রাজনৈতিক অস্থিরতায় সাময়িক ছেদ, ক্রিকেটে মেতে বাংলাদেশ

মাঝে আর মাত্র কয়েকটা ঘণ্টা। তার পরেই এমসিজিতে শুরু হচ্ছে ক্রিকেট বিশ্বকাপে ভারত-বাংলাদেশ কোয়ার্টার ফাইনাল। প্রতিবেশী দুই রাষ্ট্রের ক্রিকেট দলের ম্যাচ ঘিরে দু’দেশের মধ্যেই এখন উদ্দীপনা তুঙ্গে। সীমান্ত শহর বনগাঁয় এসে পৌঁছেছে বাংলাদেশিদের সেই উত্‌সাহের আঁচ। মাশরফি, রুবেল হোসেন, সাকিব, মাহমুদউল্লাহদের নাম এখন তাঁদের অনেকেরই মুখে মুখে।

Advertisement

সীমান্ত মৈত্র

পেট্রাপোল শেষ আপডেট: ১৮ মার্চ ২০১৫ ০২:৪৩
Share:

মাঝে আর মাত্র কয়েকটা ঘণ্টা। তার পরেই এমসিজিতে শুরু হচ্ছে ক্রিকেট বিশ্বকাপে ভারত-বাংলাদেশ কোয়ার্টার ফাইনাল। প্রতিবেশী দুই রাষ্ট্রের ক্রিকেট দলের ম্যাচ ঘিরে দু’দেশের মধ্যেই এখন উদ্দীপনা তুঙ্গে। সীমান্ত শহর বনগাঁয় এসে পৌঁছেছে বাংলাদেশিদের সেই উত্‌সাহের আঁচ। মাশরফি, রুবেল হোসেন, সাকিব, মাহমুদউল্লাহদের নাম এখন তাঁদের অনেকেরই মুখে মুখে।

Advertisement

তাঁরাই জানালেন হঠাত্‌ করেই জাতীয় পতাকা বিক্রি বেড়ে গিয়েছে। রাস্তাঘাট-অফিস-বাজার সর্বত্র ক্রিকেট নিয়ে আলোচনা করছেন। যাঁরা কাজের জন্য টিভির সামনে বসতে পারছেন না, তাঁরা বাড়িতে ফোন করে বা বন্ধুদের কাছ থেকে খেলার প্রতি মুহূর্তের আপডেড নিচ্ছেন। নেট সার্চ করলেও দেশের খেলার স্কোরটাই চোখ বুলিয়ে নিচ্ছেন কেউ কেউ। কোনও খেলাকে কেন্দ্র করে এত আবেগ অতীতে ও দেশে দেখা যায়নি বলেই জানালেন বাংলাদেশিরা।

এমনিতেই বিএনপি-সহ বিরোধী দলগুলির লাগাতার বন্‌ধ-অবরোধে জনজীবন বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে। কিন্তু দেশের খেলা যে দিন থাকছে, সে দিন রাজনীতি ভুলে মানুষ বসে পড়ছেন টিভির সামনে। ম্যাচের সময়ে ঢাকা-সহ দেশের বিভিন্ন শহরের রাস্তাঘাট সুনসান হয়ে পড়ছে বলেও জানালেন অনেকে। কোয়ার্টার ফাইনালে দেশের সাফল্য কামনা করে ইতিমধ্যেই শুরু হয়েছে বিশেষ নমাজ পাঠ।

Advertisement

এ বারই প্রথম বিশ্বকাপ কোয়ার্টার ফাইনালে পৌঁছেছে বাংলাদেশ। ধারে-ভারে অনেকটাই এগিয়ে ভারতের টিম। যদিও বাংলাদেশিরা ইতিমধ্যেই স্বপ্ন দেখতে শুরু করেছেন, ভারতকে হারিয়ে সেমিফাইনালে ওঠার। তাঁদের কথায়, “গ্রুপ লিগে ইংল্যান্ডের মতো দলকে আমরা হারিয়েছি। কোয়ার্টার ফাইনালের কোনও দলই ছোট নয়। ফলে দল যদি নিজেদের স্বাভাবিক খেলা খেলতে পারে, তা হলে না জেতার কারণ নেই।” গোটা দেশটাই এখন ক্রিকেট-জ্বরে কাঁপছে, বলছিলেন ও পার বাংলা থেকে মঙ্গলবার সকালে পেট্রাপোল সীমান্ত পেরিয়ে এ দেশে আসা বাংলাদেশিরা। তাঁরা জানালেন, ২০১১ সালে বাংলাদেশ বিশ্বকাপের উদ্যোক্তা ছিল। কিন্তু বিশ্বকাপ নিয়ে এত উচ্ছ্বাস সে বারও দেখা যায়নি।

পেট্রাপোল বন্দরে কথা হচ্ছিল ঢাকা-কলকাতা বাসের সুপারভাইজার, ঢাকার বাসিন্দা মহম্মদ হারুন অল রশিদের সঙ্গে। তিনি নিজে সচিন-সৌরভের বড় রকম ভক্ত। ভারত-পাক ম্যাচ থাকলে এটা-ওটা কারণ দেখিয়ে ছুটি নিয়ে নেন তিনি। ২০০৭ সালে ক্যারিবিয়ান বিশ্বকাপের স্মৃতি উসকে দিয়ে রশিদ বললেন, “এমনটা নয় যে আমরা বিশ্বকাপে ভারতকে হারাতে পারেনি। ২০০৭ সালে শক্তিশালী ইন্ডিয়া টিমকে আমরা হারিয়েছিলাম। এ বার আমাদের টিম যা খেলছে, তাতে আমরা ভীষণ রকমই আশাবাদী। টিমের সকলে যদি নিজেদের যোগ্যতা অনুযায়ী খেলতে পারে, তাহলে সেমি ফাইনালে না যাওয়ার কারণ নেই।” উত্‌সাহী এমন অনেককেই পাওয়া গেল, যাঁরা শুধু কোয়ার্টার ফাইনাল নয়, সেমি ফাইনাল এমনকী ফাইনালে যাওয়ারও স্বপ্ন দেখতে শুরু করেছেন।

ক্রিকেট নিয়ে মেয়েদের উত্‌সাহ ও দিন দিন বাড়ছে। ঢাকার রোজিনা যেমন বললেন, “অতীতে ক্রিকেট নিয়ে খুব বেশি আগ্রহ ছিল না। এ বার সকলেই দেখছি ক্রিকেটে মেতে। তাই নিজেকে ধরে রাখতে পারিনি। দেশের প্রতিটি খেলা দেখেছি। আশা করছি, সেমি ফাইনালে যেতে পারব। যদিও টেকনিক্যাল বিষয়গুলি খুব বেশি বুঝি না। তবু হৃদয় বলছে, আমরা পারব।”

পেট্রাপোল বন্দরে দীর্ঘ দিন ধরেই একটি মুদ্রা বিনিময় কেন্দ্রে কর্মরত এ দেশের বাসিন্দা বাপ্পা ঘোষ। বহু বাংলাদেশির সঙ্গে তাঁর কর্মসূত্রে কথা হয়। বাপ্পাবাবু বলছিলেন, “ও দেশের অনেকেই আবার এমনিতে ভারতের সমর্থক। কিন্তু কোয়ার্টার ফাইনালে যেহেতু ওঁদের দেশের সঙ্গে খেলা, তাই এখন ওরা আর যুক্তি-তর্কের ধার ধারছেন না। সকলে এককাট্টা হয়ে নিজ দেশের সমর্থনে গলা ফাটাচ্ছেন।” চট্টগ্রামের বাসিন্দা অলোক চক্রবর্তী ও রূপক চক্রবর্তী এ দিন পেট্রাপোল বন্দরে এসেছিলেন এ দেশের এক আত্মীয় বাড়িতে বেড়াতে যাবেন বলে। বলেন, “আমরা আশাবাদী। আত্মীয়ের বাড়িতে বসেই খেলা দেখব।”

এত কিছুর মধ্যে সাময়িক স্বস্তি নেমেছে ও দেশে। ঢাকার বাসিন্দা মীর সহিদুল বা মহম্মদ আজাদ জানালেন, সব সময়ে রাজনৈতিক টালমাটাল পরিস্থিতির মধ্যেও যে দিন দেশের খেলা থাকছে, সে দিন বড় গোলমাল ঘটছে না। এটাও একটা বড় পাওনা। অনেকেরই আশঙ্কা, দেশ কোয়ার্টার ফাইনালে হেরে গেলে ফের শুরু হয়ে যাবে লাগাতার হাঙ্গামা। সেই কারণেই অনেকে চাইছেন, বাংলাদেশ আরও কয়েকটা দিন বিশ্বকাপে টিঁকে থাকুক।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন