শিক্ষকদের ভূমিকায় ভরসা পাচ্ছেন অভিভাবক

গরহাজির পড়ুয়া, বাড়িতে দিদিমণি

অভয় দিলেন স্কুলের চতুর্থ শ্রেণির কর্মী কানাইলাল সর্দার। বললেন, ‘‘ভয়ের কিছু নেই। দিদিমণি আপনাদের মেয়েদের লেখাপড়া নিয়ে কথা বলতে এসেছেন।’’

Advertisement

সীমান্ত মৈত্র

গোপালনগর  শেষ আপডেট: ২২ ফেব্রুয়ারি ২০১৮ ০২:৩৭
Share:

প্রতীকী ছবি।

ভরদুপুরে বাড়ি বয়ে হাজির দিদিমণি। ঘাবড়ে গিয়েছিলেন দুখি সর্দার, তারক সর্দার, শঙ্কর সর্দারেরা। ধরে নেনে, মেয়েরা স্কুলে নির্ঘাৎ কোনও বড়সড় দুষ্টুমি করেছে।

Advertisement

অভয় দিলেন স্কুলের চতুর্থ শ্রেণির কর্মী কানাইলাল সর্দার। বললেন, ‘‘ভয়ের কিছু নেই। দিদিমণি আপনাদের মেয়েদের লেখাপড়া নিয়ে কথা বলতে এসেছেন।’’

স্কুলের রোলকলের খাতা দেখে নহাটা সারদাসুন্দরী বালিকা বিদ্যামন্দির স্কুলের প্রধান শিক্ষিকা শম্পা পাল দেখেন, বেশ কিছু ছাত্রী নিয়মিত স্কুলে আসছে না। গোপালনগর থানার দমদমা এলাকার আদিবাসী গ্রামের ওই সব পড়ুয়ার খোঁজ নিতে বাড়ি যাবেন বলে ঠিক করেন শম্পাদেবী।

Advertisement

অনেক বাড়িতে গিয়েই দিদিমণির অভিজ্ঞতা হয়েছে, বাবা-মায়েরা জানেনই না, মেয়ে নিয়মিত স্কুলে যাচ্ছে না। বাড়ির নারী-পুরুষ সকলেই কাজে বেরিয়ে যান। দুপুরের পরে ফেরেন। অনেকের মেয়ে বাবা-মাকে বলেছে, তারা স্কুলে যায়। কিন্তু বাড়ি থেকে বেরিয়ে তারা স্কুলে যাচ্ছে কিনা, সেটা আর খোঁজ নেওয়া সম্ভব হয় না বাবা-মায়েদের পক্ষে। গরিব পরিবারের অভিভাবকেরা অনেকে আবার লেখাপড়াও জানেন না। ফলে মেয়েরা যা বোঝায়, তাতেই সন্তুষ্ট থাকতে হয় তাঁদের।

স্কুল ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, স্কুলে না গিয়ে ছোট ছোট মেয়েরা অনেক সময়ে মাঠেঘাটে খেলেই সময় কাটিয়ে দিচ্ছে। নিয়মিত স্কুলে যেতে হবে, সেই উৎসাহটাই নেই। প্রধান শিক্ষিকা বলেন, ‘‘অভিভাবকদের সচেতনতার অভাব এবং পড়ুয়াদের মধ্যে স্কুলে আসার উৎসাহ না থাকাতেই এমনটা ঘটছে।’’ প্রধান শিক্ষিকা অভিভাবকদের জানিয়েছেন, তাঁরা যেন এখন থেকে প্রতি মাসে একবার করে স্কুলে এসে পড়ুয়াদের হাজিরা খাতা দেখে যান। দিন কয়েক হল অভিভাবকেরা সে কাজ শুরুও করেছেন। ক’দিন আগেই জনা চল্লিশ বাবা-মা স্কুলে এসেছিলেন। তাঁদের মধ্যে দুখি, তারক, শঙ্করবাবুরা বলেন, ‘‘এখন থেকে আমরা মেয়েদের উপরে নজর রাখব। স্কুলে না এলে জানতেই পারতাম না এই অবস্থা। দিদিমণিই আমাদের চোখ খুলে দিলেন।’’

স্কুল সূত্রে জানা গিয়েছে, প্রধান শিক্ষিকা তিরিশ জন পড়ুয়ার বাড়িতে গিয়ে তাদের নিয়মিত স্কুলে আসতে বলেছেন। তাতে কাজও হয়েছে। পঞ্চম থেকে দ্বাদশ শ্রেণির ওই ছাত্রীরা ইদানীং নিয়মিত স্কুলমুখো হয়েছে।

স্কুলে মোট পড়ুয়া দেড় হাজারেরও বেশি। শম্পাদেবী বলেন, ‘‘ওই ছাত্রীরা যাতে লেখাপড়ায় উৎসাহ পায়, সে জন্য স্কুলে তাদের নিয়ে আলাদা ভাবে পড়ানোর ব্যবস্থাও করা হয়েছে।’’

স্কুলে যেতে ভাল লাগে না বুঝি?

প্রশ্ন শুনে মাথা নিচু কয়েকজন ছাত্রীর। তারা বলে, ‘‘এখন থেকে রোজ স্কুলে যাব। মন দিয়ে লেখাপড়াও করব।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন