ব্যবস্থা নেয়নি পুরসভা, বানভাসির আশঙ্কা

প্রায় দেড় মাস প্রবল জলকষ্টে ভুগছেন ডায়মন্ড হারবার পুর এলাকার বাসিন্দারা। এই পরিস্থিতিতে মঙ্গলবার রাতে নিম্নচাপের জেরে প্রবল ঝড়বৃষ্টির সঙ্গে কিছুটা স্বস্তি মিললেও ভোগান্তির আশঙ্কা থেকে মুক্তি পাচ্ছেন না পুরবাসী। কারণ, এ বছরও নিকাশি নিয়ে কোনও বড় পরিকল্পনা কার্যকর করতে পারেননি পুর কর্তৃপক্ষ।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

ডায়মন্ড হারবার শেষ আপডেট: ১৭ জুন ২০১৫ ০১:২৭
Share:

প্রায় দেড় মাস প্রবল জলকষ্টে ভুগছেন ডায়মন্ড হারবার পুর এলাকার বাসিন্দারা। এই পরিস্থিতিতে মঙ্গলবার রাতে নিম্নচাপের জেরে প্রবল ঝড়বৃষ্টির সঙ্গে কিছুটা স্বস্তি মিললেও ভোগান্তির আশঙ্কা থেকে মুক্তি পাচ্ছেন না পুরবাসী। কারণ, এ বছরও নিকাশি নিয়ে কোনও বড় পরিকল্পনা কার্যকর করতে পারেননি পুর কর্তৃপক্ষ। তাই বর্ষার মরসুমে নিকাশি নালা বুজে এ বারও বানভা‌সি হওয়ার আশঙ্কা করছেন বেশ কিছু ওয়ার্ডের বাসিন্দারা।

Advertisement

পুরসভার ১৬টি ওয়ার্ডেই রয়েছে নিকাশির সমস্যা। তার মধ্যে একটু বেশি বৃষ্টি হলেই প্রবল সমস্যায় পড়তে হয় অন্তত ৮টি ওয়ার্ডের বাসিন্দাদের। ২, ৩, ৪, ৯, ১০, ১২, ১৩, ১৫ নম্বর ওয়ার্ডগুলির বাসিন্দাদের কাছে বর্ষার মরসুম মানেই প্রবল অস্বস্তির সময়। বর্ষা একটু বেশি হলে রাস্তার নোংরা জল বাড়িতেও ঢুকে পড়ে। যে কয়েকটি ওয়ার্ডে নিকাশি ব্যবস্থা রয়েছে সেগুলিও খুব একটা জোরদার নয়। তবে নিকাশির এই সমস্যার জন্য প্লাস্টিকের ক্যারিব্যাগকেই দুষছেন অনেকে। নিকাশি নালায় নিয়মিত ভাবে ক্যারিব্যাগ জমলেও কড়া পদক্ষেপ নিতে দেখা যায়নি পুরসভাকে।

এ ক্ষেত্রে অবশ্য হতাশার সুরই শোনা গেল পুরপ্রধান মীরা হালদারের গলায়। বললেন, ‘‘ক্যারিব্যাগ নিষিদ্ধ করার ক্ষেত্রে আমাদের কোনও চেষ্টাই কাজে লাগছে না। বেআইনি ক্যারিব্যাগ মজুত ও ব্যবহারকারীদের বিরুদ্ধে অভিযান চালানো, সচেতনতা তৈরির চেষ্টা করা এবং বার বার পুলিশকে বলা হলেও কাজ হয়নি। অথচ নিকাশির সিংহভাগ সমস্যা তৈরি হয় তা থেকেই।’’ স্টেশন বাজার-সংলগ্ন ওয়ার্ডগুলিতে এই সমস্যা আরও বেশি। প্রতিনিয়ত ক্যারিব্যাগের অনিয়ন্ত্রিত ব্যবহার বিপদের আশঙ্কা বাড়িয়ে তুলছে ওই সব এলাকায়।

Advertisement

তবে গত এক বছরে নিকাশি নিয়ে কোনও বড় পরিকল্পনা হাতে নেওয়া বা কার্যকর করা গেল না কেন?

পুরকর্তারা জানাচ্ছেন, শহরের বেশিরভাগ জায়গায় বেআইনি নির্মাণের জেরে অনেক জায়গায় নালা হয় বুজে গিয়েছে, না হয় নিশ্চিহ্ন হয়ে গিয়েছে। অল্প জায়গার মধ্যে কী ভাবে সুষ্ঠু নিকাশি পরিকল্পনা তৈরি ও কার্যকর করা যায়, তা ভাবতে হবে মিউনিসিপ্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং ডিরেক্টরেটকে। ওই সংস্থাকে গত বছর নভেন্বরে এ ব্যাপারে পদক্ষেপ করতে চিঠিও দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু তার কোনও জবাব এখনও আসেনি। জাতীয় গঙ্গা রিভার বেসিন অথরিটির তরফেও দেওয়া নির্দেশিকায়, গঙ্গা লাগোয়া প্রতিটি পুরসভাগুলিকে ‘শহর পরিচ্ছন্নতা’ প্রকল্পে একগুচ্ছ করে কাজ করতে বলা হয়েছিল। বিশেষ করে নিকাশি এবং কঠিন বর্জ্য অপসারণের উপর জোর দেওয়ার কথা বলা হয়েছিল। নিকাশির নোংরা জল গঙ্গায় সরাসরি না ফেলে শোধন করেই নদীর মূল স্রোতে ফেলার কথা। দূষণ বা নিকাশি সমস্যা ঠেকাতে সব ব্যবস্থা নেওয়ার কথা থাকায় কলমে উল্লেখ থাকলেও বাস্তব অন্য কথা বলছে। ডায়মন্ড হারবার পুরসভা হুগলি নদী সংলগ্ন হলেও তা নিয়ে কোনও পরিকল্পনাই কার্যকর করা যায়নি। এ দিকে, বানভাসি হওয়ার হাত থেকে পুরবাসীকে বাঁচাতে নিকাশির জন্য শহরের চারটি জায়গা— কপাট হাট, একটি বেসরকারি নার্সিংহোমের কাছে, নগেন্দ্রবাজার ও এসডিও অফিসের সামনে কালভার্ট বসিয়ে পরিস্থিতি আপাতত সামাল দেওয়ার কথা। কিন্তু এই পরিকল্পনা কাজে লাগাতে পূর্ত দফতরের (জাতীয় সড়ক) সঙ্গে যৌথ উদ্যোগে কাজ করার কথা পুরসভার। পুরকর্তারা জানিয়েছেন, প্রায় মাস খানেক আগে এ ব্যাপারেও একটি চিঠি দেওয়া হয়েছে সংশ্লিষ্ট বিভাগকে। কিন্তু সেখান থেকে কোনও জবাব আসেনি বলে তাঁদের দাবি।

বাস্তব যা পরিস্থিতি, তাতে এ বারও বর্ষার মরসুমে ভোগান্তির আশঙ্কা করছেন পুরবাসী।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন