বিসর্জনের পরেই শুরু পায়েস উৎসব

প্রতিমা বিসর্জনের পরে সারি দিয়ে বসে পেট পুরে খাওয়া হয় পায়েস। বাগদার কুলিয়া দক্ষিণপাড়া গ্রামের মানুষ তেরো বছর ধরে এই নিয়ম পালন করে চলেছেন। দ্বাদশীতে স্থানীয় কোদালিয়া নদীতে প্রতিমা বিসর্জন দেওয়ার পরে সন্ধ্যাতেই পায়েস উৎসবে মেতে ওঠেন গোটা গ্রামের মানুষ।

Advertisement

সীমান্ত মৈত্র

বনগাঁ শেষ আপডেট: ১৩ অক্টোবর ২০১৬ ০২:৪৬
Share:

উৎসবে মেতেছে গ্রাম। ছবি: নির্মাল্য প্রামাণিক।

প্রতিমা বিসর্জনের পরে সারি দিয়ে বসে পেট পুরে খাওয়া হয় পায়েস। বাগদার কুলিয়া দক্ষিণপাড়া গ্রামের মানুষ তেরো বছর ধরে এই নিয়ম পালন করে চলেছেন।

Advertisement

দ্বাদশীতে স্থানীয় কোদালিয়া নদীতে প্রতিমা বিসর্জন দেওয়ার পরে সন্ধ্যাতেই পায়েস উৎসবে মেতে ওঠেন গোটা গ্রামের মানুষ। শুরু হয় বিজয়ার প্রণামের ঘটা। সঙ্গে চলে পায়েস খাওয়া। মণ্ডপের কাছেই মাটিতে চট পেতে বসে কলা পাতায় দুধের পায়েস দেওয়া হয়। ছোট থেকে বড় সবাই মিলে সেখান বসেই পায়েসের স্বাদ নেন।

গ্রামটি ভারত-বাংলাদেশ সীমান্তের শেষ প্রান্তে অবস্থিত। গ্রামে মোট ২৭টি পরিবারের বাস। বেশির ভাগই চাষি। কেউ কেউ আবার খেত মজুর বা দিন মজুরির কাজ করেন। সরকারি চাকরিজীবীও আছেন। কর্মসূত্রে যাঁরা বাইরে থাকেন তাঁরাও পুজোর সময় চলে আসেন। পুজোর পাশাপাশি চলে বিএসএফের নজরদারিও। যাতায়াতেও কড়া নজরদারি থাকে।

Advertisement

পুজোর আগে এলাকায় একবার বন্যা হয়েছিল। সে সময়ে খেতগুলি সব জলের তলায় চলে গিয়েছিল। ক্ষয়ক্ষতিতে গ্রাম ডুবে গিয়েছিল। তখনই গ্রামের মানুষ সকলে মিলে সিদ্ধান্ত নেন দুর্গাপুজো করার। তারপর থেকেই পুজো হয়ে আসছে।

গ্রামের একদিকে স্থানীয় কোদালিয়া নদী। নদীর ও পারে বাংলাদেশের মহেশপুর থানার মাঠলিয়া গ্রাম। প্রত্যেক বছর বিসর্জনের সময় ও পারে বাংলাদেশিরাও জড়ো হন। গ্রামের বাসিন্দারা জানান, অতীতে দেবীর বিসর্জনে ও পার বাংলার মানুষেরাও সামিল হতেন। কিন্তু এখন সীমান্তে কড়াকড়ি বেশি হওয়ায় তা সম্ভব হয় না। দূর থেকেই ও পার বাংলার মানুষ বিসর্জন দেখেন।

পুজোর আয়োজনে তেমন ব্যপকতা নেই ঠিকই। কিন্তু অন্তর দিয়ে মাকে এই গ্রামের মানুষ আগলে রেখেছেন এক যুগ ধরে। এ বার পুজোর বাজেট ছিল ৬০ হাজার টাকা। স্থানীয় বাসিন্দা সঞ্জয় মণ্ডল, তাপস রায় বলেন, ‘‘পুজোর সময়ে আমরা এখানে থাকবই। গ্রামের পুজোর টানটাই আলাদা। তা ছেড়ে থাকা সম্ভব নয়। গ্রামের এই কয়েকটি পরিবারের টাকাতেই পুজো হয়। বাইরে থেকে কোনও সাহায্য নেওয়া হয় না।’’ পুজোর পাশাপাশি, ষষ্ঠী থেকে দশমী পর্যন্ত মঞ্চ বেঁধে চলে বিভিন্ন সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। বিএসএফের জওয়ানেরাও পুজোতে এসে আনন্দ করেন। আরতি খাঁ নামে এক প্রৌঢ়া বলেন, ‘‘গ্রামের পুজোর আয়োজনটা আমাদের কাছে সব থেকে বেশি গুরুত্ব। নতুন জামা কাপড় না হোক, পুজো আমাদের করতেই হবে।’’

তবে ষষ্ঠী নয় মহালয়ার দিন থেকেই এখানে উৎসব শুরু হয়ে যায়। মহালয়ার দিন বাড়িতে কেউ রান্না করেন না। সকলে মিলে খিচুড়ি রান্না করে খাওয়া হয়। উৎসবের দিনগুলিতে চলে হাঁড়িভাঙা, শঙ্খ বাজানোর মতো নানা প্রতিযোগিতা।

তবে প্রত্যন্ত গ্রামের ওই পুজোকে আলাদা করে দিয়েছে পায়েস উৎসব। বুধবার সকালে গ্রামে গিয়ে দেখা গেল মণ্ডপের কাছেই মাটি খুঁড়ে উনুন তৈরি করা হয়েছে। গ্রামের মানুষ নিজেরাই জ্বালানি সংগ্রহ করে আনছেন। গ্রামে অনেকের বাড়িতেই গরু আছে। তাঁরা পায়েস রান্নার জন্য বিনা পয়সায় দুধ দেন। বাইরে থেকেও অবশ্য কিছু দুধ কিনতে হয়। গ্রামের অধীর সাঁতরা, শঙ্কর খাঁ, সুধীর সাঁতরা জানান, এই সময় গ্রামে অতিথি এলে তাঁকেও পায়েস না খাইয়ে ছাড়া হয় না।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন