বনগাঁ সুপার স্পেশ্যালিটি হাসপাতাল

তড়িঘড়ি কেন উদ্বোধন, প্রশ্ন

বনগাঁ মহকুমা হাসপাতাল চত্বরে প্রায় ৮০ হাজার স্কোয়্যার ফুট জমির উপরে তৈরি হয়েছে পাঁচতলা সুপার স্পেশ্যালিটি হাসপাতাল। খরচ হয়েছে প্রায় ৫২ কোটি টাকা। ২০১৫ সালের এপ্রিলে কাজ শুরু হয়।

Advertisement

সীমান্ত মৈত্র

বনগাঁ শেষ আপডেট: ৩০ জুন ২০১৭ ০২:১৫
Share:

উদ্বোধন। বসিরহাটে। ছবি: নির্মল বসু

রোগী ভর্তির ব্যবস্থাই হল না, চালু হয়ে গেল বনগাঁ সুপার স্পেশ্যালিটি হাসপাতাল!

Advertisement

বৃহস্পতিবার বর্ধমান থেকে হাসপাতালের উদ্বোধন করেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। একটি সুপার স্পেশ্যালিটি হাসপাতালে যে ধরনের চিকিৎসা পরিকাঠামো থাকার কথা, তার অনেক কিছুই এখনও তৈরি হয়নি এখানে। পরিকাঠামো তৈরির কাজ শেষ না করে কেন তড়িঘড়ি হাসপাতালের উদ্বোধন করা হল, তা নিয়ে প্রশ্ন উঠছে নানা মহলে।

বনগাঁ মহকুমা হাসপাতাল চত্বরে প্রায় ৮০ হাজার স্কোয়্যার ফুট জমির উপরে তৈরি হয়েছে পাঁচতলা সুপার স্পেশ্যালিটি হাসপাতাল। খরচ হয়েছে প্রায় ৫২ কোটি টাকা। ২০১৫ সালের এপ্রিলে কাজ শুরু হয়। আপাতত ৩০ জন নার্স ও কয়েকজন মেডিসিনের চিকিৎসক দেওয়া হয়েছে স্বাস্থ্য দফতর থেকে। একজন শল্য ও একজন অর্থোপেডিক চিকিৎসকও এসেছেন।

Advertisement

বনগাঁ মহকুমা হাসপাতালের সুপার শঙ্করপ্রসাদ মাহাতোই আপাতত সুপার স্পেশালিটি হাসপাতালের দায়িত্বে থাকছেন। তিনি জানালেন, ১০ শয্যার সিসিইউ, সিটিস্ক্যান মেশিন, বার্ন ইউনিট, মর্গ চালু হবে। হাড় এবং চোখের রোগের যাবতীয় জটিল অস্ত্রোপচার এখানে হবে। ওই দু’টি বিভাগে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক থাকবেন।

কিন্তু এমআরআই-সহ গুরুত্বপূর্ণ আরও কিছু পরীক্ষা চালু হচ্ছে না এখনই। কার্ডিওলজি, নিউরোলজি বিভাগও নেই। ৩০০ শয্যার হাসপাতালে রোগী ভর্তি হতে হতে দুর্গাপুজো পেরিয়ে যাবে বলে জানান শঙ্করবাবু। তিনি জানান, ১০ জুলাই থেকে সুপার স্পেশ্যালিটি হাসপাতালে বর্হিবিভাগ চালু হচ্ছে। বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকেরা রোগী দেখবেন।

তবে ঘটনা হল, মহকুমা হাসপাতালের বহির্বিভাগটিই এখানে তুলে আনা হচ্ছে। সাধারণ মানুষের প্রশ্ন, পৃথক ব্যবস্থা চালু না করে, পরিকাঠামো না গড়ে এই গোঁজামিলের উদ্বোধনের কী দরকার ছিল!

স্বাস্থ্য দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, বনগাঁ মহকুমা হাসপাতালের সঙ্গে সুপার স্পেশ্যালিটি হাসপাতাল অনেকাংশে মিলিয়ে দেওয়া হচ্ছে। এ দিন হাসপাতালের উদ্বোধন উপলক্ষে অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছিল। সেখানে উপস্থিত ছিলেন উত্তর ২৪ পরগনার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক প্রলয় আচার্য, বনগাঁর সাংসদ মমতা ঠাকুর, স্থানীয় বিধায়ক বিশ্বজিৎ দাস।

বিধায়ক বলেন, ‘‘সুপার স্পেশ্যালিটি হাসপাতালটি পুরো চালু হয়ে গেলে বনগাঁ মহকুমার মানুষের চিকিৎসার জন্য আর কলকাতায় দৌড়তে হবে না। এখানে তাঁরা যাবতীয় পরিষেবা পাবেন।’’

পুরো পরিষেবা মিললে কলকাতার উপরে নির্ভরতা কমবে, তা অবশ্য সকলেই মানছেন একবাক্যে।

বসিরহাট থেকে প্রতিবেদন: এ দিন বসিরহাটেও সুপার স্পেশালিটি হাসপাতালের উদ্বোধন করেন মমতা। এই উপলক্ষে বসিরহাটে এসেছিলেন খাদ্যমন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক, বিধায়ক দীপেন্দু বিশ্বাস, এটিএম আবদুল্লা রনি, পুরপ্রধান তপন সরকার, বসিরহাট স্বাস্থ্য জেলার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক দেবব্রত মুখোপাধ্যায়, বসিরহাট মহকুমা হাসপাতালের সুপার শ্যামল হালদার প্রমুখ।

মন্ত্রী জানান, আইসিইউ, আইটিইউ, ডায়ালিসিসের ব্যবস্থা থাকছে এখানে। ৩০০ শয্যার অন্তর্বিভাগ শীঘ্রই চালু হবে। জ্যোতিপ্রিয়বাবু বলেন, ‘‘এ বার থেকে চিকিৎসার প্রয়োজনে দূরে ছুটতে হবে না। বাইরে থেকেও মানুষ এখানে আসতে পারবেন।’’ আপাতত নীচের দু’টি তলায় বহির্বিভাগ চালু হয়েছে। সেখানে মেডিসিন, মনোরোগ, ত্বক, চক্ষু এবং নাক-কান-গলা বিভাগগুলির চিকিৎসা পরিষেবা মিলবে। অস্ত্রোপচারের ব্যবস্থা থাকছে পাঁচতলায়।’’

ঝকঝকে সুপার স্পেশালিটি হাসপাতালে বাকি নানা পরিষেবা এখনই চালু হয়নি। খুব শীঘ্রই সব ব্যবস্থা হয়ে যাবে বলে আশ্বাস দিয়েছেন স্বাস্থ্য কর্তারা। নতুন এই হাসপাতাল পেয়ে উচ্ছ্বসিত বসিরহাটবাসীও।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন