‘বোঝা’ মাকে স্টেশনে ফেলে পালাল ছেলে

এমন সব ঘটনায় উদ্বিগ্ন প্রশাসনও। ডায়মন্ড হারবারের মহকুমাশাসক শান্তনু বসু বলেন, ‘‘এমন ঘটনা যে ঘটতে পারে তা বিশ্বাসই করা যায় না।

Advertisement

দিলীপ নস্কর

ডায়মন্ড হারবার শেষ আপডেট: ২০ নভেম্বর ২০১৭ ০২:০৪
Share:

অসহায়: মেনকা মণ্ডল।

যথাসর্বস্ব লিখে দিয়েছেন ছেলের নামে। এখন ছেলের সংসারে তিনি হয়ে উঠেছেন ‘বোঝা’। ৮০ বছরের সেই বৃদ্ধা মাকে রবিবার ভোরে ডায়মন্ড হারবার স্টেশনে রেখে চম্পট দেয় ছেলে ও বৌমা।পরে পুলিশ অবশ্য বৃদ্ধাকে বাড়ি পৌঁছে দেন।

Advertisement

দিন দু’য়েক আগে ব্যারাকপুর শিল্পাঞ্চলের গাড়ুলিয়ার রবীন্দ্রপল্লিতে বৃদ্ধ বাবাকে ঘরবন্দি করে বেড়াতে গিয়েছিলেন ছেলে। রবীন্দ্রনাথ রায় নামে ওই বৃদ্ধর সঙ্গে সংসারে টাকা দেওয়ার পরিমাণ বাড়ানো নিয়ে ছেলের প্রায়ই অশান্তি হত। অসুস্থ রবীন্দ্রনাথবাবু মানসিক নির্যাতন সহ্য করেও ছেলে-বৌমার সংসারেই থাকছিলেন।

এমন সব ঘটনায় উদ্বিগ্ন প্রশাসনও। ডায়মন্ড হারবারের মহকুমাশাসক শান্তনু বসু বলেন, ‘‘এমন ঘটনা যে ঘটতে পারে তা বিশ্বাসই করা যায় না। এটা অমানবিক। এমন অশান্তিতে পড়লে বৃদ্ধ-বৃদ্ধারা আমাদের কাছে আসতে পারেন। আইনি পরামর্শের মাধ্যমে আমরা সুরাহা করার চেষ্টা করব।’’

Advertisement

কী ঘটেছিল এ দিন?

রেল পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, ডায়মন্ড হারবারের ১০ নম্বর ওয়ার্ড মাধবপুরের বাসিন্দা মেনকা মণ্ডল। বহু বছর আগে স্বামী মারা গিয়েছেন। বড় ছেলে জগদীশ আনাজ বিক্রেতা। তাঁর কাছেই থাকতেন মেনকাদেবী। বছর আশির ওই বৃদ্ধা বয়সজনিত রোগে ভুগছিলেন।

পুলিশ জানিয়েছে, বছর সাতচল্লিশের ছেলে জগদীশ ও বউমা যমুনাদেবী রবিবার সকালে মেনকাদেবীকে ভ্যানে তোলেন। তাঁকে ডায়মন্ড হারবার ১ নম্বর প্ল্যাটফর্মের কাছে কোলে করে নামান। এরপরই ফেলে রেখে পালান তাঁরা। ভোরের আলো তখনও ঠিকমত ফোটেনি। শীতের ভোরে ওই বৃদ্ধাকে প্ল্যাটফর্মে পড়ে থাকতে দেখেন স্থানীয় রামপদ দলুই, বিমান মণ্ডলেরা। তাঁরাই জিআরপিকে খবর দেন। তাঁদের কথায়, ‘‘সকালে শীতে এক বৃদ্ধাকে এমন ভাবে স্টেশনে কাঁপতে দেখে সন্দেহ হয়েছিল। তড়িঘড়ি রেল পুলিশে খবর দিই।’’

রেল পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, জিআরপি এসে ওই বৃদ্ধাকে জিজ্ঞাসাবাদ করে। কিন্তু তাঁর কথা জড়িয়ে যাচ্ছিল। বাড়ির ঠিকানা জিজ্ঞাসা করাতে তিনি লালবাটি গ্রামের কথা বলেন। সেখানে নিয়ে গেলে রেল পুলিশ জানতে পারে যে তাঁর বাড়ি মাধবপুর গ্রামে। স্থানীয় বাসিন্দারাই ওই বৃদ্ধার বাড়ির ঠিকানা বলে দেন। ওই বৃদ্ধাকে বাড়ি দিয়ে আসে পুলিশ।

হঠাৎ পুলিশের গাড়ি দেখে প্রতিবেশীরাও বেরিয়ে আসেন সকলে। ঘটনার কথা জানাজানি হয়। চোখ ভর্তি জল নিয়ে সবার সামনে ভাঙা গলায় মেনকাদেবী বলেন, ‘‘আমার সমস্ত সম্পত্তি অনেক আগেই ছেলের নামে লিখে দিয়েছি। এখন ছেলের কাছে থাকা ছাড়া কোথাও আশ্রয় নেই। অপমান সহ্য করেই এখানে থাকতে হবে।’’

জগদীশ পুলিশকে জানিয়েছেন, অভাবের সংসার। তাই স্টেশনে রেখে এসেছিলেন মাকে। ভেবেছিলেন কেউ মাকে ট্রেনে তুলে দেবেন। মা পৌঁছবেন অন্য কোনও ঠিকানায়। তাঁর দায় কমবে।

রেল পুলিশ জানিয়েছে, ছেলেকে বোঝানো হয়েছে এ ভাবে মাকে দূরে সরিয়ে দেওয়া যায় না। কাছে রেখে তাঁর সেবা করতে হয়। ভুল বুঝতে পেরে ছেলে এখন লজ্জিত। ভবিষ্যতে এমন আর করবে না বলে জানান জগদীশ।

তবে ঘরের এককোণে শুয়ে মেনকাদেবীর প্রশ্ন, ‘‘আমি তবে ছেলের কাছে এখন বোঝা হয়ে গেলাম।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন