হেলমেট ধার করেও মিলছে না রেহাই

যে যা-ই বলুক, মাথায় হেলমেট চাপাতে ভয়ানক আপত্তি এখনও অনেকের। কিন্তু হেলমেট না চাপালে তেল মিলবে না পেট্রোল পাম্পে। তাই নানা ফন্দি-ফিকির খুঁজে নিচ্ছে বাইক আরোহীরা। কখনও অন্যের হেলমেট ধার করে তেল নিচ্ছে।

Advertisement

সীমান্ত মৈত্র

হাবরা শেষ আপডেট: ১৮ জুলাই ২০১৬ ০১:৪২
Share:

কড়া নজর। —নিজস্ব চিত্র।

যে যা-ই বলুক, মাথায় হেলমেট চাপাতে ভয়ানক আপত্তি এখনও অনেকের। কিন্তু হেলমেট না চাপালে তেল মিলবে না পেট্রোল পাম্পে। তাই নানা ফন্দি-ফিকির খুঁজে নিচ্ছে বাইক আরোহীরা। কখনও অন্যের হেলমেট ধার করে তেল নিচ্ছে। কখনও আবার পাম্পে ঢোকার সময়টুকু মাথায় হেলমেট রাখলেও তেল নিয়ে গাড়ি স্টার্ট করতে না করতেই হেলমেট খুলে শোভা পাচ্ছে হাতে।

Advertisement

কিন্তু হাবরায় পুলিশও ছাড়ার পাত্র নয়। এই সব চালবাজি ঠেকাতে সরাসরি পাম্পে নজরদারি শুরু করেছে তারা।

বৃহস্পতিবার বিকেল তখন ৪টে। হাবরা থানার কাছেই যশোর রোডের পাশে একটি পেট্রোল পাম্পে ঢুকলেন স্থানীয় খড়ের মাঠ এলাকার বাসিন্দা সন্দীপ কর্মকার। সঙ্গে বাইক। কিন্তু মাথায় হেলমেট নেই। পাম্পের কর্মচারী তেল দিতে রাজি হলেন না। খানিক ইতস্তত করে সন্দীপ এ দিক ও দিক চাইছেন। ইতিমধ্যে হেলমেট মাথায় সেখানে হাজির হলেন আর এক বাইক আরোহী। তাঁর মাথায় হেলমেট। সন্দীপ তাঁর থেকে হেলমেট ধার নিয়ে তেল ভরার লাইনে দাঁড়ালেন। এ বার আর কোনও আপত্তি নেই পাম্প কর্মীর।

Advertisement

গোটা ঘটনাটা দূর থেকে দাঁড়িয়ে দেখছিলেন হাবরা থানার আইসি মৈনাক বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনি পাম্পে ঢুকে কর্মচারীদের ধমক দিলেন। সন্দীপের বিরুদ্ধে আইন অনুযায়ী পদক্ষেপ করা হল।

মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশের পরে হাবরা এলাকার প্রতিটি পেট্রোল পাম্প মালিককে চিঠি দিয়ে জানিয়ে দেওয়া হয়েছে, হেলমেট ছাড়া কেউ তেল নিতে আসলে তাঁকে যেন তেল দেওয়া না হয়। কিন্তু বাইক চালকেরা নানা ফন্দি ফিকির শুরু করেছেন। পুলিশ পক্ষ তাই শুক্রবার থেকে থানা এলাকার প্রতিটি পাম্পে পুলিশ অফিসার মোতায়েন রাখার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। তাঁরা পাম্পের মধ্যেই থাকবেন। কেউ হেলমেট ছাড়া তেল নিতে এলেই পদক্ষেপ করার কাজও শুরু হয়েছে।

হাবরা থানা সূত্রে জানা গিয়েছে, ১-১৪ জুলাই পর্যন্ত ২২৭টি বাইকের বিরুদ্ধে ‘কমপাউন্ড স্লিপ’ কাটা হয়েছে। জরিমানা করা হয়েছে প্রায় ৪৫ হাজার টাকা।

শহর এলাকায় তবু কড়াকড়িটুকু আছে। কিন্তু গ্রামীণ এলাকায় পুলিশের নজরদারি ঢিলেঢালা বলে জানাচ্ছেন স্থানীয় মানুজন। সেখানে হেলমেটহীন বাইক চালকেরা হু হু করে গাড়ি নিয়ে ছুটছেন। আর না হলে দেখা যাচ্ছে, হেলমেট ঝোলানো বাইকের পিছনে বা চালকের হাতে।

শুক্রবার শহর ও সংলগ্ন এলাকায় গিয়ে দেখা গেল, একই বাইকে সওয়ার তিনজন। চালকের মাথায় হেলমেট থাকলেও বাকিদের মাথা খালি। এলাকার মানুষের অভিযোগ, রাতে পানশালা থেকে মদ খেয়ে বেরিয়ে যুবকেরা বেপরোয়া ভাবে বাইক চালিয়ে যাতায়াত করে। বেশির ভাগের মাথায় হেলমেট থাকে না। বাসিন্দারা জানালেন, হাবরা শহরে এলে বাইক চালকেরা এখন হেলমেট নিয়েই আসছেন। কিন্তু ফেরার পথে তা খুলে ফেলছেন।

হাবরা থানা এলাকায় পেট্রোল পাম্প রয়েছে ৯টি। তার মধ্যে ৬টি পাম্পে সিসি ক্যামেরা আছে। বাকিগুলোতে শীঘ্রই ক্যামেরা বসানোর জন্য পুলিশের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে। ওই ক্যামেরার ফুটেজ দেখে পুলিশ হেলমেটহীন বাইক চালকদের শনাক্ত করছে।

অশোকনগর থানা এলাকার ছবিটাও একই রকম। গ্রামীণ এলাকায় হেলমেট ছাড়াই বাইক চলছে। কিন্তু শহর এলেই তারা হেলমেট পরে নিচ্ছেন। এখনও পর্যন্ত ২৭টি বাইকের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করা হয়েছে। এখানে পাম্পের সংখ্যা ২টি। সিভিক ভলান্টিয়ারদের পাম্পের উপরে নজর রাখতে বলা হয়েছে। কেউ হেলমেট ছাড়া বাইক নিয়ে তেল চাইলেই তারা গিয়ে ধরছে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন