মারণরোগ নিয়েও উচ্চ মাধ্যমিকে প্রতিবন্ধী যুবক

সম্প্রতি তার ক্যানসারও ধরা পড়েছে! কিন্তু মনের জোরে সব প্রতিবন্ধকতার সঙ্গে লড়াই করেই সে আজ উচ্চমাধ্যমিকে বসেছে। তার স্কুলের শিক্ষক-শিক্ষিকারাও তার এই দৃঢ়চেতা মানসিকতার তারিফ করেন।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

ক্যানিং শেষ আপডেট: ৩০ মার্চ ২০১৮ ০১:০৮
Share:

মনোযোগী: পরীক্ষার হলে পার্থপ্রতিম। ছবি: সামসুল হুদা

আর পাঁচটা ছেলেমেয়ের মতো স্বাভাবিক ভাবে হাঁটা-চলা করতে বা কথা বলতে পারে না সে। জন্ম থেকেই সে প্রতিবন্ধী। বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে অন্যান্য অঙ্গ-প্রত্যঙ্গও বিকল হতে থাকে তার। সম্প্রতি তার ক্যানসারও ধরা পড়েছে! কিন্তু মনের জোরে সব প্রতিবন্ধকতার সঙ্গে লড়াই করেই সে আজ উচ্চমাধ্যমিকে বসেছে। তার স্কুলের শিক্ষক-শিক্ষিকারাও তার এই দৃঢ়চেতা মানসিকতার তারিফ করেন।

Advertisement

ক্যানিংয়ের মালিরধারের বাসিন্দা পার্থপ্রতিম বেরা সেন্ট গ্যাব্রিয়্যাল হাইস্কুলের ছাত্র। তার সিট পড়েছে ক্যানিংয়েরই ট্যাংরাখালি পরশুরাম যামিনীপ্রাণ হাইস্কুলে। ৪৬ শতাংশ নম্বর পেয়ে মাধ্যমিকে জেলায় প্রতিবন্ধীদের মধ্যে দ্বিতীয় হয়েছিল বলে সে পুরস্কৃতও হয়েছিল।

এ দিন পার্থ তার বাবা ত্রিদিব বেরা ও মা ববিতা বেরার সঙ্গে ইংরেজি পরীক্ষা দিতে আসে। প্রথম দিন বাংলা পরীক্ষা ভাল হয়েছে বলেই জানায় সে। পার্থের মা ববিতা বলেন, ‘‘এদের মতো পরীক্ষার্থীদের সাধারণত কিছু অতিরিক্ত সময় দেওয়া হয়। বাংলা পরীক্ষার দিন অবশ্য শিক্ষকরা ওকে অতিরিক্ত সময় দেননি। আর একটু সময় পেলে ও লিখতে পারত। পরে আমরা বললে ওঁরা ওকে সময় দিতে চান। যদিও তখন ও আর লিখতে চায়নি।’’ অবশ্য ট্যাংরাখালি পরশুরাম যামিনীপ্রাণ হাইস্কুল কর্তৃপক্ষ এই অভিযোগ মানতে চাননি। তাঁরা জানান, এ ধরনের পরীক্ষার্থীদের জন্য তাঁরা সব সময় আলাদা যত্ন নেন। ওদের আলাদা গুরুত্ব দিয়েও দেখা হয়।

Advertisement

পার্থর বোনও এ বার উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষা দিচ্ছে। পার্থর মা খুব অসুস্থ। ইতিমধ্যে তাঁর একবার ওপেন হার্ট সার্জারি হয়েছে। পার্থর বাবার ফুলের নার্সারির ছোটখাটো ব্যবসা। পার্থের বাবা বলেন, ‘‘আমার ছেলে অন্যান্য ছেলেমেয়ের মতোই স্বাভাবিক আচরণ করে। বাড়ির সবার প্রতি ওর নজর থাকে। আমি বাড়ি ফিরতে দেরি করলে ফোন করে আমার খবর নেয়। ওর খুব মনের জোর। আর সব কিছুতেই দারুণ কৌতূহল। ও গাছপালা, পশুপাখি খুব ভালবাসে। অবাক দৃষ্টিতে গাছের দিকে থাকিয়ে থাকে।’’ ত্রিদিববাবু আরও জানান, পার্থ চায় উদ্ভিদবিদ্যা নিয়ে পড়াশোনা করে গবেষণা করতে। কিন্তু মাটির একচিলতে ঘরে বাস করা তাঁর মতো গরিব মানুষ কী করে ছেলের স্বপ্ন পূরণ করবে, ভেবে তিনি চিন্তাগ্রস্ত। ছেলে ও স্ত্রীর ওষুধের টাকা জোগাড় করতেই হিমসিম খান তিনি। কোনও রকমে সংসার চালান।

প্রতিবন্ধী হওয়ায় পার্থ অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত বছরে দেড় হাজার টাকা করে পেয়েছে। এখন আর সেই টাকা সে পায় না। সম্প্রতি তার কুঁচকির কাছে ফুলে যায়। চিকিৎসকের পরামর্শ মতো বিভিন্ন পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে ওর ক্যানসার ধরা পড়ে। ওর পরিবারের সদস্যরা লোকজন ধরে কালীঘাটে মুখ্যমন্ত্রীর বাড়ি গিয়েছিলেন। মুখ্যমন্ত্রীর সহায়তায় ক্যানসারের একটি পরীক্ষা, যাতে ১৮ হাজার টাকা লাগে, তা বিনামূল্যে করাতে পারেন তাঁরা।

বর্তমানে ৮৫ শতাংশ প্রতিবন্ধী পার্থ বলে, ‘‘গাছপালা নিয়ে গবেষণা করতে চাই। বড় হয়ে বাবা-মায়ের কষ্ট লাঘব করব।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন