পাথরপ্রতিমায় জৈবচাষে পথ দেখাচ্ছেন মহিলারা

গোবর সার দিয়ে কিছুটা জমিতে বেগুন আর ওলকপি চাষ করেছিলেন দিগম্বরপুর পঞ্চায়েতের পশ্চিম শ্রীধরপুরের মহিলা চাষি রূপালি মণ্ডল। ভাল ফলন হয়েছে। আনাজের স্বাদও হাইব্রিডের থেকে ভাল।

Advertisement

শান্তশ্রী মজুমদার

পাথরপ্রতিমা শেষ আপডেট: ১৭ এপ্রিল ২০১৭ ০১:৫৭
Share:

আবাদ: চলছে চাষ। নিজস্ব চিত্র

গোবর সার দিয়ে কিছুটা জমিতে বেগুন আর ওলকপি চাষ করেছিলেন দিগম্বরপুর পঞ্চায়েতের পশ্চিম শ্রীধরপুরের মহিলা চাষি রূপালি মণ্ডল। ভাল ফলন হয়েছে। আনাজের স্বাদও হাইব্রিডের থেকে ভাল। ওই পঞ্চায়েতের বিভিন্ন গ্রামে এখন মহিলাদের দিয়ে জৈব চাষ সাফল্য পাচ্ছে। নির্ভেজাল সেই আনাজ স্কুলের বাচ্চাদের মিড ডে মিলের পাতেও পড়ছে।

Advertisement

কাকদ্বীপ মহকুমার অনেক চাষিই জৈব চাষ নিয়ে পরীক্ষা নিরীক্ষা চালাচ্ছেন। কিন্তু সংগঠিত ভাবে জৈব চাষে অনেক দূর এগিয়েছেন পাথরপ্রতিমার দিগম্বরপুরের মহিলা চাষিরা। মরসুমি আনাজের প্রায় অনেকগুলিই এখন জৈব সার দিয়ে চাষ করে লাভের মুখ দেখছেন তাঁরা। উৎপন্ন ফসল বিপণনের ব্যবস্থা করে দিচ্ছে পঞ্চায়েত। আদা, টমেটো, বেগুন, শশা থেকে শুরু করে নানা রকম আনাজ চাষ এখন এলাকার গ্রামে গ্রামে মহিলাদের হাত ধরেই হচ্ছে, তা-ও আবার জৈবসার ব্যবহার করে।

ওই পঞ্চায়েতের প্রধান রবীন্দ্রনাথ বেরা বলেন, ‘‘জৈব চাষে খরচ সাধারণ চাষের প্রায় সমান। উৎপাদন একটু কম হলেও সতেজ, স্বাস্থ্যকর। তাই মহিলাদের উৎসাহ দেখে তাঁদের উৎপাদিত আনাজ এলাকার ৩৬টি স্কুলের মিড ডে মিলের জন্য একটু বেশি দরে কেনার ব্যবস্থা করেছি। নির্ভেজাল আনাজ এবং খাবার পাচ্ছে বিভিন্ন স্কুলের বাচ্চারা।’’

Advertisement

কয়েক বছর আগে জৈব চাষের জন্য তৈরি হয়েছিল দিগম্বরপুর সারদা সঙ্ঘ। এলাকার বিভিন্ন গ্রামের মহিলাদের সমবায় সমিতিগুলির যৌথ মঞ্চ এটি। ১৯ জন মহিলাকে জৈব চাষ, জৈব কীটনাশক, সার তৈরিতে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছিল। তারপর থেকে এই পদ্ধতি জনপ্রিয় হয়েছে ঘরে ঘরে।

পশ্চিম শ্রীধরপুর, গুরুদাসপুর, রামনগরআবাদ, পার্বতীপুর, মহেন্দ্রপুর এলাকার চাষিরা এখন জৈব সারেই আনাজ ফলাচ্ছেন। সঙ্ঘের প্রধান বিজলি প্রামাণিক জানালেন, এখন তাঁরাও বিভিন্ন এলাকার বিশেষ করে মহিলাদের এই জৈব পদ্ধতির সার এবং কীটনাশক তৈরির পদ্ধতি শেখাচ্ছেন। জৈব চাষে উৎসাহ দিচ্ছেন মহিলাদের।

দিগম্বরপুর গ্রামে আরও এক দম্পতি ইন্দিরা এবং নবকুমার পাড়ুইরা ওলকপি, আদা, কাঁচালঙ্কা এবং মুগডালের চাষ করেছিলেন। জানালেন, বিভিন্ন মরসুমে বিভিন্ন ফসলের জন্য জৈব সার তৈরি ও প্রয়োগের আলাদা পদ্ধতি নিয়েছেন। অ্যাজোলা, গোবর, গাছের পাতা দিয়ে তৈরি করা হচ্ছে সার। পোকা তাড়ানোর জন্য আগে যেখানে রাসায়নিক কীটনাশক ব্যবহার করতেন, সেখানে এখন জল, কেরোসিন আর একটি ওষুধ দিয়েই কাজ হয়ে যাচ্ছে। খেতের মাঝখানে একটি পাত্রের সঙ্গে লাগানো স্টিকে ফেরামন ট্যাবলেট গুঁজে দিলে যাবতীয় পোকা এসে ওই পাত্রে রাখা কেরোসিন মেশানো জলে পড়ে মারা যায়।

কেন্দ্রীয় সরকার অনুমোদিত অন্ধ্রপ্রদেশের একটি সংস্থা দিগম্বরপুরের ওই চাষিদের কারিগরি সহায়তা দিচ্ছে। জেলা প্রশাসন থেকেই তাদের পাঠানো হয়েছিল। দলের প্রধান তেনকুন্ডা চ্যারি বলেন, ‘‘কোম্পানির তৈরি কীটনাশক এবং রাসায়নিক সার ব্যবহার করে মাটির উর্বরতা অনেকটাই নষ্ট হয়েছে। এখন পর পর কয়েক বছর জৈব চাষ করলে মাটির উর্বরতা আবার ফিরে আসবে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন