বাদুড়িয়ায় উপচে পড়ল ভিড়

শহিদের স্মৃতিতে রক্তদান

সম্প্রতি বাদুড়িয়ারই এক তরুণের ফেসবুক পোস্টকে ঘিরে ওই এলাকা-সহ বসিরহাট মহকুমার নানা প্রান্তে গোলমাল চরমে ওঠে। পুলিশ, কেন্দ্রীয় বাহিনীকে রীতিমতো হিমসিম খেতে হয় পরিস্থতি সামাল দিতে। বহু বাড়ি-ঘর, দোকান পোড়ে।

Advertisement

নির্মল বসু

বাদুড়িয়া শেষ আপডেট: ১৭ অগস্ট ২০১৭ ০১:৪৩
Share:

স্মরণে: রক্তদানে বৃদ্ধ বাবা। নিজস্ব চিত্র

উদ্যোক্তারা শ’খানেক মানুষের রক্ত নেওয়ার জন্য প্রস্তুত ছিলেন। আদপে দেখা গেল, রক্তদানের লাইনে শ’তিনেক মানুষের ভিড়।

Advertisement

বুধবার বাদুড়িয়ার বাজিতপুরে মৃত জওয়ান আজিজুল মোল্লার মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে রক্তদান শিবিরের আয়োজন করেছিল কাটিয়াহাট ব্লক কংগ্রেস। গত বছর ১৫ অগস্ট খবর আসে, কাশ্মীরের বারামুলায় জঙ্গিদের গুলিতে মারা গিয়েছেন আজিজুল। বছর একত্রিশের তরতাজা তরুণ যুবকের দেহ গ্রামে ফিরলে অসংখ্য মানুষ চোখের জলে শেষ বিদায় জানিয়েছিলেন তাঁকে।

সেই আজিজুলের বাবা আসরাফ মোল্লাও এ দিন রক্তদানের লাইনে দাঁড়িয়েছিলেন। চোখ মুছতে মুছতে বললেন, ‘‘জঙ্গিরা আমার একমাত্র ছেলেটাকে গুলি করে মেরেছে। কিন্তু তাতে আমি গর্বিত। আমার যদি আরও পাঁচ ছেলে থাকত, তা হলে সকলকে দেশরক্ষায় পাঠাতাম। বলতাম, দেশ রক্ষায় কোনও আপস নয়। জাতি-ধর্মের বিভেদ নয়।’’ অশক্ত শরীরে প্রবীণ মানুষটি বলেন, ‘‘ক্ষমতা থাকলে আমি নিজে জঙ্গিদের মোকাবিলায় হাতে বন্দুক তুলে নিতাম।’’

Advertisement

সম্প্রতি বাদুড়িয়ারই এক তরুণের ফেসবুক পোস্টকে ঘিরে ওই এলাকা-সহ বসিরহাট মহকুমার নানা প্রান্তে গোলমাল চরমে ওঠে। পুলিশ, কেন্দ্রীয় বাহিনীকে রীতিমতো হিমসিম খেতে হয় পরিস্থতি সামাল দিতে। বহু বাড়ি-ঘর, দোকান পোড়ে। মারা যান একজন। বেশ কয়েক দিন এলাকায় রক্তদান শিবিরগুলি বন্ধ ছিল। যার জেরে চরম রক্তের সঙ্কটে পড়ে বসিরহাট জেলা হাসপাতাল।

সেই বাদুড়িয়াতেই বীর শহিদের মৃত্যুবার্ষিকীতে রক্তদান শিবিরে এত মানুষ ভিড় করায় উচ্ছ্বসিত স্থানীয় বিধায়ক কাজি আব্দুর রহিম দিলু। আসরাফের পাশে শুয়ে দিলুও এ দিন রক্ত দিয়েছেন।

বিধায়কের কথায়, ‘‘যারা গণ্ডগোল করে কিংবা অপরাধীদের প্রশ্রয় দেয়, তারা আসলে কোনও ধর্মের মানুষ হতে পারে না। তারা দুষ্কৃতী। তাদের ক্ষমা নেই। আমরা ঠিক করেছি, প্রতি বছর এই দিনে রক্তদান উৎসব করব।’’

শিবিরে হিন্দু-মুসলিম সব সম্প্রদায়ের মানুষ রক্ত দিয়েছেন। দীর্ঘক্ষণ লাইনে দাঁড়িয়েও শেষ পর্যন্ত রক্ত দিতে না পেরে ক্ষুণ্ণ হয়েছেন অনেকে। দিনের শেষে ১০১ জনের রক্ত নেওয়া গিয়েছে।

দিলু বলেন, ‘‘একজন জওয়ানকে শ্রদ্ধা জানাতে এত মানুষ রক্তদান করলেন দেখে আমরা সকলে অভিভূত। বিষয়টা আগে আন্দাজ করতে পারলে আরও মানুষের রক্তগ্রহণের ব্যবস্থা রাখা যেত।’’ বসিরহাট ব্লাড ব্যাঙ্কে রক্তের সমস্যা এতে মিটবে বলে তাঁর আশা।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন