সন্ধের পরে স্কুল খুলিয়ে জানা গেল মেয়ের বয়স!

পুলিশের অবশ্য মেয়েটিকে দেখে খটকা লাগে। বয়সের খোঁজে নেমে পড়েন অফিসারেরা। শেষমেশ, সন্ধ্যার পরে মেয়েটির স্কুল খুলিয়ে ভর্তির নথিপত্র, কন্যাশ্রীর আবেদনপত্র খতিয়ে দেখা হয়। জানা যায়, মেয়ের জন্ম ২০০৩ সালে। বয়স কোনও ভাবেই আঠারো পেরোয়নি।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ২০ নভেম্বর ২০১৮ ০২:১২
Share:

—প্রতীকী ছবি।

নাবালিকার বিয়ে আটকাতে গিয়ে অপ্রস্তুত পুলিশ। মেয়ের বাবার দাবি, পাত্রীর বয়স উনিশ। কোনও বেআইনি কাজ করছেন না তিনি। কিন্তু বয়সের শংসাপত্র? সে সব নাকি বন্যার জলে ধুয়ে গিয়েছে।

Advertisement

পুলিশের অবশ্য মেয়েটিকে দেখে খটকা লাগে। বয়সের খোঁজে নেমে পড়েন অফিসারেরা। শেষমেশ, সন্ধ্যার পরে মেয়েটির স্কুল খুলিয়ে ভর্তির নথিপত্র, কন্যাশ্রীর আবেদনপত্র খতিয়ে দেখা হয়। জানা যায়, মেয়ের জন্ম ২০০৩ সালে। বয়স কোনও ভাবেই আঠারো পেরোয়নি। শেষমেশ, দীর্ঘ টানাপড়েনের পরে নাবালিকা মেয়েটির বিয়ে বন্ধ করা গিয়েছে।

সকাল ১১টা থেকে শুরু হয়েছিল যে চেষ্টা, রাত ১১টায় গিয়ে শেষ হয়েছে সেই কাজ!

Advertisement

রবিবার সকালে বনগাঁ চাইল্ড লাইনের টোল ফ্রি নম্বর ১০৯৮-এ খবর আসে, শহরের বাসিন্দা এক নাবালিকার বিয়ের কথা ওই রাতেই। খবর পেয়ে চাইল্ড লাইনের তরফে বনগাঁ থানায় বিষয়টি জানানো হয়। আইসি সতীনাথ চট্টরাজের নির্দেশে থানার অফিসার শান্তনু চক্রবর্তী পুলিশ নিয়ে নাবালিকার বাড়িতে যান। পৌঁছন চাইল্ড লাইনের প্রতিনিধিরাও।

বাড়িতে তখন বিয়ের তোড়জোড় চলছে। পুলিশ বিয়ে বন্ধ করতে বললে নাবালিকার বাবা লিখিত ভাবে জানান, মেয়ের বয়স উনিশ বছর। তাঁরা নিজেদের দায়িত্বে মেয়ের বিয়ে দিচ্ছেন। মেয়েটি লেখাপড়া করে না বলেও পরিবারের লোকজন দাবি করেন। মেয়ের বাবার বক্তব্য, বন্যায় মেয়ের সব নথিপত্র জলে নষ্ট হয়ে গিয়েছে। পুলিশ তখনকার মতো ঘটনাস্থল থেকে চলে আসে। কিন্তু কোথাও যেন একটা খটকা লেগেছিল পুলিশ কর্তাদের। বিভিন্ন সূত্রে চাইল্ড লাইনের কর্মীরা জানতে পারেন, মেয়েটি দশম শ্রেণিতে পড়ে। বয়স ১৬ বছর। ঘটনার কথা জানানো হয় বনগাঁর মহকুমাশাসক কাকলি মুখোপাধ্যায়কে।

মেয়েটি শহরেরই একটি স্কুলে পড়ে বলে জানা যায়। সেই মতো মহকুমাশাসকের তৎপরতায় সন্ধ্যায় ওই স্কুলের অফিস খুলিয়ে মেয়েটির স্কুলে ভর্তির নথিপত্র ও কন্যাশ্রীর আবেদনপত্র বের করা হয়।

মহকুমাশাসক আইসি ও বনগাঁর এসডিপি অনিলকুমার রায়কে মেয়েটির জন্ম-সংক্রান্ত নথি পাঠিয়ে বিয়ে বন্ধ করতে বলেন।

রাতে ফের শান্তনু পুলিশ নিয়ে ওই বাড়িতে পৌঁছন। নথিপত্র দেখালে নাবালিকার পরিবারের লোকজন ঘাবড়ে যান। ‘ভুল হয়েছে’ বলে কাকুতি-মিনতি শুরু করেন। মেয়েটির বাবা পুলিশের কাছে লিখিত মুচলেকা দিয়ে জানান, না বুঝে বিয়ে দিচ্ছিলেন। আঠারো বছর বয়স না হলে মেয়ের বিয়ে দেবেন না।

বাড়িতে তখন নিমন্ত্রণদের ভিড়। তাঁরা অবশ্য রাতে খাওয়া-দাওয়া সেরেই ফিরেছেন। ফের যাতে বিয়ে না হয়, সে জন্য রাতভর পুলিশি নজরদারি ছিল।

এসডিপিও বলেন, ‘‘যে সূত্রেই আমাদের কাছে নাবালিকা বিয়ের খবর আসুক, আমরা গুরুত্ব দিয়ে দেখি। রবিবার রাতেও বিয়েটা বন্ধ করতে পেরেছি। মানুষের সচেতনতা বাড়ানোর জন্য আরও কর্মসূচি নেওয়া হচ্ছে।’’

মহকুমাশাসকের কথায়, ‘‘পরিবার প্রথমে মানতেই রাজি ছিলেন না মেয়েটি নাবালিকা। স্কুলে পড়ে না বলেও জানায়। একের পর এক সত্য গোপন করেন ওঁরা। সচেতনতার অভাবই এর কারণ।’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement