—ফাইল চিত্র।
সোশ্যাল মিডিয়াতে অশান্তি ছড়ানোর অভিযোগে রবিবার রাতে হাবড়া থানার পুলিশ গ্রেফতার করেছিল এক কলেজ পড়ুয়া নাবালককে। এই গ্রেফতার নিয়ে এখন অস্বস্তিতে পুলিশ মহলই। পুলিশের সাফাই, ওই নাবালকের বিরুদ্ধে এলাকায় জনরোষ তৈরি হয়ে গিয়েছিল। বাইরে থাকলে তার নিরাপত্তার আশঙ্কা ছিল। তাই তার নিরাপত্তার স্বার্থে তাকে ‘সেফ কাস্টডি’-তে নেওয়াটা জরুরি ছিল।
কিন্তু তার জন্য গ্রেফতারির কি দরকার ছিল তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন এলাকার মানুষ। পুলিশের দাবি, আদালতে পুলিশের তরফে জামিনের বিরোধিতা করা হয়নি। বরং তাকে পরিবারের লোকজনের হাতে তুলে দেওয়ার অনুরোধ করা হয়েছিল। পুলিশের একটি সূত্র জানাচ্ছে, বিধাননগর জুভেনাইল আদালতের বিচারকও তাই মনে করেছেন। বাড়িতে বা এলাকায় থাকলে কিশোরের নিরাপত্তার আশঙ্কা রয়েছে। তাই তাকে ২২ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত বারাসতের একটি হোমে রাখা হয়েছে।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, কিছু দিন আগে জেলার বাদুড়িয়াতেই সোশ্যাল মিডিয়াতে একটি উসকানিমূলক পোস্টকে কেন্দ্র গোটা বসিরহাট মহকুমা উত্তপ্ত হয়ে উঠেছিল। সেটিও পোস্ট করেছিল অল্প বয়সের একটি ছেলে। তাকেও পুলিশ গ্রেফতার করেছিল। পুলিশ জানিয়েছে, বাদুড়িয়ার ঘটনার পর থেকে সোশ্যাল মিডিয়াতে উসকানিমূলক পোস্ট দেখলে এবং তার জেরে আইনশৃঙ্খলা অবনতির সম্ভবনা তৈরি হলে কড়া পদক্ষেপ করবে পুলিশ। হাবড়ার ক্ষেত্রেও জনরোষ তৈরি হয়েছিল নাবালকের বিরুদ্ধে। তাই তাকে ধরা হয়েছে। যদিও এলাকার মানুষের বক্তব্য, দু’টি পোস্টের ধরন সম্পূর্ণ আলাদা। দু’টি এক করে পুলিশ ভুল কাজ করেছে। মুখ্যমন্ত্রী নির্দেশের পরে এখন পুলিশ নিজেদের ভুল বুঝতে পেরে উল্টো সুর গাইছে।
বনগাঁয় শিক্ষকের বাড়িতে ভাঙচুরের ঘটনায় পুলিশ সোমবার নিজেই মামলা রুজু করেছে। পুলিশ জানিয়েছে, কারা ওই শিক্ষকের বাড়িতে ভাঙচুর করেছে বা শিক্ষকের বাড়িতে চড়াও হয়েছিল তা জানতে সিসি ক্যামেরার ভিডিও ফুটেজ দেখে দোষীদের শনাক্ত করার কাজ শুরু হয়েছে। বনগাঁ থানার ১০ জন সাব ইন্সপেক্টরের মধ্যে ৮ জন সোমবার অন্যত্র বদলি হয়ে গিয়েছেন। ফলে এই মুহূর্তে তদন্তকারী অফিসার হাতে গোনা দুই। সে কারণেও তদন্তে গতি একটু কম বলে পুলিশের একটি সূত্র জানাচ্ছে। শীঘ্রই বদলি হওয়া অফিসারদের বদলে এখানে অফিসার নিয়োগ হবে। তখন তদন্তে আরও গতি আসবে।
পুলিশের এক কর্তা বলেন, ‘‘চিত্রদীপ সোম নামের ওই শিক্ষক বাড়ি ফিরতে চাইলে তাঁকে নিরাপত্তা দেওয়া হবে।’’ চিত্রদীপ এখন অনেকটাই স্বাভাবিক। তিনি দ্রুত বাড়ি ফিরতে চান। তাঁর কথায়, ‘‘ফেসবুকে নিজের মতামত জানানোর পর থেকে যে সব হুমকি ফোন আসছিল তা এখন বন্ধ হয়ে গিয়েছে। সোশ্যাল মিডিয়াতেও আক্রমণ অনেকাটাই কমে গিয়েছে।’’
রবিবার তিনি সোশ্যাল মিডিয়াতে পুলওয়ামাতে নিহত জওয়ানদের কেন শহিদ বলা হবে না তা নিয়ে মতামত পোস্ট করেন। তারপর থেকে তার বাড়িতে তিন দফায় লোকজন আলাদা আলাদা ভাবে চড়াও হয়। একটি দল ভাঙচুরও চালায়। একটি দল ক্ষমা চাইতে বাধ্য করে। নিরাপত্তার স্বার্থে তিনি বাড়ি ছেড়ে কলকাতায় গিয়ে আশ্রয় নেন। সোশ্যাল মিডিয়াতেও তাঁকে হুমকি ও গালিগালাজ করা হচ্ছিল। এখন তা কার্যত বন্ধ হয়েছে। এলাকার অনেক মানুষও হামলাকারীদের বিরুদ্ধে
বক্তব্য রাখছেন।