ঢ্যাঁড়শ ৪০ টাকা, বেগুন ৪৫-৫০ টাকা করে বিক্রি হয়েছে। বাঁধা কপি ২৫ টাকা, পটল ৩০ টাকা কিলো, বরবটি ৪০ টাকা, সজনে ডাঁটা ২০০ টাকা, লাউ ১৫ টাকা পিস, লাল শাক এক আঁটি ৮ টাকা, ফুলকপি এক আঁটি ১৫ টাকা পিস দরে ক্রেতারা কিনেছেন।

শ্রীকৃষ্ণ ঘড়ামি নামে এক আনাজ বিক্রেতা জানান, গত বছর এ সময়ে আনাজের যা মূল্য ছিল তার থেকে এ বার মূল্য অনেকটাই বেড়েছে। কেনাকাটাও কমিয়েছেন অনেকেই। এ বার বাজারে বেগুনের জোগান চাহিদার তুলনায় কম বলে বিক্রেতারা জানিয়েছেন। গত বছর এ সময়ে বেগুন প্রতি কেজি বিক্রি হয়েছিল, ২০-২৫ টাকা। এ বার দাম ৪৫-৫০ টাকা। পটল গত বছর বিক্রি হয়েছিল ২০ টাকা কেজি দরে। লঙ্কা ছিল ২০-২৫ টাকা কেজি। সজনের ডাঁটা ছিল ১০০-১২০ টাকা কেজি। বাঁধাকপি, লাউ, কাঁচকলা, পেঁয়াজ রসুন সব কিছুরই মূল্য অনেকটাই বেশি। গত বছর উচ্ছে বিক্রি হয়েছে, ২০ টাকা কেজি। এ বার তা বেড়ে হয়েছে ৩০ টাকা। একমাত্র আলুর দাম গত বছরের মতো রয়েছে।

Advertisement

বনগাঁ মহকুমায় প্রচুর আনাজ চাষ হয়। স্থানীয় বাজারের চাহিদা মিটিয়ে তা রাজ্যের ও দেশের বিভিন্ন এলাকায় রফতানি হয়। এখানকার মানুষের বাইরের আনাজের উপরে নির্ভর করতে হয় না। তা হলে এ বার এই সময়ে আনাজের মূল্য এত বেশি কেন?

বনগাঁর কয়েক জন আনাজ বিক্রেতা বলেন, ‘‘পুজোর সময় থেকে হঠাৎ করে ঝড় বৃষ্টিতে এ বার আনাজ চাষে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ফুল ঝরে গিয়েছে। গোড়ায় জল জমে গাছ পচে গিয়েছে। ফলে উৎপাদন কমে গিয়েছে। বাজারে জোগান কম। তাই দাম বেশি।’’

উত্তর ২৪ পরগনা জেলার উপ কৃষি অধিকর্তা (প্রশাসন) অরূপ দাস বলেন, ‘‘এ বছর পর্যাপ্ত বৃষ্টির অভাব ছিল। সম্প্রতি বৃষ্টিতে বনগাঁ মহকুমায় আনাজ চাষ ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার কথা নয়। সামান্য কিছু নিচু জমির আনাজ ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে। তবে বাজারে আনাজের মূল্য বাড়ার এটাই একমাত্র কারণ নয়। আরও অন্য কারণ থাকতে পারে।’’ অনেকেই মনে করছেন, কৃত্রিম ভাবে অভাব তৈরি করে দাম বাড়ানোর চেষ্টা করা হচ্ছে। জয়নগরে দুর্গাপুজোর পর এ বার লক্ষ্মীপুজোর বাজারেও মন্দার ছাপ। লক্ষ্মীপুজোর আগের বিকেলেও কাঙ্খিত ভিড় নেই অধিকাংশ বাজারেই। হতাশ ব্যবসায়ীরা।

শনিবার বিকেলে জয়নগর এলাকার অন্যতম ব্যস্ত বাজার দক্ষিণ বারাসতের গোরেরহাটে হাতে গোনা ক্রেতা ছিলেন। এই বাজারে প্রায় তিরিশ বছর ধরে দশকর্মার দোকান চালাচ্ছেন পিন্টু পাল। হতাশ পিন্টু বলেন, ‘‘লক্ষ্মীপুজোর আগের দিন দোকান সামলাতে গিয়ে খাওয়ার সময়টুকু পেতাম না। এ বার কোথায় কী! তেমন ক্রেতাই নেই। দশকর্মার পাশাপাশি মাটির ঘট, প্রদীপ তুলেছিলাম প্রচুর। সবই পড়ে রয়েছে।’’

দশকর্মার পাশাপাশি লক্ষ্মীপুজোয় প্রচুর চাহিদা থাকে ফলের। কিন্তু এ বার সেটাও কম বলে জানাচ্ছেন ফল ব্যবসায়ীরা। অনিয়মিত বৃষ্টির জন্যই বাজারে আনাজের এই হাল হয়েছে বলে মনে করেন ব্যবসায়ীরা।

ভাঙড়ের বিজয়গঞ্জ, প্রাণগঞ্জ, ঘটকপুকুর, শোনপুর, পোলেরহাট-সহ বিভিন্ন বাজার বেশির ভাগই ফাঁকা। পুজোর আগে আপেলের দাম প্রতি কেজি ১৫০ টাকা, নাসপাতি ৭০ টাকা কেজি, শশা ৪০ টাকা কেজি, কমলালেবু প্রতি পিস ১৫ টাকা, খেজুর প্রায় প্রতি কেজি ৩৫০ টাকা, আখ প্রায় ৩০ টাকা পিস, নারকেল প্রতি পিস প্রায় ৪০ টাকা, টম্যাটো প্রায় প্রতি কেজি ৫০ টাকা, কাঁকরোল ৪০ টাকা প্রতি কেজি, পটল ৪০ টাকা প্রতি কেজি, বেগুন ৩০ টাকা প্রতি কেজি, ঝিঙে ৪০ টাকা প্রতি কেজি, ঢ্যঁড়স ৪০ টাকা প্রতি কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। এ বিষয়ে ভাঙড়ের কাশীপুরের বাসিন্দা শ্রেয়া ঘোষ বলেন, ‘‘গতবারের তুলনায় এ বছর জিনিসপত্রের দাম আগুন। আগের বারের তুলনায় এ বছর পুজোর বাজেট অনেকটাই বাড়াতে হয়েছে। না হলে পুজো করা সম্ভব হত না।’’অন্য বছরের তুলনায় এ বার লক্ষ্মী পুজোর বাজার যথেষ্ট ফাঁকা ক্যানিং, বাসন্তী, গোসাবায়। পুজোর আগের দিন ও কার্যত ঠাকুর, ফল, ফুল, মালার দোকান সাজিয়ে খরিদ্দারের অপেক্ষায় বসে আছেন দোকানদারেরা। হাতে গোনা দু’চারজন ক্রেতা ছাড়া অন্য বছরের মতো উপছে পড়া ভিড় নেই বাজারগুলিতে।

ক্যানিং বাজারে প্রতি বছর লক্ষ্মী পুজোর সময়ে ঠাকুর বিক্রি করেন সুজয় পাল, মিলন পাল। এ বার অন্য বছরের তুলনায় এক একজন প্রায় একশো, দেড়শো করে ঠাকুর কম মজুত করেছেন। সুজয় বলেন, “এ বার বাজার খারাপ হবে আগেই বুঝেছিলাম। তাই কম পরিমাণ ঠাকুর মজুত করেছিলাম। এখনও তেমন বাজার জমেনি। বেশির ভাগ ঠাকুর এখনও বিক্রি হয়নি।’’ ঠাকুর বিক্রেতাদের মতো একই অবস্থা ফল, ফুলের দোকানদারদের। মন্দার ছাপ পড়েছে ফুলের বাজারেও। সেখানেও খরিদ্দারের দেখা নেই সে ভাবে। তবে সকলেই আশা করছেন রবিবার সকালে হয় তো একটু ভাল বাজার পাওয়া যাবে।

—তথ্য সহায়তা: সীমান্ত মৈত্র, সামসুল হুদা, সমীরণ দাস ও প্রসেনজিৎ সাহা

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন