Rain Water Harvesting

Rain water Harvest: বৃষ্টির জল ধরে মেটাতে হচ্ছে পানীয় জলের চাহিদা

জল-সঙ্কটে জেরবার দুই জেলার বহু এলাকা। অনেক জায়গাতেই জল কিনে খেতে হচ্ছে সাধারণ মানুষকে। বৃষ্টির জল ধরে রেখে পান করা হচ্ছে কোথাও কোথাও।

Advertisement

নিজস্ব প্রতিবেদন

বসিরহাট শেষ আপডেট: ৩১ অগস্ট ২০২১ ০৭:৫৪
Share:

জল-যন্ত্রণা: এ ভাবেই বৃষ্টির জল ধরে রেখে পান করছেন গ্রামবাসীরা। হিঙ্গলঞ্জের কালীতলা পঞ্চায়েত এলাকায়। ছবি: নির্মল বসু।

দুই জেলার বিভিন্ন এলাকায় দিন দিন বাড়ছে পানীয় জলের সমস্যা। জেলার গ্রামীণ এলাকাগুলির অনেক জায়গাতেই পাইপলাইনে জল সরবরাহের ব্যবস্থা নেই। পানীয় জলের জন্য ভরসা নলকূপ। কিন্তু ভূগর্ভস্থ জলস্তর কমে যাওয়ায় নলকূপে জল মেলে না বহু জায়গায়। সমস্যা তীব্র হয় গরম কালে। এই পরিস্থিতিতে দুই জেলা জুড়েই দিকে দিকে গড়ে উঠেছে বেআইনি পানীয় জলের কারবার। যন্ত্রের সাহায্যে মাটির নীচের জল বিপুল ভাবে তুলে বোতল বা জার বন্দি করে বিক্রি করা হচ্ছে। এতে জলস্তর আরও কমছে। বাড়ছে বিপদ।

Advertisement

সম্প্রতি বসিরহাট মহকুমার হিঙ্গলগঞ্জের কালীতলা পঞ্চায়েত এলাকায় গিয়ে দেখা গেল পানীয় হিসেবে ব্যবহারের জন্য বৃষ্টির জল ধরে রাখছেন এলাকার মানুষ। স্থানীয়রা জানান, কালীতলা পঞ্চায়েতের সামসেরনগর-সহ বিভিন্ন এলাকায় পানীয় জলের সমস্যা দীর্ঘদিন ধরেই। গত কয়েক মাস একেবারেই জল মিলছে না বলে অভিযোগ। এই পরিস্থিতিতে জল কিনে খেতে বাধ্য হচ্ছেন অনেকে। ১০-১৫ কিলোমিটার দূরে যোগেশগঞ্জ বাজারে জার বন্দি জল মিলছে। সেই জল এনে খাচ্ছেন অনেকে। যাঁদের কিনে খাওয়ার সামর্থ্য নেই, তাঁরা বৃষ্টির জল ধরে রাখছেন। মূলত ফাঁকা জায়গায় বা বাড়ির ছাদে বড় পরিষ্কার কাপড় টাঙিয়ে রাখছেন তাঁরা। কাপড়ের নীচে বসিয়ে রাখছেন বড় পাত্র। বৃষ্টির জল চুঁইয়ে জমা হচ্ছে ওই পাত্রে। কাপড়টি কাজ করছে ছাঁকনির মতো। সেই জলই রান্না এবং পান করার কাজে ব্যবহার করছেন গ্রামবাসীরা। সামসেরনগরের বাসিন্দা সুভাষ মণ্ডল, রিজিয়া খাতুনরা জানান, অধিকাংশ জায়গাতেই নলকূপে জল মেলে না। পাইপলাইনে জল সরবরাহ শুরু হলেও, তা নিয়মিত নয়। সংশ্লিষ্ট দফতরকে জানিয়েও সুরাহা হচ্ছে না।

প্রশাসন ও স্থানীয় সূত্রের খবর, পঞ্চায়েতের তরফে পারঘুমটি গ্রামে আটখানা পাম্প বসিয়ে পাইপলাইনের মাধ্যমে জল সরবরাহ শুরু হয়েছিল। পরে সামসেরনগর হাইস্কুলের কাছে আরও একটি পাম্প বসানো হয়। এতে জলসঙ্কট মেটে। কিন্তু বর্তমানে ৯টি পাম্পের মধ্যে ৬টি অকেজো হয়ে পড়ে রয়েছে। ফলে পঞ্চায়েতের বহু এলাকায় পানীয় জল পৌঁছচ্ছে না। স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, পাইপলাইনে জল সরবরাহ দেখভালের জন্য প্রায় ১৮ জন কর্মী নিয়োগ করা হয়েছিল। কিন্তু তাঁদের বেতন দেওয়া হয় না বলে অভিযোগ। ফলে দেখভালের কাজ ঠিক মতো হচ্ছে না। এর জেরেই পাম্পগুলি অকেজো হয়ে পড়েছে। কালীতলা পঞ্চায়েতের প্রধান দীপ্তি মণ্ডলের স্বামী শ্যামল মণ্ডল বলেন, “সামসেরনগর এলাকার পাম্প খারাপের কারণে সেখানকার মানুষ পানীয় জল পাচ্ছেন না। যত দ্রুত সম্ভব পাম্প মেরামত করার জন্য সংশ্লিষ্ট দফতরকে বলা হয়েছে।”

Advertisement

দক্ষিণে ক্যানিং, বাসন্তী-সহ বিভিন্ন এলাকায় জলকষ্টের ছবিটা প্রায় একই। এইসব এলাকায় অধিকাংশ জায়গাতেই পাইপলাইনে জল সরবরাহের ব্যবস্থা নেই। পানীয় জলের জন্য নলকূপই ভরসা সাধারণ মানুষের। গ্রামে পর্যাপ্ত নলকূপও রয়েছে। কিন্তু অভিযোগ, বছরের একটা বড় সময়ে নলকূপে জল মেলে না। স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, সমস্যা শুরু হয় শীতের শেষ দিক থেকে। তখন থেকেই জলস্তর কমতে শুরু করে। এরপর গরমে একেবারেই জল মেলে না কোনও কোনও জায়গায়। পরে বর্ষা মানলে পরিস্থিতি কিছুটা স্বাভাবিক হয়। ক্যানিংয়ের বাসিন্দা সুস্মিতা মুখোপাধ্যায়, মাধব মণ্ডলরা জানান, গরমের সময় পানীয় জলের চাহিদা খুবই বাড়ে। কিন্তু সে সময়েই জল মেলে না। ফলে জল কিনে খাওয়া ছাড়া উপায় থাকে না।

পানীয় জলের এই সঙ্কট থেকে মুক্তি মিলবে কোন পথে, সেটাই চিন্তা দুই জেলার বহু মানুষের। (চলবে)

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন