West Bengal Assembly Election 2021

ভোট-প্রচারে সব দলের নজর সোশ্যাল মিডিয়ায়

উত্তর ২৪ পরগনা জেলা সিপিএম সূত্রে জানা গিয়েছে, জেলায় এ বার ভোটের প্রচারে সোশ্যাল মিডিয়ার ব্যবহার নিয়ে দীর্ঘ পরিকল্পনা করা হয়েছে।

Advertisement

সীমান্ত মৈত্র  

বনগাঁ শেষ আপডেট: ২৮ ফেব্রুয়ারি ২০২১ ০৫:৪৯
Share:

লক্ষ্য: মোবাইলে মশগুল তরুণ প্রজন্ম। এদের নজর টানতেই আরও জোর দেওয়া হচ্ছে সোশ্যাল মিডিয়ায়।

ভোটের প্রচারে সোশ্যাল মিডিয়ার ভূমিকা ইদানীং সব রাজনৈতিক দলই মানে। কোভিড পরিস্থিতিতে নির্বাচন কমিশন প্রচারের উপরেও কিছু বিধিনিষেধ আরোপ করেছে। এই পরিস্থিতিতে ভোটের বাজারে সোশ্যাল মিডিয়ার ভূমিকা আগামী দিনে আরও বাড়বে বলে মনে করছে রাজনৈতিক দলগুলি। বিশেষত নবীন প্রজন্মের ভোটারদের কাছে নিজেদের বার্তা পৌঁছনোর জন্য বিভিন্ন দল রণকৌশল ঠিক করছে সোশ্যাল মিডিয়ায়। অতীতে দেখা যেত, ভোট ঘোষণার দিনই রাজনৈতিক দলের কর্মী-সমর্থকেরা দেওয়াল লেখার কাজ শুরু করে দিতেন। দলীয় পতাকা নিয়ে কর্মী-সমর্থকেরা রাস্তায় নেমে পড়তেন। এ বার সেই ছবি উত্তর ২৪ পরগনায় সে ভাবে দেখা যায়নি। বরং ভোট ঘোষণার পরে ভোটের জোরদার প্রচার শুরু হয়েছে সোশ্যাল মিডিয়াতেই। বিশেষ করে ফেসবুক এবং হোয়াটসঅ্যাপের উপরে ভরসা রাখছে সব দল।

Advertisement

উত্তর ২৪ পরগনা জেলা সিপিএম সূত্রে জানা গিয়েছে, জেলায় এ বার ভোটের প্রচারে সোশ্যাল মিডিয়ার ব্যবহার নিয়ে দীর্ঘ পরিকল্পনা করা হয়েছে। ভোট প্রচারের জন্য একটি নিউজ পোর্টাল ‘নিউস্কোপস’ চালু হচ্ছে। জেলায় সিপিএমের এরিয়া কমিটি আছে ৮২টি। প্রতিটি এরিয়া কমিটি এলাকায় সোশ্যাল মিডিয়া পরিচালনা করার জন্য একটি করে ‘রেড স্ট্রিম হোয়াটসঅ্যাপ ভলান্টিয়ার কমিটি’ তৈরি করা হয়েছে। কমিটির মাধ্যমে ভোটের প্রচার চলছে। পাশাপাশি ফেসবুক লাইভের মাধ্যমে বাম-কংগ্রেস জোটের নেতারা ভাষণ মানুষের কাছে পৌঁছে দেবেন। জেলা সিপিএম সম্পাদক মৃণাল চক্রবর্তী বলেন, ‘‘জেলায় বুথের সংখ্যা প্রায় সাড়ে ৮ হাজার। প্রতিটি বুথে একটি করে হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপ করা হয়েছে। বুথ পিছু প্রায় ১০০ জন মানুষের ফোন নম্বর সংগ্রহ করে তাঁদের গ্রুপে যুক্ত করা হয়েছে। বুথস্তরে গ্রুপগুলি পরিচালনা করার জন্য দলের তরফে একজন দায়িত্বপ্রাপ্ত থাকছেন। আমাদের লক্ষ্য, বুথভিত্তিক হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপগুলির মাধ্যমে আমরা নিজেদের কথা, রাজনৈতিক প্রচার দ্রুত প্রায় ৮০ হাজার মানুষের কাছে পৌঁছে দিতে পারব। তবে আমাদের টার্গেট সংখ্যাটা ১ লক্ষ করা।’’ বিজেপি বরাবরই সোশ্যাল মিডিয়ায় প্রচারে জোর দিয়ে থাকে।

বিজেপি সূত্রে জানানো হয়েছে, বুথ, মণ্ডল, শক্তিকেন্দ্র, বিধানসভা, লোকসভা এলাকায় আলাদা আলাদা হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপ আছে দলের। তার মাধ্যমে চলছে প্রচার। বিজেপির বনগাঁ সাংগঠনিক জেলার সভাপতি মনস্পতি দেব বলেন, ‘‘সোশ্যাল মিডিয়া, বিশেষ করে হোয়াটসঅ্যাপ ফেসবুক, টুইটারে প্রচারে জোর দেওয়া হয়েছে। টুইটার পরিচালনার জন্য কর্মীদের প্রশিক্ষণ দেওয়া হচ্ছে।’’ বিজেপি নেতৃত্ব মনে করছেন, এ রাজ্যে গত লোকসভা ভোটে জেলায় ভাল ফল করার পিছনে সোশ্যাল মিডিয়ায় প্রচার গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নিয়েছিল। বিজেপির আইটি সেল যথেষ্ট শক্তিশালী। রীতিমতো মাস মাইনে দিয়ে সেখানে কর্মীদের কাজ করানো হচ্ছে। হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপে দলের নেতা-কর্মীরা ছাড়াও এলাকার বিশিষ্ট মানুষজনকে যুক্ত করা হচ্ছে। গ্রুপের মাধ্যমে কেন্দ্রের উন্নয়নমূলক কাজ, প্রধানমন্ত্রীর ভাষণ, দলীয় কর্মসূচি, দলের বক্তব্য খুব সহজেই ঘরে বসে সাধারণ মানুষের কাছে পৌঁছে যাচ্ছে। বিজেপির বারাসত সাংগঠনিক জেলার সভাপতি শঙ্কর চট্টোপাধ্যায় বলেন, ‘‘কেন্দ্রের উন্নয়ন ও এ রাজ্যে শাসক দলের ব্যর্থতা ভোটের প্রচারে তুলে ধরতে মিটিং-মিছিল-পথসভা-জনসভার উপরে নির্ভর করতে হয়। এ বার তা খুব বেশি করা যাবে না। তাই সোশ্যাল মিডিয়ায় প্রচারে জোর দেওয়া হয়েছে। তা ছাড়া, মানুষ এখন সোশ্যাল মিডিয়া-নির্ভর। বইমেলায় গিয়ে তাঁরা বই না দেখে ফেসবুক, হোয়াটসঅ্যাপে ব্যস্ত থাকেন।’’

Advertisement

পিছিয়ে নেই শাসক তৃণমূলও। তারা বাছাই করা কর্মীদের দিয়ে সোশ্যাল মিডিয়ায় প্রচারে নেমে পড়েছে। নিজেদের কথা বলার পাশাপাশি বিরোধীদের পোস্টের পাল্টা আক্রমণ করছে। জেলা তৃণমূল সভাপতি জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক বলেন, ‘‘জেলার প্রতিটি বাড়ি থেকে একজন অভিভাবকের ফোন নম্বর সংগ্রহ করে বিধানসভা ভিত্তিক হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপ করা হচ্ছে। এর মাধ্যমে বিরোধীদের অপপ্রচার, কুৎসার জবাব দেওয়া হচ্ছে।’’

জেলা কংগ্রেসের পক্ষ থেকেও ভোট প্রচারের জন্য আইটি সেল খোলা হয়েছে। দলের জেলা সভাপতি (গ্রামীণ) অমিত মজুমদার বলেন, ‘‘ইতিমধ্যেই আমরা আইটি সেল খুলেছি। হোয়াটসঅ্যাপ, ফেসবুক, টুইটারের মাধ্যমে আমাদের বক্তব্য, মিটিং-মিছিল প্রচার করছি। আমরা কী চাইছি, তা সোশ্যাল মিডিয়ায় মাধ্যমে মানুষের কাছে পৌঁছে দিচ্ছি। একজনকে ইনচার্জ করা হয়েছে। তিনিই গোটা বিষয়টি পরিচালনা করছেন।’’ দলের নেতা-কর্মীরাও নিজেদের মতো করে সোশ্যাল মিডিয়ায় ভোটের প্রচার করছেন বলে জানান অমিত। ছবি: নির্মাল্য প্রামাণিক

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন