বিজ্ঞান-মডেলে তাড়াহুড়োর ছাপ, শুরু চাপান-উতোর

কেউ বানিয়েছে ট্যাঙ্ক থেকে উপচে জলের অপচয় রোখার অ্যালার্ম। লেবুর রস, গোবর, কাদা দিয়ে ব্যাটারি ইউনিট তৈরি করেছে কেউ। বিজ্ঞানভিত্তিক এমনই নানা মডেল এসেছিল দক্ষিণ ২৪ পরগনার ডায়মন্ড হারবার বাছাই পর্বে।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

ডায়মন্ড হারবার শেষ আপডেট: ২৪ অগস্ট ২০১৫ ০১:৪৮
Share:

বিজ্ঞান প্রদর্শনী দেখছে এক স্কুল ছাত্রী। —নিজস্ব চিত্র।

কেউ বানিয়েছে ট্যাঙ্ক থেকে উপচে জলের অপচয় রোখার অ্যালার্ম। লেবুর রস, গোবর, কাদা দিয়ে ব্যাটারি ইউনিট তৈরি করেছে কেউ। বিজ্ঞানভিত্তিক এমনই নানা মডেল এসেছিল দক্ষিণ ২৪ পরগনার ডায়মন্ড হারবার বাছাই পর্বে। উপলক্ষ, ক্ষুদে পড়ুয়াদের বিজ্ঞানচর্চায় উৎসাহ দিতে কেন্দ্রীয় সরকারের ‘ইন্সপায়ার অ্যাওয়ার্ড’ নামের মডেল প্রতিযোগিতা। কিন্তু গড়পড়তা মডেলের মান নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন বিচারকদের একাংশ। মডেলের নির্মাতা পড়ুয়াদের অভিযোগ, প্রতিযোগিতার কথা দেরিতে জানায় তাড়াহুড়ো করতে হয়েছে। পক্ষান্তরে, জেলা স্কুল পরিদর্শকের দাবি, মডেল বানানোর জন্য পর্যাপ্ত সময় ছিল।

Advertisement

কেন্দ্রীয় বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রকের আর্থিক সহায়তায় এই প্রকল্পে প্রতি বছর সারা রাজ্যের ষষ্ঠ থেকে দশম শ্রেণির ক্ষুদে পড়ুয়াদের কাছে বিজ্ঞানভিত্তিক মডেল চাওয়া হয়। চলতি বছর জেলায় এই মডেলের বাছাই পর্ব পাঁচটি মহকুমায় আলাদা করে হচ্ছে। ইতিমধ্যেই তিন মহকুমার বাছাইপর্ব শেষ। ২০১২ সালের পর থেকে দক্ষিণ ২৪ পরগনা জেলার পড়ুয়াদের তৈরি করা কোনও মডেল জাতীয় স্তরে জায়গা করতে পারেনি। এ বারও বিচারকদের অভিজ্ঞতা বলছে, অনেক ক্ষেত্রেই বই থেকে মুখস্ত করা কিছু পরীক্ষা বা শিক্ষকদের বলে দেওয়া কিছু মডেল তৈরি করে প্রদর্শনীতে হাজির হচ্ছে ছাত্রছাত্রীরা, যেগুলির একটা বড় অংশ তারা নিজেরা বানায়নি। ফলে, মডেল সম্পর্কে বিশদে জানতে চাইলে কিছু বলতে পারছে না। জাতীয় স্তরে পিছিয়ে পড়ার পিছনে এই সমস্যা রয়েছে বলে মনে করেছেন বিশেষজ্ঞেরা।

জেলা স্তরের মডেল বাছাই প্রতিযোগিতার অন্যতম বিচারক ঠাকুরপুকুর বিবেকানন্দ কলেজের শিক্ষক ত্রিজিৎ নন্দের মন্তব্য, ‘‘মনে হয়েছে, বিজ্ঞানের বই থেকে একটা ধারণা বাস্তবে প্রয়োগের ক্ষেত্রে শিক্ষকদের আরও সক্রিয় হয়ে সময় দেওয়া উচিত ছাত্রছাত্রীদের দিকে। তা না হলে প্রতিযোগিতায় এগনো মুশকিল। বেশিরভাগ ছাত্রছাত্রীদের উপস্থাপনার ক্ষেত্রেও সমস্যা লক্ষ্য করেছি আমরা।’’

Advertisement

ওই প্রদর্শনীতেই দেখা গেল বেশ কিছু ভাল মডেল রয়েছে। বিশেষ করে জ্বালানি বাঁচানো, ফেলে দেওয়া জিনিসের ব্যবহার এবং অপ্রচলিত শক্তির খোঁজ— এই সব বিষয়ের উপরে জোর দিয়ে মডেল তৈরিতে ঝোঁক দেখা গিয়েছে অনেকের। প্রদর্শনীর আয়োজক স্কুল— রায়নগর ক্ষেত্রনাথ সুনীলবরণ পৌর বিদ্যালয়ের ছাত্র ও শিক্ষকেরা বানিয়েছেন, জলের ট্যাঙ্ক থেকে উপচে পড়া জল নষ্ট আটকানোর অ্যালার্ম। লেবুর রস, গোবর, কাদা দিয়ে ব্যাটারি বানিয়েছে করঞ্জলি বি কে ইন্সটিটিউশনের ১১ শ্রেণির বিজ্ঞান বিভাগের ছাত্র সুজয় পাল। সুজয়ের মতো অনেক পড়ুয়ারই দাবি, মডেল গড়ার জন্য দিন চার-পাঁচেক সময় পেয়েছে। আগেভাগে জানলে মডেল নিয়ে আরও একটু চিন্তাভাবনা করার সুযোগ পেত।

ডায়মন্ড হারবার হাইস্কুলের বিজ্ঞানের শিক্ষক স্নেহাংশু বাগচির ক্ষোভ, ‘‘বিচারকেরা মডেল গড়া নিয়ে শিক্ষকদের আরও সময় দেওয়ার কথা বলছেন! আমরা মাত্র তিন-চার দিন আগে প্রতিযোগিতার কথা জেনেছি। তা-ও ডিআই বা এডিআই অফিস থেকে কিছু বলা হয়নি। ওই রকম তাড়াহুড়ো করে মডেল তৈরি করা যায়?’’ ডায়মন্ড হারবার হাইস্কুল থেকে কেউ যোগ দিতে পারেনি প্রদর্শনীতে। আয়োজকদের তরফে জানানো হয়েছে, এই পর্বে ২৪০টি স্কুলের যোগ দেওয়ার কথা থাকলেও বাস্তবে মাত্র ১৪৫টি স্কুল যোগ দিয়েছে।

জেলা স্কুল পরিদর্শক মৃন্ময় ঘোষ অবশ্য বলছেন, ‘‘কয়েকমাস আগে রেজিস্ট্রেশনের সময়ই শিক্ষকেরা জেনে গিয়েছিলেন, কী করাতে হবে। ছাত্রদের দিকে নজর দেওয়া, তাদের দিয়ে মডেল আগে থেকে কেন তৈরি করাননি তাঁরা?’’ স্কুল পরিদর্শকের দফতর সূত্রে জানানো হয়েছে, পরের বছর থেকে এ ব্যাপারে ছাত্র-শিক্ষকদের সচেতনতা বাড়াতে কর্মসূচির কথাও ভাবা হচ্ছে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন