পুজোর আগে শেষ রবিবার ছোট-মাঝারি দোকান তুলনায় ফাঁকাই
Durga Puja 2020

তেমন জমল না ব্যবসা

বসিরহাট শহর, হাসনাবাদ এবং মালঞ্চের দু’একটি শপিং মলে কিছু ক্রেতার দেখা মিললেও ছোট বা মাঝারি দোকানগুলি ছিল প্রায় ফাঁকা।

Advertisement

নিজস্ব প্রতিবেদন

কলকাতা শেষ আপডেট: ১৯ অক্টোবর ২০২০ ০৪:৪১
Share:

রবিবারের বাজারের এই চিত্র হতাশ করল বহু ব্যবসায়ীকে। ভাঙড়ের গোবিন্দপুরে ছবিটি তুলেছেন সামসুল হুদা

প্রথম কয়েক ওভারে রান না উঠলেও শেষের দিকে চালিয়ে ব্যাট করে কিছু রান উঠে আসবে ধরে রেখেছিলেন ব্যবসায়ীরা। কিন্তু তাঁদের নিরাশ করে পুজোর আগের শেষ রবিবারও দুই জেলার বাজারে ভিড় তেমন জমল না।

Advertisement

তবে তুলনায় বড় দোকান বা শপিংমল ভিড় টেনেছে। জেলায় জেলায় অভিজ্ঞ ব্যবসায়ীরা অনেকেই জানাচ্ছেন, বড় দোকানের ক্রেতা আর ছোট-মাঝারি দোকানের ক্রেতার মধ্যে নানা তফাৎ থাকে। শপিংমলে যাঁরা ঢুকছেন, হতে পারে, তাঁদের ক্রয়ক্ষমতায় তেমন ভাবে প্রভাব ফেলেনি লকডাউন। কিন্ত সমাজের একটা বড় অংশের ছোট ও মাঝারি আয়ের মানুষের জীবিকায় টান পড়েছে গত কয়েক মাসে। তাঁরা কেনাকাটায় বেশি মাত্রায় রাশ টেনেছেন বা টানতে বাধ্য হয়েছেন। তবে বড় দোকান, শপিংমলের ভিড়ও এ বার কমেছে। বাকি ছোট-মাঝারি দোকান মার খেয়েছে বেশি।

বসিরহাট শহর, হাসনাবাদ এবং মালঞ্চের দু’একটি শপিং মলে কিছু ক্রেতার দেখা মিললেও ছোট বা মাঝারি দোকানগুলি ছিল প্রায় ফাঁকা। বিশেষত পোশাক ব্যবসায়ীদের মাথায় হাত। অন্যান্য বছর মিনাখাঁর মালঞ্চ বাজার, বসিরহাটের নতুন ও পুরাতন বাজার, হাসনাবাদ বাজার-সহ বিভিন্ন বাজারে পুজোর মাসখানেক আগে থেকেই জুতো এবং পোশাকের দোকানে ভিড় সামলাতে হিমসিম খেতে হত ব্যবসায়ীদের। করোনা আবহে এ বার পরিস্থিতি একেবারে উল্টো। অধিকাংশ দোকানে ভিড় তেমন চোখে পড়ল না।

Advertisement

কিছু বড় দোকান-শপিং মলের কথা বাদ দিলে বনগাঁর চিত্রও কার্যত একই রকম। এ দিন বেশির ভাগ ছোট ও মাঝারি পোশাকের দোকান ছিল কার্যত ফাঁকা। দুপুরে শহরে রাস্তাঘাট দেখে বোঝার উপায় নেই, পুজোর আগে আজ শেষ রবিবার। ব্যবসায়ীরা অনেকেই জানাচ্ছেন, গতবারের তুলনায় আয়পত্র নেহাতই কম। গত কয়েক দিন অবশ্য বেচাকেনা মন্দ হয়নি, বলছেন বনগাঁর কয়েকজন ব্যবসায়ী। বনগাঁ শহরের টবাজার এলাকার একটি শপিংমলের মালিক বাপন সাহা কথায়, ‘‘গত বছরের তুলনায় আয় অনেকটাই কম। তবে ১ অক্টোবর থেকে ভিড় বেড়েছে।’’

তবে বনগাঁ শহরে যশোর রোডের দু’পাশে থাকা মল বা বড় বস্ত্র প্রতিষ্ঠানগুলিতে রবিবার বেশ ভিড় হয়েছে। কয়েকটি দোকানের সামনে ক্রেতাদের এত ভিড় ছিল যে অনেককে বাইরে অপেক্ষা করতে হয়েছে। অন্যান্য বছরগুলিতে পুজোর একমাস আগে থেকে বনগাঁর বিউটি পার্লারগুলি মহিলাদের ভিড় উপচে পড়ত। এ বার পার্লারগুলিতে ভিড় সবে জমতে শুরু করেছে। একটি বিউটি পার্লারের মালিক মৃত্যুঞ্জয় চক্রবর্তী বলেন, ‘‘গতবারের তুলনায় ব্যবসা এ বার ৫০ শতাংশ কম। সবে আট-দশ দিন হল লোকজন আসছে। রবিবার সকাল থেকে রাত পর্যন্ত ভিড় ছিল। শেষ বাজারে এসে কিছু আয় হচ্ছে।’’ তবে জুতোর বাজারে মন্দা। বনগাঁ শহরে জুতোর দোকান আছে সুজয় নাগদের। তাঁর কথায়, ‘‘আগে একমাস আগে মানুষ জুতো কিনতে ভিড় করতেন। এ বার সকলেরই রোজগারে টান। পুজোর আগে শেষ রবিবারও তেমন ভিড় হল না।’’

দোকান-বাজারে ভিড় এড়াতে অনেকে এ বার অনলাইনে কেনাকাটার উপরেও ভরসা রেখেছেন বলে জানা গেল। আগে বনগাঁ মহকুমার বহু মানুষ কলকাতায় পুজোর বাজার করতে যেতেন। এ বার তাঁরা যাননি। ছোট পোশাকের দোকানের মালিকদের কথায়, ‘‘নতুন জামাকাপড় সামান্য যা তুলেছিলাম, সবই প্রায় থেকে গেল। টানা কয়েক মাস ব্যবসা ধুঁকছে। ভেবেছিলাম পুজোয় ক’টি টাকার মুখ দেখব। তা-ও হল না।’’ হাসনাবাদ বাজার ব্যবসায়ী সমিতির সেক্রেটারি সুব্রত মুখোপাধ্যায় বলেন, ‘‘পুজোর আগে শেষ রবিবারও তেমন ক্রেতার দেখা মিলল না। ৫০ বছর ধরে বাজার কমিটির এই পদে আছি। এমন পরিস্থিতি দেখিনি।’’ একই কথা জানালেন হিঙ্গলগঞ্জ বাজার কমিটির সম্পাদক সুশান্ত ঘোষ।

ডায়মন্ড হারবারে কিছু ছোট দোকানি জানালেন, আগে পরিবারের ছেলেমেয়েদের জন্য দু’তিন সেট জামা-কাপড় কিনতেন অনেকেই। এ বার কোনও মতে একটা কিনে দিচ্ছেন। ফলে কেনাবেচার হাল খুবই খারাপ। তবে শহরের শপিংমলগুলিতে রবিবার শেষবেলায় কিছুটা ভিড় দেখা গিয়েছে। গত দু’তিন দিন ধরে ভিড় হলেও শেষ রবিবার বেশ ঠান্ডা ক্যানিংয়ের বাজার-দোকান। জমজমাট ব্যাপারটাই উধাও, জানাচ্ছেন বেশিরভাগ দোকানি।

তবে তুলনায় ভাল কেনাবেচা হয়েছে ভাঙড়ের বিভিন্ন বাজারে। বস্ত্র ব্যবসায়ী গৌরাঙ্গ ভৌমিক বলেন, ‘‘গত কয়েক দিনের তুলনায় মন্দা খানিকটা কেটেছে রবিবার। আশা করি, আগামী দু’তিন দিন ভিড়টা থাকবে।’’ অন্যবারের মতো না হলেও শেষ রবিবার কেনাবেচা ভাল হয়েছে বলে জানাচ্ছেন ভাঙড় বাজার ব্যবসায়ী সমিতির সম্পাদক সাবিরুল ইসলামও।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন