বিষ-পান: বাগদার মালিপোতা পঞ্চায়েত এলাকায়। ছবি: নির্মাল্য প্রামাণিক
সরাকরি ট্যাপ কল খারাপ। ‘সজলধারা’ প্রকল্পে জলের প্ল্যান্ট তৈরি হয়েছিল ঠিকই। কিন্তু তা এখনও চালু হয়নি। ফলে পানীয় জল নিয়ে সমস্যায় পড়েছেন বাগদা ব্লকের বলিদাপুকুর গ্রামের মানুষ।
শুধু ওই গ্রাম নয়, বাগদার বহু মানুষের কাছে এখন জলের সমস্যা বড় সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে। ভোট আসে ভোট যায়, রাজনৈতিক দলগুলি আর্সেনিক মুক্ত পানীয় জলের প্রতিশ্রুতি দেয়। কিন্তু ওই পর্যন্তই। কাজের কাজ কিছু হয় না।
বালিদাপুকুর থেকে প্রায় দেড় কিলোমিটার দূরে ধুলোনি ও বেয়াড়া গ্রাম থেকে তাঁদের পানীয় জল বয়ে আনতে হচ্ছে। ধুলোনি গ্রামে সরকারি ট্যাপকল রয়েছে। বেয়াড়া গ্রামে রয়েছে স্বজলধারা প্রকল্পের জলের প্ল্যান্ট। ওই প্রকল্পে জল আনতে গিয়ে গ্রামের মানুষকে টাকাও দিতে হচ্ছে। বালিদাপুকুরের বাসিন্দা দেবাশিস বিশ্বাস, ব্রতচারী বারুই, নিভা বিশ্বাসেরা বলেন, ‘‘ওই গ্রামে ২০ লিটার জলের দাম ৫ টাকা। সব সময় দূর থেকে জল নিয়ে আসা সম্ভব হয় না। বাধ্য হয়ে বাড়ির সামনের নলকূপের জল খেতে হয়। তা ছাড়া অত দূর থেকে জল আনার জন্য গাড়ি ভাড়া দিতে হয় ১৫ টাকা।’’
মালিপোতা পঞ্চায়েতের ঘোষপাড়া এলাকায় একটি পানীয় জলের কল রয়েছে। গ্রামবাসীরা জানান, ওই কলের জল পানের জন্য উপযুক্ত নয়। জল কিনে খেতে হয় গ্রামের মানুষকে। ২০ লিটার জলের দাম ২৫ টাকা। যাঁদের জল কিনে খাওয়ার সামর্থ্য নেই তাঁরা বাধ্য হয়ে নলকূপের জল খান। স্থানীয় যুবক সুকদেব বিশ্বাস বলেন, ‘‘গ্রামে থাকা সরকারি পানীয় জল বোতলে ঢাললে এক ঘণ্টা পর বোতলের ভিতর আয়রন জমে যায়।’’
মাকড়া গ্রামের বাসিন্দারা জানান, গ্রামের মসজিদে বসানো কলের জল থেকে এমন গন্ধ বের হয় যে পান করা যায় না। বাধ্য হয়ে জল কিনে খেতে হচ্ছে। পাটকেলগাছা গ্রামের বাসিন্দা বিশ্বনাথ পাড়ুই বললে, ‘‘আর্সেনিক জেনেও আমাদের নলকূপের জল খেতে হয়।’’
ব্লকের মানুষের অভিযোগ, গ্রামগুলিতে পানীয় জলের গভীর নলকূপ বসানো হয় ঠিকই। কিন্তু তা একবার খারাপ হলে আর মেরামত করা হয় না। সর্বত্র জনস্বাস্থ্য কারিগরি দফতরের পাইপ লাইন পৌঁছয়নি। সজলধারা প্রকল্পও সব জায়গায় শুরু হয়নি। গভীর নলকূপ বা ট্যাপ কলের জল নিয়মিত পরীক্ষা করা হয় না বলেও গ্রামবাসীর অভিযোগ।
সিন্দ্রাণী এলাকায় ট্যাপকলের মুখগুলি নষ্ট হয়ে গিয়েছে। ফলে সর্বক্ষণ জল পড়ে জল অপচয় হচ্ছে। স্থানীয় শিক্ষক গৌর রায় বলেন, ‘‘১ বৈশাখ এলাকায় থাকা ট্যাপ কলগুলির মুখ নিজের টাকায় লাগিয়ে দেব।’’ বাগদার প্রাক্তন বিধায়ক কমলাক্ষ্ণী বিশ্বাস বলেন, ‘‘বামদের সময়ে পাইপ লাইন যা বসানো হয়েছিল তারপর আর বাড়ানো হয়নি। যা রয়েছে তাও ঠিকমতো রক্ষণাবেক্ষণ করা হয় না।’’ বিধায়ক দুলাল বর জানিয়েছেন, পানীয় জলের সমস্যা মেটাতে বিধায়ক তহবিলের টাকায় গভীর নলকূপ ও স্বজলধারা প্রকল্পে জলের প্ল্যান্ট বসানো হয়েছে। পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি শুক্লা মণ্ডল বলেন, ‘‘কিছু এলাকায় সমস্যা থাকলে বেশির ভাগ এলাকায় পানীয় জলের সমস্যা মিটে গিয়েছে।’’
তবে গ্রামবাসীরা জল কিনে খাওয়ার ফলে এখানকার জল ব্যবসা রমরমিয়ে চলছে। অথচ এই জল কতটা স্বাস্থ্যকর, সে বিষয়টি নিয়ে ভাবার। জল ব্যবসায়ীদের বৈধ নথিপত্র আছে কিনা তা নিয়ে গ্রামবাসীরা সচেতন নন।