সিলিকোসিসে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যু হল আরও একজনের। মৃতের নাম জাকির হোসেন পাইক (২৪)। এই নিয়ে সিলিকোসিস রোগে আক্রান্ত হয়ে মিনাখাঁর ধুতুরদহ পঞ্চায়েতের গোয়ালদহ গ্রামে ১৩ জনের মৃত্যু হল। এখনও গ্রামের প্রায় ৫০ জন ওই রোগে অসুস্থ। তাদের মধ্যে ৪-৫ জনের অবস্থা রীতিমতো আশঙ্কাজনক বলে স্থানীয় সূত্রের খবর।
এ দিকে, সিলিকোসিসে আক্রান্ত হয়ে একের পর এক মৃত্যুর ঘটনায় আতঙ্কিত গ্রামবাসীরা। কী ভাবে এই রোগের হাত থেকে মুক্তি মিলবে, তার পথ খুঁজে না পেয়ে হতাশায় দিন কাটাচ্ছেন অনেকেই।
মহকুমা স্বাস্থ্য দফতর এবং স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, ২০১১ সাল নাগাদ মিনাখাঁর গোয়ালদহ গ্রামের বড় অংশের মানুষ ঝাড়খণ্ডে পাথর খাদানে কাজে গিয়েছিলেন। সেখান থেকে অসুস্থ হয়ে পড়ায় ২০১২-১৩ নাগাদ একের পর এক ব্যক্তি বুকের অসুখ নিয়ে গ্রামে ফিরতে থাকেন। উপসর্গ ছিল প্রচণ্ড কাশি, বুকে যন্ত্রণা।
স্থানীয় হাসপাতালে অনেকে ভর্তি হন। চিকিৎসকেরা জানিয়ে দেন, সকলের সিলিকোসিস হয়েছে। কলকাতার নানা হাসপাতালে রেফার করা হয়। ২০১৪ সাল থেকে শুরু হয় মৃত্যুর ঘটনা। একে একে মারা যান আলামিন মোল্লা, আবুল পাইক, মিজানুর মোল্লা, হোসেন মোল্লারা।
বিভিন্ন স্বেচ্ছাসেবী প্রতিষ্ঠান থেকে শুরু করে চিকিৎসক দল গ্রামে গিয়ে অসুস্থদের পাশে দাঁড়িয়েছেন। সাধ্যমতো চিকিৎসা ও পথ্যের ব্যবস্থা করেন। কিন্তু রোগ নিরাময় হয় না।
সম্প্রতি ওই গ্রামে গিয়েছিলেন বসিরহাটের সাংসদ ইদ্রিশ আলি। অসুস্থদের পরিবারগুলির হাতে ৫০ হাজার টাকা এবং কিছু সরঞ্জাম দেন। জাকিরের সিলিকোসিসে মৃত্যুর খবর পেয়ে ইদ্রিশ বলেন, ‘‘খুবই দুঃখজনক ঘটনা। সরকারি ভাবে যা সাহায্য লাগবে, আমাদের সরকার তা করতে প্রস্তুত।’’
গ্রামের মানুষ জানান, অসুস্থদের শ্বাসকষ্টের উপশমে নিজেরাই চাঁদা তুলে ৪টি অক্সিজেন সিলিন্ডার কেনেন। বর্তমানে গুরুতর অসুস্থ গ্রামের স্মরজিৎ মণ্ডলের পরিবার একটি অক্সিজেন সিলিন্ডার কিনেছেন। কিন্তু রোগমুক্তির কোনও লক্ষণ নেই। বরং দিনের পর দিন অসুস্থের সংখ্যা বাড়ছে।
গত কয়েক দিন ধরে অসুস্থ ছিলেন গ্রামের জাকির হোসেন পাইক। এর আগে তাঁর দাদা আবুল পাইকেরও মৃত্যু হয়েছে সিলিকোসিসে। জাকিরকে আরজিকর হাসপাতালে ভর্তি করা হলে বৃহস্পতিবার দুপুরে সেখানেই তাঁর মৃত্যু হয়। শুক্রবার জাকিরের দেহ গ্রামে আনা হলে কান্নায় ভেঙে পড়ে বাসিন্দারা। তাঁদের প্রশ্ন, এ ভাবেই কি একের পর এক মানুষকে মরতে হবে। গ্রামের বাসিন্দা মালেক মোল্লা বলেন, ‘‘চিকিৎসকেরা জানিয়েছেন, একবার সিলিকোসিস রোগ হলে আর বাঁচার কোনও সম্ভাবনা নেই। তাই আমরা যৌথ ভাবে চারটি এবং একটি ব্যক্তিগত ভাবে অক্সিজেন সিলিন্ডার কিনে রেখেছি। যাতে মানুষের কষ্ট খানিকটা সময়ের জন্য হলেও কমাতে পারি।’’