ইংরেজির ক্লাস করে ভাল ফল করল ছাত্রীরা

পয়লা বারেই বাজিমাত। ডায়মন্ড হারবার মহিলা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম সেমেস্টারের পরীক্ষায় বেশির ভাগ ছাত্রীই গড়ে পেয়েছেন ৫৫ শতাংশের উপরে নম্বর। সর্বোচ্চ নম্বর ছাড়িয়েছে ৭৭ শতাংশের ঘরও। এই বিশ্ববিদ্যালয়ের পড়ুয়া বেশির ভাগই প্রথম প্রজন্মের ছাত্রী। অধিকাংশই স্বল্পবিত্ত পরিবারের মেয়ে। এমন ফলে তাঁরা রীতিমতো উত্‌সাহিত। তাঁদের দাবি, এমন ফল সম্ভব হয়েছে ভাষার পাঠক্রমের জন্য।

Advertisement

শান্তশ্রী মজুমদার

ডায়মন্ড হারবার শেষ আপডেট: ২৮ মার্চ ২০১৫ ০১:৫০
Share:

পয়লা বারেই বাজিমাত। ডায়মন্ড হারবার মহিলা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম সেমেস্টারের পরীক্ষায় বেশির ভাগ ছাত্রীই গড়ে পেয়েছেন ৫৫ শতাংশের উপরে নম্বর। সর্বোচ্চ নম্বর ছাড়িয়েছে ৭৭ শতাংশের ঘরও। এই বিশ্ববিদ্যালয়ের পড়ুয়া বেশির ভাগই প্রথম প্রজন্মের ছাত্রী। অধিকাংশই স্বল্পবিত্ত পরিবারের মেয়ে। এমন ফলে তাঁরা রীতিমতো উত্‌সাহিত। তাঁদের দাবি, এমন ফল সম্ভব হয়েছে ভাষার পাঠক্রমের জন্য।

Advertisement

ছাত্রীদের কথা ভেবেই বিশ্ববিদ্যালয় চালু করেছে ভাষার সহায়ক পাঠক্রম। স্নাতকোত্তরের মূল বিষয়ের পাশাপাশি প্রথম দুটি সেমেস্টার পর্যন্ত চলবে ১০০ নম্বরের এই ভাষাশিক্ষার ক্লাস, যাতে ব্যাকরণের ভাগ অনেকটাই। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ জানাচ্ছে, ঐচ্ছিক বাংলা ও ইংরেজির মধ্যে বিশেষ করে ইংরেজিই বেছে নিয়েছে বেশির ভাগ ছাত্রী। উস্তির হিবা কাওসার পরিবারের প্রথম ইতিহাসে স্নাতকোত্তর পড়ুয়া। তাঁর কথায়, “ক্লাসে অধ্যাপকরা মাঝেমধ্যেই ইংরেজিতে লেকচার দেন, নানা রেফারেন্স উল্লেখ করেন। প্রথম প্রথম অসুবিধা হত। ল্যাঙ্গোয়েজ কোর্সের কয়েকটি ক্লাস করার পর তা সহজ হয়ে গিয়েছে। প্রশ্ন ইংরেজিতে হয়। তাও বুঝতেও অসুবিধা হয়নি।” ইতিহাসের প্রথম সেমেস্টারে ৫৮ শতাংশ নম্বর পেয়েছেন হিবা। মহিলা বিশ্ববিদ্যালয়ের নারীবিদ্যার পাঠক্রমেও ছাত্রীরা একই কথা বলছেন। বাংলামাধ্যমে পড়াশোনা করা অর্পিতা সর্বজ্ঞ, মহাশ্বেতা গায়েনরা ভাষা শিক্ষার ক্লাসে ইংরেজি বেছে নিয়ে উপলব্ধি করেছেন, স্নাতকোত্তরের মতো উচ্চশিক্ষার এই স্তরে ভাষার উপর দখল বিশেষ প্রয়োজন। তাঁদের কথায়, “নারীবিদ্যা পাঠক্রমের বেশির ভাগ স্টাডি মেটেরিয়াল ইংরেজিতে। তাই ইংরেজির একটি কোর্স থাকায় তা সহজতর হয়েছে। তা ছাড়াও প্রশ্নের উত্তর লেখার কায়দা অনেকটাই রপ্ত হয়ে যায় ভাষাশিক্ষার ক্লাসে।” ওই দুই ছাত্রীর একজন ৬৬ শতাংশ, অন্যজন ৭০ শতাংশ নম্বর পেয়েছেন।

উপাচার্য অধ্যাপক শমিতা সেন বলেন, “অধ্যাপনার অভিজ্ঞতায় দেখেছি, গ্রামবাংলার মেয়েরা শহুরে মেয়েদের তুলনায় পড়াশোনা বা বুদ্ধিতে এতটুকু পিছিয়ে না থাকলেও, মার খেয়ে যায় ভাষাজ্ঞানের জন্য। তা ছাড়াও, হিউম্যানিটিসের মতো বিষয়গুলিতে এটা জরুরি। এমনকী বাংলাতেও পোষাকী লেখা শিখতে হয়। তাই আমার মনে হয়েছিল, এ রকম একটি পাঠক্রম অত্যন্ত দরকার।”

Advertisement

বিশ্ববিদ্যালয়ের মোট ১৫০ ছাত্রীর মধ্যে বেশির ভাগই ৫৫ শতাংশের উপরে নম্বর পেয়েছেন। সাতাত্তর শতাংশ পর্যন্ত নম্বর উঠেছে বাংলা, ইংরেজি ছাড়াও ইতিহাস, শিক্ষা, নারীবিদ্যার মতো এক একটি বিষয়ে, যা সচরাচর স্নাতকোত্তরে দেখা যায় না। তুলনায় একটু পিছিয়ে রাষ্ট্রবিজ্ঞান, সেখানে সর্বোচ্চ নম্বর ৬১ শতাংশ।

গত বছর শিক্ষক দিবসের দিন থেকে ক্লাস শুরু হয়েছিল বিশ্ববিদ্যালয়ের। পরীক্ষা হয়েছে ১৬ জানুয়ারি। কর্তৃপক্ষের দাবি, কেবলমাত্র ভাষাশিক্ষা নয়, বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রায় একদিন অন্তর ছাত্রীদের বিভিন্ন পরীক্ষায় (ইন্টারনাল অ্যাসেসমেন্ট) বসতে হয়েছে। অল্প করে পড়ানো পাঠক্রমের উপর একটু করে পরীক্ষা নেওয়ার ফলে ছাত্রীদের মনোযোগ ধারাবাহিকভাবে ধরে রাখা গিয়েছে। নিরবচ্ছিন্ন এবং ধারাবাহিক মূল্যায়নের এই ধারা কেবলমাত্র নীচু ক্লাসেই অনুসরণ করা হয়।

তা ছাড়াও, অধ্যাপকদের বলে দেওয়া হয়েছিল, যাতে কোনও ভাবেই ক্লাস ফাঁকি না যায়। অর্থাত্‌ কেউ কোনও দিন গরহাজির থাকলে আগে থেকে তা জানাতে হত কর্তৃপক্ষকে। যাতে ওই ক্লাস অন্য অধ্যাপক নিতে পারেন। তাই ক্লাস হয়নি, এরকম হয়তো এক বা দু’দিন হয়েছে বলে জানাচ্ছে ছাত্রীরা।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন