Rail Accident

Rail Accident: ট্রেনের ধাক্কায় পর পর মৃত্যু, তবুও হুঁশ ফেরেনি অনেকের

রেললাইনের উপরে বা পাশে জামা-কাপড় রোদে শুকোতে দেওয়া, ঘুঁটে দেওয়া, স্নান করা, গল্পগুজব করা চলছেই।

Advertisement

সীমান্ত মৈত্র  

হাবড়া শেষ আপডেট: ১৩ নভেম্বর ২০২১ ১০:২৮
Share:

বিপজ্জনক: রেললাইনের ধারে কাপড় শুকোতে দেওয়া হয়েছে। ছবি: সুজিত দুয়ারি।

ট্রেনের ধাক্কায় পর পর মৃত্যুর ঘটনার পরেও রেললাইনের পাশে বসবাস করা মানুষদের মধ্যে সচেতনতার তেমন লক্ষণ চোখে পড়ছে না।

Advertisement

কয়েক দিনের মধ্যে বনগাঁ-শিয়ালদহ শাখায় ট্রেনের ধাক্কায় এক শিশু, এক নাবালক ও এক তরুণের মৃত্যু হয়েছে। অশোকনগরের কাঞ্চনপল্লি এলাকায় রেললাইনে বসে কানে হেডফোন গুঁজে মোবাইলে গেম খেলতে গিয়ে মৃত্যু হয়েছে দু’জনের। ট্রেনের হর্ন তারা শুনতে পায়নি। কয়েকদিন আগে ট্রেনের ধাক্কায় মৃত্যু হয়েছে হাবড়ার নেহরুবাগ কলোনির বাসিন্দা বছর দু’য়েকের এক শিশুরও।

নেহরুবাগ কলোনির বাসিন্দা পাখি দাস বিকেলে বাড়ির পাশে দু’টি রেললাইনের মাঝে বসে বাসন মাজছিলেন। মেয়ে রাখি ঘরে ঘুমোচ্ছিল। ঘুম ভেঙে মাকে দেখতে না পেয়ে দু’বছরের রাখি ঘরের বাইরে চলে আসে। রেললাইনের মাঝে মাকে দেখে সেখানে যাচ্ছিল। বনগাঁ-শিয়ালদহের মধ্যে চলা একটি ট্রেনের পিছনের কামরায় তার আঘাত লাগে। ছিটকে পড়ে ছোট্ট রাখি। মারা যায়।

Advertisement

অতীতে গাইঘাটার সেকাটি রেলগেট এলাকায় ট্রেনের ধাক্কায় মৃত্যু হয় বৃদ্ধ পরেশ মজুমদার ও তিন বছরের শিশু শ্রদ্ধা বসুর। ঘটনার দিন দুপুরে রেললাইনের পাশে গামলায় জল নিয়ে স্নান করছিলেন পরেশ। তখনই সকলের নজর এড়িয়ে শিশুটি পৌঁছে গিয়েছিল রেললাইনের কাছে। তাকে বাঁচাতে গিয়েছিলেন পরেশ। ট্রেনের ধাক্কায় দু’জনেরই মৃত্যু হয়।

গুমা সুকান্তপল্লি এলাকার একটি শিশু হামাগুড়ি দিয়ে পৌঁছে গিয়েছিল রেললাইনের ধারে। কেউ টেরই পাননি। মৃত হয়েছিল সুরজিৎ সিংহ নামের ওই শিশুরও।

বনগাঁ-শিয়ালদহ শাখায় বনগাঁ থেকে বামনগাছি পর্যন্ত ১৩টি স্টেশন আছে। রেলপথের দূরত্ব প্রায় ৬০ কিলোমিটার। রেললাইনের দু’পাশে বহু পরিবার বসবাস করেন। তাঁরা রেললাইনের উপরে বা পাশে জামা-কাপড় রোদে শুকোতে দেন। ঘুঁটে দেন। স্নান করেন। গল্পগুজব করেন। খেলাধুলাও চলে। পাশ দিয়ে দিনরাত ছুটে যায় ট্রেন। অনেক ক্ষেত্রেই রেলপাড়ের মানুষজন সে কথা মাথায় রাখেন না। তখনই ঘটে যায় দুর্ঘটনা।

কিছুদিন আগে মোবাইল নিয়ে রাতে লাইনের পাশে গল্প করার সময়ে ট্রেনের ধাক্কায় এক যুবকের মৃত্যুও ঘটেছে।

রেললাইন ধারে ঘুরে দেখা গেল, বিপজ্জনক ভাবে মানুষ লাইনের পাশে বসে, দাঁড়িয়ে রয়েছেন। অনেককেই দেখা গেল, রেললাইন বরাবর হেঁটে যাচ্ছেন। শিশুরা দৌড়ঝাঁপ করছে। এক মহিলা দুপুরে স্নান সেরে লাইনের পাশে দাঁড়িয়ে চুল আঁচড়াচ্ছিলেন। পাশ থেকে ট্রেন চলে গেল। এ ভাবে লাইনের ধারে দাঁড়ালে বিপদ হতে পারে তো! এ কথা শুনে মহিলা বললেন, ‘‘আমরা এ ভাবেই অভ্যস্ত হয়ে গিয়েছি। ভয়ের কিছু নেই।’’

রেলপাড়ের মানুষের সঙ্গে কথা বলে জানা গেল, সাংসারিক অনটনের কারণে অনেক বাবা-মাকে বাড়িতে শিশু বা ছোট সন্তানদের রেখে কাজে যেতে হয়। সব সময়ে সন্তানদের নজরে রাখা সম্ভব হয় না। এক মহিলার কথায়, ‘‘আমরা বাড়িতে না থাকলে ছেলেমেয়েদের ভাল করে বুঝিয়ে বলে যাই, তারা যেন লাইনের কাছে না যায়।’’ তবে এত কিছুর মধ্যেও শিশুরা লাইনের কাছে চলে আসে। এক মহিলা বলেন, ‘‘একদিন রান্না করছিলাম। হঠাৎ দেখি ছেলেটা উঠোনে নেই। দৌড়ে গিয়ে বাইরে থেকে ধরে আনি।’’ যুবকেরা জানালেন, মোবাইলে কথা বললেও ট্রেন নিয়ে সচেতন থাকেন। তবু ঘটে যায় দুর্ঘটনা।

বনগাঁ জিআরপি থানার তরফে মাঝে মধ্যে নানা কর্মসূচির মাধ্যমে রেলপাড়ের মানুষকে বিপদ নিয়ে সচেতন করা হয়। রেলপুলিশ জানিয়েছে, মানুষ সচেতন না হলে দুর্ঘটনা পুরোপুরি বন্ধ করা যাবে না।

কাঞ্চনপল্লি এলাকায় দুর্ঘটনায় দু’জনের মৃত্যুর পরে রেললাইনের ধারে যুবকদের আনাগোনা কমেছে বলে বাসিন্দারা জানিয়েছেন। জিআরপি নজরদারি চালাচ্ছে। অভিযোগ, বিকেল হলেই যুবকেরা এখানে মোবাইলে গেম খেলতে ও নেশা করতে জড়ো হত। দু’জনের মৃত্যুর পরে অবশ্য কেউ এলে বাসিন্দারা তাঁদের সরিয়ে দিচ্ছেন।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন