রাস্তাতেই নিজস্বী। —নিজস্ব চিত্র।
ছাত্র পড়িয়ে বাইকে বাড়ি ফিরছিলেন এক গৃহশিক্ষক। মাঝরাস্তায় তাঁর বাইক আটকায় পুলিশ। হেলমেট পরা সত্ত্বেও বাইক থামানোয় কিছুটা আশ্চর্যই হয়েছিলেন তিনি। ভুলটা ভাঙল পুলিশ এসে তাঁর হাতে ফুলের তোড়া তুলে দেওয়ায়। সঙ্গে মুখমিষ্টি পান। তোলা হল বাইকচালকের সঙ্গে নিজস্বীও।
রবিবার সকালে দক্ষিণ ২৪ পরগনার কাকদ্বীপ বাসস্ট্যান্ডের কাছে রাস্তায় হেলমেট পরা বাইকচালক দেখলে তাঁদের থামিয়ে এ ভাবেই সংবর্ধনার ব্যবস্থা করেছিল পুলিশ। পুলিসের এমন ভূমিকায় খুশি বাইকচালকও।
এদিন বুধাখালির বাসিন্দা শুভাশিস দাস নামে ওই গৃহশিক্ষক বলেন, ‘‘সাত বছর ধরে এই এলাকায় বাইক চালাচ্ছি। কিন্তু কোনওদিন হেলমেট পরার জন্য এমন ব্যবহার পাইনি। হেলমেট নিয়ে এই সচেতনতা বেশ ভাল লাগছে। বন্ধুদেরও বলব অবশ্যই হেলমেট পরতে।’’
এতদিন চেকিং, বিশেষ চেকিং, গাড়ির কাগজপত্র দেখানো বা ট্রাফিক আইন ভাঙা, হেলমেট না পরার জন্য বাইকআরোহীদের জরিমানা করেছে পুলিশ। এ দিনও শুভাশিসবাবু সেই ভয়ই পেয়েছিলেন। শুধু তিনি নন, ছুটির সকালে বেরিয়ে রাস্তায় এমন পুলিশি-আপ্যায়নে অনেকেই হতচকিত। কুলপির বাসিন্দা সৌমেন মাইতি গাড়ি চালাচ্ছেন প্রায় ৬ বছর। এ দিন গিয়েছিলেন কাকদ্বীপে। পুলিশের এমন আচরণ নিয়ে বললেন, ‘‘পুলিশ ধরায় ভাবলাম, বুঝি কাগজপত্র চাইবে। গাড়ির কাগজ দেখাতে যাব, এমন সময় এগিয়ে এল ফুল, চকোলেট। অবাকই হয়েছিলাম। পরে ভুল ভাঙল। বাড়তি পাওনা পুলিশকর্তাদের সঙ্গে নিজস্বী। তবে হেলমেট নিয়ে এই সচেতনতা প্রশংসনীয়। বাইক চালালে হেলমেট পরাই উচিত।’’ এ দিন কাকদ্বীপে এই অভিযানের উদ্বোধন করেন মন্ত্রী মন্টুরাম পাখিরা। ছিলেন মহকুমা পুলিশ আধিকারিক অশেষবিক্রম দস্তিদার, কাকদ্বীপ পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি বুদ্ধদেব দাস প্রমুখ।
পুলিশ সূত্রের খবর, যাঁরা যাঁরা এ দিন হেলমেট পরে বাইক নিয়ে রাস্তায় বেরিয়েছেন, তাঁদের অনেকেরই সেলফি তোলা হয়েছে। মোবাইল নম্বরও নেওয়া হয়েছে। সেই সব সেলফি স্মৃতি হিসেবে তাঁদের পাঠানো হবে। হেলমেট নিয়ে জেলা পুলিশে এই সচেতনতা অভিযান এ দিন থেকে শুরু হয়েছে। জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (পশ্চিম) চন্দ্রশেখর বর্ধন বলেন, ‘‘হেলমেট পরে বাইক চালানোর জন্য সচেতনতা তৈরির এই অভিযান চলবে। আশা করা হচ্ছে, এরকম অভিযান আরও বাইক আরোহীকে হেলমেট পরতে উৎসাহ দেবে।’’
সম্প্রতি মুখ্যমন্ত্রী নির্দেশ দিয়েছেন, হেলমেট ছাড়া পেট্রোল পাম্পে তেল মিলবে না। কিন্তু মহকুমা সদরগুলিতে এই নিয়মকে বুড়ো আঙ্গুল দেখিয়েই হেলমেট ছাড়া পেট্রোল পাম্পে তেল নেওয়া চলছিল। এ নিয়ে কড়াকড়ি শুরু হতে পাম্প মালিকেরা দাবি করেছিলেন, আগে হেলমেট নিয়ে সচেতনতা তৈরি করা হোক, তারপর নিয়ম বা কড়াকড়ি চালু হোক।
এ দিন হেলমেট ছাড়াই যাঁরা বেরিয়েছিলেন, তাঁদেরও পুলিশ বোঝান। তবে হেলমেটহীন ওই আরোহীরা ফুল, চকোলেট আর নিজস্বী মিস করেছেন।