থানা চত্বরে বসে ছবি আঁকল ছোটরা

পুলিশ অফিসারের সামনে এ ঘর ও ঘর দাপিয়ে বেড়াচ্ছিল বাচ্চাগুলো। থানা না অনুষ্ঠান বাড়ি, দেখে বোঝার উপায় নেই। ‘‘একটু জল দেবে?’’ এক খুদের আবদারে শশব্যস্ত হয়ে জলের গ্লাস হাতে এগিয়ে এলেন এক পুলিশ কাকু।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

বসিরহাট শেষ আপডেট: ৩০ অক্টোবর ২০১৬ ০১:৩০
Share:

ভরসা থাকুক...। ছবিটি তুলেছেন নির্মল বসু।

পুলিশ অফিসারের সামনে এ ঘর ও ঘর দাপিয়ে বেড়াচ্ছিল বাচ্চাগুলো। থানা না অনুষ্ঠান বাড়ি, দেখে বোঝার উপায় নেই। ‘‘একটু জল দেবে?’’ এক খুদের আবদারে শশব্যস্ত হয়ে জলের গ্লাস হাতে এগিয়ে এলেন এক পুলিশ কাকু। একটু রিভলভারটা দেখাও না? আর এক খোকার আবদারে কর্তব্যরত অফিসারটি বেশ দ্বিধায় পড়ে গেলেন। অপ্রস্তুত হাসিতে বললেন, ‘‘এটা কিন্তু খেলার জিনিস নয়।’’ পুলিশ কাকুদের হাত ধরে ছোটদের টয়লেটেও যেতে দেখা গেল। দীপাবলি উপলক্ষে, শনিবার এমনই অপরিচিত নানা দৃশ্যের সাক্ষী থাকল বসিরহাট থানা।

Advertisement

কিন্তু ঘটনাটা কী?

জানা গেল, ‘সেফ লাইফ সেভ ড্রাইভ’— এই বিষয়ের উপরে ছবি আঁকার প্রতিযোগিতার আয়োজন করা হয়েছিল থানায়। কিশোর-কিশোরীরা তাতে যোগ দেয়। ছোটদের দু’টি বিভাগে যেমন খুশি আঁকা প্রতিযোগিতারও ব্যবস্থা ছিল। উদ্যোক্তা, বসিরহাট পুলিশ।

Advertisement

এই উদ্যোগকে এক বাক্যে সাধুবাদ জানিয়ে গিয়েছেন জেলার পুলিশ সুপার ভাস্কর মুখোপাধ্যায়, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর) আনন্দ রায়, মহকুমাশাসক নীতেশ ঢালি, এসডিপিও শ্যামল সামন্ত, বসিরহাট দক্ষিণের বিধায়ক দীপেন্দু বিশ্বাস, পুরপ্রধান তপন সরকার, শিল্পী জহর দাশগুপ্ত, তপন পাঠকরা।

ভাস্করবাবু বলেন, ‘‘সামনে ফুটে থাকা অসংখ্য ফুলেদের (শিশু) নিয়ে ছবি আঁকার এই উদ্যোগ প্রশংসার দাবি রাখে। রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের উদ্যোগের শরিক হয়ে আমরা সকলকে সঙ্গে নিয়ে দুর্ঘটনামুক্ত জেলা গড়ে তুলতে চাই। এ জন্য সবার আগে এগিয়ে আসতে হবে অভিভাবকদের।’’ পুলিশ সুপারের মতে, মা তাঁর সন্তানকে, স্ত্রী তাঁর স্বামীকে হেলমেট পরে মোটর বাইক চালানোর পরামর্শ দিন। কেউ যেন মদ খেয়ে কিংবা মোবাইল কানে বাইক না চালান, সে কথা বাড়ির লোকই আগে বলুক। তারপরে সরকারি প্রচার, আইন-শৃঙ্খলা তো আছেই। দীপেন্দুবাবু বলেন, ‘‘উৎসবের আনন্দে গা ভাসিয়ে দেওয়ার পাশাপাশি মানুষের জীবন সুরক্ষায় পুলিশের এমন উদ্যোগ এই প্রথম দেখলাম। মুখ্যমন্ত্রীও নিঃসন্দেহে এমন কাজের তারিফ করবেন।’’

বসিরহাট থানার উদ্যোগে মহকুমার বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আসা ২৬৮ জন শিশু তিনটি বিভাগে প্রতিযোগিতায় যোগ দিয়েছে এ দিন। আইসি দেবাশিস চক্রবর্তীর প্রচেষ্টায় যোগদানকারী সব শিশুদের জন্য স্মারক, মিষ্টি, ফুলঝুরি উপহার দেওয়ার ব্যবস্থা ছিল।

সঙ্গিনীকে নিয়ে হেলমেটবিহীন মোটর বাইক চালিয়ে পুলিশের হাতে ধরা পড়ার ছবি এঁকে সেরা হয়েছে নদী বসু। প্রথম বিভাগে সোহানা আজমিন, দিশাণী দাস, সুবর্ণরেখা দে। দ্বিতীয় বিভাগে শ্রবণ কুণ্ডু, সন্ধিক্ষণ ঘোষ, উদ্ভব মণ্ডল এবং তৃতীয় বিভাগে অঙ্কুর পাল, ববিতা পাল, নবনীতা ঘোষরা পুরস্কৃত হয়েছে। দেবাশিসবাবু বলেন, ‘‘শিশুদের আনন্দ দেওয়ার সঙ্গে সঙ্গে সেফ ড্রাইভ সেফ লাইফ প্রচারের মধ্যে দিয়ে মানুষকে উদ্বুদ্ধ করার চেষ্টা হয়েছে। সেই সঙ্গে জনসংযোগও ছিল আমাদের উদ্দেশ্য।

অভিভাবকদের পক্ষে কাকলি ভট্টাচার্য, কণিকা বসু, কাজল মুখোপাধ্যায়রা বলেন, ‘‘শিশুদের নিয়ে পুলিশের এমন উদ্যোগ নিঃসন্দেহে প্রশংসার দাবি রাখে।’’

পুরস্কার বিতরণী পর্বে ছোট ছেলেমেয়েদের কাছে জানতে চাওয়া হয়, বড় হয়ে কে কে পুলিশ হতে চাও?

অনেকগুলো কচি হাত উপরে উঠল। এক প্রবীণ অফিসারের কথায়, ‘‘ছোটরা আমাদের মতো হতে চাইছে, দেখে ভরসা বাড়ল এই পেশার প্রতি!’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন